মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯

চৈতালী ভৌমিক


লোভ

তিল তিল করে জমানো মোহর গুলো নিয়ে আজ হিসাবে বসেছে কিপটে চাঁদু পাল।একটা মোহর বিক্রি করে বাড়ি বানাবেন।একটা বিক্রি করে ঘোড়ার গাড়ি আর বাগান কিনবেন।একটা বিক্রি করে মেয়ের বিয়ে দেবেন - এমনি করে লিখে রাখছিলেন।কিন্তু সব কিছু ইচ্ছা মিটে যাওয়ার পরেও তার প্রায় কয়েক ঘড়া মোহর থেকে যাবে।কি করবে কিছুই আর মাথায় আসছে না। বউ আবদার করলো, কিছু মোহর দিয়ে তাকে এবং মেয়ের গহনা বানিয়ে দিতে।তাও না হয় হলো।কিন্তু তারপর!নবাবের সাথে পরামর্শ করে একটা কালী মন্দির ও প্রতিষ্ঠা করলেন।তাও সম্পদ কমলো না তেমন।
চাঁদু পালের একটিই মেয়ে।তার মোটে ইচ্ছা নেই মেয়ের বিয়ে দিয়ে ঘরজামাই পুষে সমস্ত সম্পত্তি পরের ছেলের হাতে তুলে দেওয়া।আর তিনি হচ্ছেন মুর্শিদাবাদ এর নবাবের খাস লোক।যতদিন থাকবেন, না জানি আরো কত মোহর পাবেন।ভাবতে ভাবতে তিনি ঠিক করলেন একটি বজরা কিনবেন।তাতে বউ কে নিয়ে মাঝেমাঝে ঘুরতে বেড়াবেন।ভাবনার সাথে সাথে, কিনেও ফেললেন একটি বজরা।প্রথম প্রথম বউ মেয়ে সাথে যেতো।কিন্তু গিন্নীর বাতের ব্যাথার জন্য সেইভাবে আর বেরোতে চান না সাথে।গঙ্গার বাতাসে ব্যাথা নাকি বাড়ে।
  একদিন বজরায় হাওয়া খেতে একলাই বেড়িয়ে পড়লেন।ভাসতে ভাসতে দেখা পেলেন এক জেলে মাঝিকে।তার সাথে  নানান গল্প করতে করতে চাঁদূর মনে এক ফন্দী আসলো।বাড়ি ফেরার পর থেকে সে কেমন যেনো পালটে যেতে লাগলো।একদম আলাদা একটা মানুষ।হাড়কিপটে মানুষটা বেশ দিল খোলা হয়ে যেতে লাগলো।পাড়া,প্রতিবেশী আত্মীয় পরিজনের বাচ্চাদের থেকে যিনি দূরে থাকতেন তিনি তাদের সাথে খেলা করতে,গল্প করতে শুরু করেছেন।সময় পেলেই ওদের সাথে হইচই।ওরাও চাঁদু দাদু বলতে অজ্ঞান।বাজারে গিয়ে প্রতিবেশী, দোকানীদের সাথে গল্প আড্ডা দিতে লাগলেন।
  একদিন দাদু ঠিক করলেন বাচ্চাদের বজরায় করে ঘুরতে নিয়ে যাবেন।সবাই খুব খুশী।মোট বারো টা বাচ্চা নিয়ে তিনি রওনা হলেন। তারমধ্যে একটি নিজের দাদার ছেলের নাতি।ছেলে টি দাদুর অন্ধ ভক্ত।বজরা করে ঘুরে ফিরে এলেন নিজেদের গ্রামেই।দুপুর বেলা ছেলেদের নিয়ে জংগলে চড়ুইভাতি করে, ছেলেদের বললেন " এখন বাড়ি না ফিরে চল একটু জংগলে লুকোচুরি খেলি।" বাচ্চারা খুব খুশী।রাতে সবাই বাড়ি ফিরে গেলো খুশী মনে। চাঁদু পালের দাদার নাতিকে হঠাৎ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।চারিদিকে লোকজন ছড়িয়ে পড়লো।কিন্তু কোনো খোঁজই নেই।এদিকে আশেপাশের সকলে দেখেছে বারোটি বাচ্চাই বজরা থেকে নেমে এসেছে,চড়ুইভাতিতে লাইন দিয়ে খেতে বসেছে।তাহলে গেলো কোথায়!
     কয়েকদিন হল,চাঁদু পাল অসুস্থ।সকলে উপস্থিত।সবাই এটাই জানে নাতির হারিয়ে যাবার জন্য তিনি নিজেকে দোষী ঠাউরেছেন।তাই তিনি বিছানা নিয়েছেন।রাতে সকলে নিজ ঘরে চলে গেলে,হঠাৎ বুকের ব্যাথা অনুভুত হয়,চাঁদু পালের।গিন্নীকে ডেকে ঘড়ঘড় গলায় বলেন " জংগলের ভাঙা মন্দিরের পিছনেএএএ যকক..."
গিন্নীমা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলেন রাত ভোর হয়ে গেলো।কাউকে ডাকলেন না, ছটফট করতে করতে শান্ত হয়ে গেলো চাঁদু পালের শরীর।সকালে কান্নায় ভেঙে পড়লো সারা বাড়ি।গিন্নীমা স্তব্ধ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন