নাটক – কাল্পনিক বাস্তব
প্রযোজনা – সংস্তব
নির্দেশনা – সীমা মুখোপাধ্যায়
রচনা – লোকনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
আলো – বাদল দাস
মঞ্চ – সন্দীপ সুমন ভট্টাচার্য্য
আবহ – দিশারী চক্রবর্তী
অভিনয় – কিঞ্জল নন্দ, তুলিকা দাস, এনাক্ষী সেন, সুব্রত সমাজদার, অমৃতা মুখোপাধ্যায় প্রমুখ
সময় সীমা - ২ ঘন্টা ২০ মিনিট (১০ মিনিটের বিরতি সহ)
র্যাঙ্কিং – ৭/১০
অজয় মুখচোরা, সাধাসিধে, নিরীহ গোছের ত্রিশ পার হাওয়া ব্যাচেলর এক ভাল মানুষ। না পারে লড়াই প্রতিবাদ করতে, না পারে ভালবাসার বীজ বুকের ভিতরে বপন করতে। কলকাতা কর্পোরেশনে কর্মরত। এই সাধারণ জীবনে এক অদ্ভুত পরিস্থিতির স্বীকার হয় সে। সে এখন মাঝে মাঝেই এক নারী কন্ঠ শুনতে পায়। সেই নারী যেন অজয়ের জীবনের ধারাবিবরণী শুনিয়ে যেতে থাকে। তাঁর প্রতিটা পদক্ষেপই যেন সেই নারীর জানা। ঘরে বাইরে সে এক অদ্ভুত মানসিক অস্বস্তির মধ্যে দিয়ে সে চলতে থাকে। অফিসে এই নিয়ে হাসাহাসি চলতে থাকে। মানসিক চিকিৎসক থেকে মনস্তাত্বিক অধ্যাপক দেখিয়েও সমস্যার সমাধান হয় না। অজয় বুঝতে পারে, কোন লেখিকা যেন তাঁর এই জীবন নিয়ে লিখে চলেছে।
এদিকে অফিস থেকে রাস্তার উপর বেআইনি দোকান তুলে দেওয়ার নোটিশ দেওয়ার লিস্ট ধরানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় অজয়কে। তাদের মধ্যে কুসুম নামে এক মেয়ে একটি বেকারির দোকান চালায়। কলেজ শেষ করে চালায় দোকানটি। অজয়ের মনে দোলা লাগে তাঁর জন্য। কিন্তু বলে উঠতে পারে না। একসময় সেই নারী জানিয়ে দেয়, অজয়ের মৃত্যু আসন্ন। মানসিক সমস্যা আরও বেড়ে যায় এবং আতঙ্কিত। কিন্তু তাঁকে নিয়ে যিনি লিখছেন, সেই লেখিকাকে সে চেনে না। একসময় লেখিকা কমলিকা সাহার উপন্যাসের কথা জানতে পারে সে। উপন্যাসের নায়কের সাথে মিলে যেতে থাকে অজয়ের জীবনকাহিনী। এদিকে লেখিকা এখনও বুঝে উঠতে পারেননি, কিভাবে অজয়ের মৃত্যু হবে। প্রকাশক আবার বিনতাকে পাঠিয়ে দেয় লেখিকার কাছে পান্ডুলিপির জন্য। অজয় উপলব্ধি করে তাঁর জীবন সবটাই নির্ভর করে লেখিকা কমলিকা সাহার উপর। খুঁজে খুঁজে সে বের করে ফেলে লেখিকার ঠিকানা। পৌঁছে যায় তাঁর কাছে, আকুল মিনতি রাখে তাঁর কাছে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখার। এ যেন স্রষ্টার সম্মুখে সৃষ্টি। সদ্য প্রেম তাঁর কুসুম। তবে কি মিল হবে না ? অজয়কে এ কোন ট্র্যাজেডির দিকে নিয়ে যেতে চাইছেন কমলিকা ?
যেকোন সৃষ্টির সাথে স্রষ্টার সাথে একটা লড়াই থাকে। কাল্পনিক বাস্তব এমনই এক নাটক। অজয়ের চরিত্রে কিঞ্জল নন্দ পূর্ণতা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। অভিনন্দন অবশ্যই প্রাপ্য। অজয় আর কুসুমের রসায়ন বেশ লাগে। আর এঁদের মাঝে পাগলভাইকেও বেশ মানিয়ে যায়। বিনতার চরিত্র ঠিক মানানসই নয় বলেই মনে হয়, আরও কিছুটা নম্রতা থাকা প্রয়োজন ছিল বলেই মনে হয়। কমলিকার চরিত্রে তুলিকা দাস মানিয়ে যায়। বাকিরাও ভাল। আলোর ব্যবহার ঠিকঠাক। নাটকের গিটার আর গানের ব্যবহার ভাল লাগে। মঞ্চও মানানসই। মাঝে একটু গতি স্লথ হলেও একটা বেশ ঘোরের মধ্যে রাখে দর্শককে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন