মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯

সম্বৃতা দাশরায়

#অসুর_উপাখ্যান
# সম্বৃতা দাশরায়

আকাশটা দেখেছেন ? কি দুর্দান্ত একটা ঝকঝকে লুক! দেখেই মন ভালো হয়ে যায় । সাদা তুলোর মতো মেঘেরা ভেসে যাচ্ছে । চারদিকে পুজো পুজো গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে । থিমপুজো হোক বা সাবেকি , মন্ডপ শিল্পী,  প্রতিমা শিল্পীদের ব্যস্ততা তুঙ্গে । দুগ্গা মা আর তার ছানাপোনাদের ফাইনাল টাচ-আপ চলছে। পুজো সমিতির হোমরাচোমরা কর্তাদের নাওয়া খাওয়ার সময় নেই।   কাউন্টডাউনও শুরু হয়ে গেছে ঠিক আর কতদিন বাকি । ওদিকে   মা দুগ্গা বাপের বাড়ি আসবেন বলে প্যাকিং -এ  ব্যস্ত, এদিকে  অসুরবাহিনী ঠিক এসে পৌঁছে গেছে আগেভাগেই । না না মহিষাসুরকে তো মা নিজেই ধরে আনবেন  কিন্তু তার দলবল ? এই যেমন  ধরুন হঠাৎ হঠাৎ  কালো মেঘের দল হুঙ্কার ছাড়তে ছাড়তে আসছে আর তুমুল বৃষ্টির তান্ডবে সব  লন্ডভন্ড করে পালিয়ে যাচ্ছে ।এদিকে আপনি  ঝকঝকে ফটফটে আকাশ দেখে ছাতাটি সঙ্গে না নেবার কারণে ভিজে চড়ুইপাখিটি হয়ে বাড়ি ফিরছেন আর তেড়ে গাল পাড়ছেন বৃষ্টিকে। একে কি অসুর বলব না ? তান্ডবাসুর বলাই যায় অনায়াসে ।
               তারপর ধরুন আপনি যে রাস্তায় বাড়ি ফেরেন মানে যে রাস্তায় ফিরতে সুবিধা হয়,  পুজোর মাস পড়তে না পড়তেই সেখানে বাঁশেরা হাজির ! আহা অন্যভাবে নেবেন না , বলতে চাইছি যাতায়াতের রাস্তাটি বন্ধ করে প্যান্ডেল বাঁধা হচ্ছে তাই আপনাকে ঘুরপথে  ঘুরপাক খেয়ে আপিস যেতে এবং বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে । এই পজ্জন্ত শুনে অনেকেই বলবেন আহা তা পুজোর জন্য এট্টুক কষ্ট তো করতেই হবে কিন্তু যদি আপনাকে জিগ্যেস করা হয় দেঁতো হাসি হাসলেও আপনি যে  এই সমস্ত বংশদন্ডদের  বংশাসুর ভাবেন এ আমি হলফ করে বলতে পারি। তাপ্পর আরেকটি ভয়াবহ অসুর হচ্ছে গিয়ে পুজো শপিং ,যার ফলে গিন্নির শাড়ি, খোকাখুকুর জামা ফ্রক, তদুপরি মাসি মেসো কাকা জ্যাঠা কাকিমা পিসিমা সবার পুজোর গিফ্ট কিনতে গিয়ে আপনার তো নাভিশ্বাস ওঠে বচ্ছর বচ্ছর।আজ্ঞে হ্যাঁ মশাইরা, এখনও বাঙালি বাড়িতে  দেওয়া থোওয়ার রেওয়াজ বহাল তবিয়তে বিরাজমান। প্রতিবার বাজেটে কাটছাঁট করার কথা ভাবেন আর হিসেব কষেন ,তারপরও কোন ম্যাজিকে যে  মগডালে খরচের খাতাটাএক লম্ফে উঠে পড়ে আপনি কিছুতেই ভেবে পান না। এই অসুরের নাম কি দেওয়া যায় সে আপনারাই ভেবে দেখুন।
আরও ছোটবড় অসুর আশেপাশে ঘুরে বেড়ায় এইসময় বুঝলেন। তা এরকম নানাবিধ অসুরের মধ্যে সবথেকে বিচ্ছিরি অসুর কোনটা বলুন তো ?  বলতে পারলেন না তো? জানতাম পারবেন না । যান একবার গিন্নিকে গিয়ে শুধোলেই বুঝবেন সে অসুরের নাম হাফ-ইয়ার্লি পরীক্ষাসুর !! এর  জ্বালা সবথেকে বেশি বোঝেন আপনার বেটার -হাফ ।  কারণ তাকেই ফুল রেস্পন্সিবিলিটি ঘাড়ে নিতে হয় কিনা। মহিলাকুল ঘরের চাকরি বা পরের চাকরি যাই করুন না কেন , এই অসুরের হাত থেকে তাদের নিস্তার নেই।  আহা গো, বেশ ছিল পাতি খুকুর দল , ছোটবেলায়  কালী পুজোর পর স্কুল খুললে হাফ-ইয়ার্লি পরীক্ষা দিত।দূর্গা পুজোর আগে নাচতে নাচতে মার্কেটিং  (তখন শপিং বলত না কেউ এবং কেনাকাটার পর মোগলাই, কবিরাজী মাস্ট  ) , নৃত্যনাট্যের রিহার্সাল (পাতি খোকাদেরও ছিল নাটক ), ফুচকা চুরমুরে পুজো আসার আনন্দ কাকে বলে তারাই বুঝেছিল আর এখন ? সন্ধি সমাস , পানিপথের যুদ্ধ,  এনার্জি ,অ্যালার্জি উফফফ ! দয়াও হয় না ইশকুলগুলোর একটু। সারাটা মাস পরীক্ষাসুরের মোকাবিলা করতে করতে  কত ঢাকাই,বমকাই, গাদোয়াল, ঘিচা হাত ফসকে গেল  । ডিজাইনার কুর্তি, মানানসই কানের দুল , গলার ফুল,  সব একে একে সেইসব সৌভাগ্যবতীদের ব্যাগজাত হয়ে চলেছে যারা কিনা ছেলেপুলেগুলোকে কলেজে পুরে দিয়েছে নাইলে আপিসে । জানালা দিয়ে প্রতিদিন তাদের যাওয়া আর নানান সাইজের পোঁটলা নিয়ে ফেরা (বিধ্বস্ত অথচ স্বর্গীয় হাসি মুখে ) দেখেই বোঝা যায় কত  সরেস জিনিসপত্তর ঐ ঝোলার ভিতরে ! এ দুঃখু রাখি কোথায় বলেন তো।
  জানি জানি অতীতের পাতি খোকাদেরও এসব মনে হয় । কারণ কিছুটা হলেও এ অসুরকে সামাল দিতে তাদেরও ফিল্ডে নামতে হয় বৈকি । ভিড়েঠাসা মেট্রো বা বাদুড়ঝোলা মিনি , গলদঘর্ম হয়ে নীড়ে সব পাখিকেই ফিরতে হয় । তেমন তাবড় তাবড় সাবজেক্ট যদি পরদিনই আসন পাতেন তবে কোনও কোনও গিন্নি ঠিক কর্তাকে ভজিয়ে ভাজিয়ে কাজে লাগিয়ে দেবেন। প্রশ্নোত্তরের জটে ধরে যাওয়া মাথা ছাড়াতে টুক করে ঘুরে আসবেন ফেসবুকে। গিয়ে যখন দেখবেন কাশফুলের মাঝমধ্যিখানে পরীক্ষা সমাপ্তির আনন্দে মশগুল মা , শপিং করার ফাঁকে আড্ডা মারা  , ফিস্টি করা বন্ধুবর্গকে   তখন তার মনের অবস্থাটা ভেবে দেখেছেন কখনও? যাগ্গে যাক্ , ভেবে আর কি হবে। এ দুষ্টু অসুরগুলো আসবে যাবে , অস্তর শস্তর নিয়ে যুদ্ধুও করতে হবে।
 ভালো থাকবেন সকলে , আজ আকাশ ঝলমল করছে , যান বেরিয়ে পড়ুন । কাশফুলের বনে হারান অথবা শপিং মলের ভিড়ে।। পুজো ভালো কাটুক সক্কলের ।।💖💞

                           

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন