মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯

দেবাশিস মুখোপাধ্যায়

#বুধবারের_প্রবন্ধ_বিষয়_দেশভাগ

খণ্ডিত দেশ- কাদের জন্য?


নাড়ি ছেঁড়ার তীব্র যন্ত্রণা, ছুঁয়ে যায় জন্মান্তর,
ভাবী প্রজন্মে ঘনায় ছায়া, না চাওয়া জন্মদাগ।
দীর্ঘ্যশ্বাস আর চোখের জলে স্বাদ নোনতা রক্তের
কে চায় খন্ডিত দেশ? কাদের জন্য এই দেশভাগ?

বিষয়টাই এমন যে বের করে আনলো বহুদিন ভেতরে জমে থাকা, কবিতার কয়েকটি লাইন। দেশভাগটা আসলে কি? সেটাই আজ আলোচনার বিষয়। একটা এমন বিতর্কিত বিষয়, যা নিয়ে হাজার ঘণ্টা ডিবেট করা যায়, যায় নাট্যমঞ্চে দাঁড়িয়ে দর্শকের চোখে বন্যা নিয়ে আসা, বা রাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে আব্রাহাম লিঙ্কনের দৃপ্ত কন্ঠে ঘোষণা করা “that these dead shall not have died in vain — that this nation, under God, shall have a new birth of freedom — and that government of the people, by the people, for the people, shall not perish from the earth.” Gettysburg’ 19th Nov’1863.

পিছিয়ে যাওয়া দরকার, অনেক অনেকগুলো বছর, একদুটো নয় প্রায় ৩০/৪০ লক্ষ বছর আগে যখন আফ্রিকা মহাদেশে অস্ট্রালোপিথেকাসরা বাস করত, দুপায়ে ভর দিয়ে হাঁটত তারা। আরো বেশকিছু পরে উদ্ভব হয় হোমো হাবিলিসদের। এরা প্রকৃত অর্থে মানবই ছিল, গাছের ডাল, পাথর দিয়ে বানাতো অস্ত্র, শিকার করত। তারও দশ লক্ষ বছর পরে মানে ১৫ লক্ষ বছর আগে আসে হোমো ইরেক্টাস। এইবার শুরু হয় তাদের এগিয়ে চলার পালা। অনেক উন্নত অস্ত্রের ব্যবহার, আগুনের ব্যবহার, আশ্রয়স্থল বানানোতে সক্ষম এই জাতিই প্রথম আফ্রিকা ছেড়ে ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

এরও অনেক পরে বিবর্তনের মাধ্যমে আসে হোমো স্যাপিয়েন্স বা বুদ্ধিমান মানব। তাদের একটি উপজাতি নিয়ানডার্থালেরা ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়াতে বাস করত, এড়াই প্রথম নিজেদের জাতের মৃতদের কবর দেওয়া শুরু করে, কিন্তু আজ থেকে কুড়ি হাজার বছর আগে এরা বিলুপ্ত হয়ে যায়। আরেকটি উপজাতি বা বর্তমান মানুষেরা জন্ম নেয় ৪০ হাজার বছর আগে। এরা হল হোমো সেপিয়েন্স সেপিয়েন্স। এরাই আফ্রিকা, ইউরোপ, এশিয়ার সাথে সাথে, এশিয়া ছেড়ে আমেরিকা মহাদেশেও পৌঁছে যায়। এরা দীর্ঘ্যকায় ছিল, পায়ের তুলনায় হাত অনেক বেশি লম্বা ছিল। অস্ত্র ব্যবহারেও পটু ছিল এরা।

ধান ভাঙতে শিবের গীত গাইতে হচ্ছে এই কারণে যে, এই মানবেরা একদেশ ছেড়ে আরেক দেশে পা ফেলেছিল নিজেদের প্রয়োজনে। শিকারে স্বল্পতা, আবহাওয়ার পরিবর্তন, নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি নানা কারণে এরা দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়াত। নব্যপ্রস্তর যুগের পরে, ধীরে ধীরে মানুষেরা গড়ে তোলে নিজেদের স্থায়ী বাসস্থান, গ্রাম, শহর, ভাগ হয় শ্রম। এই সময়কালেই জেরিকো ও চাতাল হুইউক সভ্যতা গড়ে ওঠে। মানুষ নির্ভর করতে শুরু করে কৃষি ব্যবস্থার ওপরে। 
এর পরে অনেক জল বয়ে যায় তাইগ্রীস ও ইউফ্রেতিসের অববাহিকায় (এখনকার ইরাক), মিশরের নীল নদের অববাহিকায়, অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমাংশে, সিন্ধু নদের অববাহিকায় একের পর এক গড়ে উঠতে থাকে মেসোপটেমিয়া, মিশরীয় ও সিন্ধু সভ্যতা আজ থেকে পাঁচ ছয় হাজার বছর আগে। কালের নিয়মে একে একে সেগুলি হারিয়েও যায়। মুছতে শুরু করে এইসব এবং আরো অনেক এমন সভ্যতার, যেমন, ইনকা, অ্যাজটেক, বাইজেন্টাইন, গ্রীস, রোমান ইত্যাদির সীমারেখাও। মানুষেরাই ধীরে ধীরে বিশ্বের বিশালতাকে টুকরো টুকরো করে তৈরি করতে থাকে একেকটি, আলাদা আলাদা দেশের উঠোন। যা আজকের প্রবন্ধের মূল আলোচ্য বিষয়।

শুধুমাত্র ঔপনিবেশিক মতবাদকে তোল্লা দেওয়ার জন্য, স্বীয় সম্মান খানিকটা হলেও বজায় রাখার খাতিরে, ১৭৭৬ সালের চৌঠা জুলাই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সাক্ষর হওয়ার পরও ব্রিটিশ সরকার তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করায় আমেরিকায় লেগে থাকা গৃহযুদ্ধ চলতেই থাকে, দীর্ঘ্য ছয় বছর স্থায়ী হওয়ার পর ১৭৮৩ সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীনতার স্বীকৃতি পায়। কিন্তু ভাঙনের খেলা চলতেই থাকে। আজ আমেরিকা কতগুলো খণ্ডে বিভক্ত তা হয়তো অনেকেই মনেও করতে পারেননা। আর একেকটা অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরা। তারা কি এই বিভেদের পক্ষে ছিলেন? গ্যাটিসবার্গের কবরখানায় মাটির নীচে শুয়ে থাকা সৈনিকরা, কি আজো জানে যে সে যেখানে শুয়ে আছে সেটা তার নিজের অঞ্চলই নয়।

একটা বড় দেশকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেওয়ার আরো উদাহরণ আছে। স্পেন ও পর্তুগালের ঔপনিবেশিক থাবা থেকে মুক্ত হয়ে দক্ষিণ আমেরিকায় ভেনেজুয়েলা, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, চিলি, পানামা, পেরু, বলিভিয়া, উরুগুয়ে প্রভৃতি দেশগুলো সবাই তাদের খানিকটা অংশ খুইয়েছে অন্য দেশের কাছে। সেই ভাগাভাগির ফল আজও দক্ষিণ আমেরিকার জনগণ ভোগ করছেন। প্রবল অনাবৃষ্টি, খরা, ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কাতারে কাতারে মানুষ দেশ ছাড়ছেন।

আফ্রিকা মহাদেশে এই ভাঙনের ফলে এক দেশের খানিকটা জুড়েছে আরেকদেশে, কোথাও বা ভাগই হয়ে গেছে দেশ। অতীতের রোডেশিয়া ব্রিটিশরা ভেঙে উত্তর আর দক্ষিণে ভাগ করে দিয়েছিল ১৯১১ সালে, আজ যা জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে নামে পরিচিত, ভাঙ্গা হয়েছিল মরক্কোকেও পরের বছর, খানিকটা স্পেন খানিকটা নিয়েছে ফ্রান্স। এই ভাগাভাগির রাজনীতিতে, কেনিয়া, আলজেরিয়া, মালি, উগান্ডার ভাগ, দখল, ১৮৯৯ সাল থেকে শুরু হওয়া বু’ওর যুদ্ধে, শুধু ব্রিটিশ বা স্থানীয় শ্বেতাঙ্গরাই নয়, প্রাণ হারিয়ে ছিল হাজারো সাধারণ আফ্রিকান নাগরিক। কোনরকমে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোর জীবন ধারনের প্রাচীন পদ্ধতি এমন ভাবে ধ্বংস হয়েছিল যে না খেতে পেয়ে মারা গেছিল আরো বহু লোক। যারা টিকে ছিল তাদের দিয়ে শ্রমিকের কাজ করানো হত, সেই ব্যবস্থাও ক্রীতদাস প্রথার চেয়ে খুব একটা ভালো ছিল না। আজো অ্যাঙ্গোলা, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, বারবার রক্তাক্ত হচ্ছে। মরছে মানুষ, ঝরছে লাল রক্ত, হ্যাঁ ওই কালো মানুষগুলোর শরীর থেকেও। আর একই রঙের রক্তের কিছু ঔপনিবেশিক দেশ আজো শ্বদন্তে খড়কে কাঠি দিয়ে ক্ষমতার লালসা খোঁচাচ্ছে।

ইউরোপের কথাই যদি ধরা যায়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ও পরে ক্ষমতার লড়াই এমন একটা জায়গায় পৌঁছে যায় যে, পৃথিবীর তাবড় শক্তিগুলো নিজেদের পেশী বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করে ছোট ছোট দেশগুলোকে। তাদের দখল করে, ভাগ করে, এক দলের সাথে আরেক দলের লড়াই লাগিয়ে দিয়ে, আখের গোছানোর কাজ করে যাওয়া বৃহৎ শক্তিধর দেশগুলো যে অবস্থার সৃষ্ঠি করেছিল তার থেকে বেরোনোর রাস্তা আজো হয়নি। আজও তাই বসনিয়া, সার্বিয়াতে রাস্তায় আলপনা দেয় সেই লাল রক্তই। রাতারাতি এক বৃহৎ ক্ষমতাধর দেশ হয়ে উঠেছিল সোভিয়েত রাশিয়া। সারা পৃথিবী জুড়ে আগ্রাসনে পিছিয়ে ছিলনা তারাও। বিংশ শতকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটলে তার অধীনে থাকা ছোট ছোট দেশগুলো স্বাধীনতা ফিরে পায়। কিন্তু একই সাথে গৃহযুদ্ধের আবহ ঘিরে ধরে গোটা সোভিয়েত ইউনিয়নকে। সেই রক্তক্ষয়ী লড়াই আজো মাথা চাড়া দেয় মাঝে মাঝেই।

মধ্যপ্রাচ্যে বহু সহস্র বছর ধরে বসবাসকারী হিব্রুভাষী ইহুদীদের বাসভূমিতে কব্জা জমিয়ে রেখেছিল সম্মিলিত আরবদেশগুলি। ফিলিস্থিন নাম দিয়ে সেখানে উসমানীয় সাম্রাজ্য তৈরি করার পর বিতাড়িত ইহুদীরা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ও তার অনেক আগে থেকেই ইহুদী নিধনকে একটা মহৎ কর্ম হিসেবে মেনে নেওয়া তথাকথিত সভ্য জগতের কিছু অসভ্য মানুষ যে হত্যালীলা চালিয়েছিল তা আজ ইতিহাসের পাতায় কালো কালিতে লেখা আছে। ইহুদীরা জন্মায় এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে যে তাদের প্রমিশড ল্যান্ডে তারা ফিরে যাবেই। সেইমতো ফিলিস্থিনে ফিরে যাওয়া শুরু করে বহু ইহুদী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘে বিষয়টি উত্থাপন করায় ১৯৪৭ সালে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ফিলিস্থিনকে ভেঙে দুটুকরো করে আরব ও ইহুদিদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠন করা হবে। এর মধ্যে থাকা জেরিজালেম নগরকে আন্তর্জাতিক শহরের মর্যাদা দেওয়া হবে কেননা, খ্রীস্টান ও মুসলমান, এই দুই ধর্মের মানুষদের কাছেই এটি পবিত্র নগরী।

আরবরা এই জাতিসংঘের এই প্রস্তাবে রাজী না থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৮ সালের ১৪ই মে নিয়ন্ত্রণ উঠিয়ে নেওয়ার সাথে সাথে, একই দিনে ডেভিড বেন গুরিয়ন, ইস্রায়েলের জাতির জনক তথা প্রথম প্রধানমন্ত্রী, স্বাধীন ইস্রায়েল রাষ্ট্রের ঘোষণা করেন। সম্মিলিত আরবশক্তি ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, কিন্তু দ্রুত ইস্রায়েল সেই সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করে, দখল করে নেয় আগের চেয়ে বেশি অঞ্চলও। জেরুজালেম শহরের কিছু অংশও তারা দখলে নিয়ে নেয়। ১৯৪৯ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্ততায় যুদ্ধের বিরাম ঘটে এবং ইস্রায়েল স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৬৭ সালে আবারো যুদ্ধের মেঘ ঘনিয়ে আসে। এবার ইস্রায়েল সম্পূর্ন জেরুজালেম দখল করে নেয় এবং ইস্রায়েলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে। আজো ফিলিস্থিনিদের সাথে, গাজা ভুখন্ডে বসবাসকারী নিরীহ মানুষদের প্রাণ যাচ্ছে এই দেশ দখলের খেলায়। ধর্মভিত্তিক স্থান নিয়ে বা ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাঙ্গাগড়ার রাজনীতি, পৃথিবীতে এই একটাই নয়, আসছি সে প্রসঙ্গে।

আরেক বৃহৎ শক্তিধর দেশ, আমেরিকা, তার মিত্র ফ্রান্সের তৈরি লাওস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম এই তিন দেশের সম্মিলিতরূপ ইন্দোচীন, ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান দ্বারা দখল হয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছিল। সাম্যবাদী নেতা হও চই মিনের নেতৃত্বে ফ্রান্স থেকে ভিয়েতনাম স্বাধীন হিসেবে নিজেদের ঘোষণা করে। ফ্রান্স স্বীকৃতি না দেওয়ায় ১১৯৪৬ শাল থেকে ফ্রান্সের সাথে ভিয়েতনামীদের যুদ্ধ বাধে। দীর্ঘ্যস্থায়ি এই যুদ্ধের পর দিয়েন বিয়েন ফুর লড়াইতে ফরাসীরা পরাজিত হয়। স্বাধীন ভিয়েতনামকে উত্তর ও দক্ষিণ এই দুই ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। উত্তরে সাম্যবাদীরা আর দক্ষিণে অ-সাম্যবাদীরা দেশ গড়ে তোলে। এরপরই শুরু হয়ে যায় গৃহযুদ্ধ। দক্ষিণ ভিয়েতনামের সাম্যবাদী গেরিলাদের সাথে যুদ্ধে আমেরিকাও জড়িয়ে পড়ে। ১৯৬৫ সালে আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার সম্মিলিত বাহিনীর সাথে গেরিলাদের যুদ্ধ শুরু হয়, কিন্তু গেরিলাদের যুদ্ধকৌশলের কাছে আমেরিকাকে পর্যুদস্ত হতে হয়। ১৯৭৩ সালে আমেরিকা তাদের দেশের জনগণের চাপে ও বাকি বিশ্বের চাপে সেনাপ্রত্যাহারে বাধ্য হয়। যুদ্ধ তবুও চলতে থাকে। শেষে ১১৯৭ সালে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়। দুই ভিয়েতনাম সাম্যবাদী সরকারের অধীনে একটি রাষ্ট্র হিসেবে জুড়ে যায়। অসংখ্য মানুষের মৃত্যু, শস্যক্ষেত্র ধ্বংস হয়ে চরম খাদ্যাভাব ইত্যাদির মধ্যেও অটুট থেকে ভিয়েতনামের এই কৃতিত্ব আজো অনেক দেশের কাছেই গ্রহণযোগ্য ইতিহাস।

এবার আসা যাক আমাদের নিজের দেশের কথায়। ভারত ভুখন্ড চিরকালই নানা জাতির আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়েছে। পাঁচহাজার বছরের বেশি পুরোনো এই সভ্যতাকে খন্ড খন্ড করে দেবার, লুন্ঠনের অভিপ্রায় নিয়ে শক, হূণ, পাঠান, মোগল, বিদেশি আরো নানা দেশের আক্রমণের ঢেউ একের পর এক আছড়ে পড়েছে এই ভুখন্ডে। তারা কেউ ফিরে গেছে স্বভূমিতে, কেউবা, এই দেশের মাটিকেই নিজের দেশ হিসেবে বেছে নিয়ে থেকে গেছে। বিভিন্ন সভ্যতা মিশেছে, গড়ে উঠেছে ধর্ম, রীতিনীতি, সংস্কৃতির এক মহা মিলনমেলা। কিন্তু তবুও সেইভাবে ভারতকে ভাগ করে দেবার কথা তেমন ভাবে ওঠেনি। প্রবল পরাক্রান্ত মুসলমান ধর্মের মোগল বাদশাহরাও হিন্দু মুসলমানকে পাশাপাশি মিলেমিশে থাকার ব্যাপারেই মত জানিয়েছিলেন।

এরপর, ইংরেজরা ব্যবসার কথা বলে এদেশে এসে, যখন ভারতবর্ষে তাদের অধিকার কায়েম করে বসল, তৈরি করল এক নতুন উপনিবেশ, তখন থেকেই বদলানো শুরু হল অনেক কিছুর। ভাগাভাগির মাধ্যমে বিপক্ষের শক্তি হ্রাস করার নীতিতে বিশ্বাসী ইংরেজরা, এইদেশের কিছু ক্ষমতালোভী মানুষের সাহায্যে দেশের সার্বভৌমত্বকে ভাগ করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হল। বেনিয়ার চাদর গা থেকে ফেলে দিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিল ঔপনিবেশিকের নামাবলী। এই ব্যাপারটা নতুন নয়। পৃথিবীর ইতিহাস বলে, বেনিয়ার জাত ইংরেজরা এইভাবেই সারা পৃথিবীতে নিজেদের অধিকার কায়েম করেছে।

একে একে স্বাধীন রাজাদের, মোগল সাম্রাজ্যের দেউলে নিভতে শুরু করল প্রদীপ। নানা টানাপড়েনের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে, বিভিন্নভাবে প্রতিরোধ, গণআন্দোলনের রূপে নিজেদের অনীহা জানালেও, ঠিক সেঅর্থে বিপ্লব সংঘটিত হয়নি এই বিদেশি শাসনকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে। যথাযথ নেতৃত্বের অভাব, মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া ভীতি, সমস্ত ধ্যানধারণা সরিয়ে রেখে, নিজেদের ভারতবাসী ভেবে এগিয়ে পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিঁড়ে স্বাধীনতার দাবি সেভাবে জানানোই হয়নি। একের পর এক ভাইসরয়রা এসে তাদের মতো করে শাসন চালিয়েছেন ভারতভূমিতে।

এল, ১৯০৫ সাল, ভাইসরয় হিসেবে তার দ্বিতীয় কার্যকালে লর্ড কার্জন, ব্রিটিশ ভারতের সবচেয়ে বড় প্রশাসনিক বিভাগ, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সীকে দ্বিখণ্ডিত করার আদেশ দিলেন। এই আদেশে তৈরি হল মুসলমান প্রধান পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ, ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি বিভাগ, এবং হিন্দুপ্রধান বঙ্গদেশ মানে সেকালের পশ্চিমবঙ্গের প্রেসিডেন্সী ও বর্ধমান বিভাগ, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা রাজ্য। এবার অনেকদিন বাদে সেই ঝড় উঠল যা তদানিন্তন ব্রিটিশ শাসকেরা ভাবতেও পারেননি। পূর্ববঙ্গে যে সব জমিদারি ছিল তার বেশির ভাগের মালিক ছিলেন বাঙালি হিন্দুরা। তাদের প্রজা ছিল কৃষিকাজে নিযুক্ত মুসলমানেরা। এই ব্যবস্থাপনার ফলে হিন্দু উচ্চবিত্ত শ্রেণীকে বিহারী ও ওড়িয়াদের মাধ্যমে সংখ্যালঘু করে দেবার চক্রান্তের বিরুদ্ধে তীব্র রোষে ফেটে পড়েন সবাই। শুধুমাত্র জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে সাধারণ অন্দোলনই নয়, এদিক সেদিকে সহিংস আন্দোলনেরও সূত্রপাত হতে লাগল। কলকাতা তখনো ভারতের রাজধানী ফলে সেখান থেকেই আন্দোলন সংঘটিত হতে লাগল। সরকারী অফিসে ডাকাতি, আধিকারিকদের হত্যা ইত্যাদিও চলতে লাগল একই সাথে।

ব্রিটিশদের উদ্দেশ্য যে ব্যর্থ হয়েছিল তা নয়। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গের আদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়ার মধ্যেই, হিন্দু নেতাদের এই বাড় বাড়ন্তে ভীত সন্ত্রস্ত ভারতের মুসলমান উচ্চবিত্ত সম্প্রদায় তাদের ভীতির কথা নতুন ভাইসরয় লর্ড মিন্টোকে জানায়। নানান নথীর সাহায্যে তারা বোঝাতে সক্ষম হন যে মুসলমানদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা দরকার। ১৯০৬ সালে ঢাকায় অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ স্থাপিত হয়। ভারতীয় আর্যসমাজ সেসময় শুধু উত্তরভারতে গোরক্ষাকারী গোষ্ঠিগুলোকে সমর্থন করেনি, বরং মুসলমানদের ধর্মান্তরিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ব্রিটিশদের কপালে ভাঁজ ফেলে দিয়েছিল। গোহত্যার প্রতিবাদে ও হিন্দি-উর্দু বিতর্ক নিয়ে এর আগেও ১৮৯৩ সালে জাতিদাঙ্গা লেগে যায়। বহু সাধারণ মানুষ হতাহত হয় সেই দাঙ্গায়। একদেশ ছেড়ে ভীত সন্ত্রস্ত মানুষেরা অন্য জায়গায় পাড়ি দিতে থাকেন শেষ সহায় সম্বলটুকু সাথে নিয়ে, সাথে নিয়ে দাঙ্গা, সম্ভ্রমহানির লজ্জা, সন্ত্রাসের তিক্ত অভিজ্ঞতা আর নাড়ির বাঁধন ছেঁড়া সুতীব্র যন্ত্রণা।

১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের সময়, পুর্ববঙ্গের পক্ষে জোরালো সমর্থন ছিল সেখানকার মুসলমানদের, কেননা তারা ছিলেন সংখ্যাগুরু এবং রাজনৈতিক সুবিধালাভের সুযোগ তাদের সামনে এসেছিল, অন্যদিকে হিন্দুরা সেখানে সংখ্যালঘু হলেও বিরোধিতা করেছিলেন তাদের সম্পত্তি, ক্ষমতা ইত্যাদির কথা ভেবে। ব্রিটিশদের এই দাবার চাল নানা আন্দোলনের জন্য ভেস্তে গেলেও, ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করলেও, দেশ ভাগের একটা জমি কিন্তু তখন থেকেই তৈরি হয়ে গেছিল। ১৯৪৭ সালে বারবার ভোট নেওয়া হয়েছে, নানাস্তরে, প্রতিবারই বঙ্গভঙ্গের ব্যাপারেই সবাই সায় দিয়েছিলেন। ১৯৪৬ সালে কলকাতা, নোয়াখালি ইত্যাদি জায়গায় মারাত্মক জাতিগত দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার লোকের প্রাণ যায় সেই দাঙ্গায়। হিন্দু মুসলমান দুই জাতির মধ্যে বিভেদের দেওয়াল আরো শক্ত হয়।

বাংলার মুসলিম লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এই দেশভাগ যে শুধুমাত্র ধর্মীয় কারণেই হচ্ছে, এবং যেহেতু কল কারখানা, বিভিন্ন শিল্প ইত্যাদি পশ্চিমবঙ্গেই অবস্থিত, পূর্ববঙ্গ সেক্ষেত্রে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়বে, উপলব্ধি করে একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, পূর্ব ও পশ্চিম বাংলা ভারত বা পাকিস্তানের সাথে যুক্ত না করে একটি স্বতন্ত্র রাজ্য হিসেবে দেখা হোক। ভারতীয় মুসলিম লীগের জাতীয় নেতারা যারা একটি মুসলিম দেশের স্বপ্নে বিভোর ছিলেন তাদের অনেকেই এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। যদিও মহম্মদ আলী জিন্নাহ এই প্রস্তাবের সুফল বুঝতে পেরে একে সমর্থন করেছিলেন। সেইসাথে বাংলা প্রদেশের প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতারা, নেজাজি সুভাষ চন্দ্র বোস, তার দাদা শরৎ চন্দর বোস, কিরণ শংকর রায় প্রমুখেরাও এই প্রস্থাবের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় বাধা আসে জাতীয় কংগ্রেসের নেতা জওহরলাল নেহরু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ইত্যাদির কাছ থেকে। বাংলার হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর নেতৃত্বে এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেন। এরপরে সোহরাওয়ার্দী তার প্রস্তাব ফিরিয়ে নেন। অবিভক্ত বাংলার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় কিন্তু দেশভাগ এড়ানো এবং হিন্দু মুসলমানের একসাথে বসবাস করার ইচ্ছের শেষ চেষ্টা যে সোহরাওয়ার্দী এবং বাংলার কয়েকজন কংগ্রেস নেতা করেছিলেন ইতিহাস তার সাক্ষী থেকে যায়।

ইংরেজরা তাদের শাসনকালের শেষ পর্যায়ে, জাতিগত বৈষম্যের শেষ পেরেকটি পুঁতে দেয়। ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ভারত স্বাধীন হয়। সৃষ্ঠি হয় আরেকটি নতুন দেশ পাকিস্তান, ভারতের পশ্চিম অংশের খানিকটা এবং পূর্ববঙ্গ মিলে। উভয় দেশের মধ্যে এক বিরাট জনগোষ্ঠি এক জায়গা ছেড়ে আরেক জায়গায় যাওয়া শুরু করেন। বিভক্তিকরণের আগেই পাঞ্জাবে লেগে যায় বিশাল দাঙ্গা, তবুও একবছরের মধ্যে পূর্ব ও পশ্চিম পাঞ্জাবের অভিবাসন প্রক্রিয়া শেষ হয়। কিন্তু বাংলার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এত সহজ হয়নি। প্রায় ত্রিশ বছর ধরে চলা অভিবাসন প্রক্রিয়ায়, ঘরবাড়ি, জমি জায়গা, সবকিছু ছেড়ে দেশ ছেড়ে অন্যদেশে পাড়ি দিতে হয় পূর্ববঙ্গের সংখ্যালঘু হিন্দুদের। চলে চরম অত্যাচার, খুনোখুনি, লুটপাট। সব হারিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ চলে আসে পশ্চিমবঙ্গে। শুরু হয় আরেক লড়াই। বেঁচে থাকার লড়াই।

ইংরেজরা যে সুযোগটা খুঁজছিল তা তাদের হাতে তুলে দিয়েছিল তৎকালীন নেতারা। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রাণ গেছে মুসলমান, হিন্দুর কিন্তু ব্রিটিশরা ছিল সুরক্ষিত। তারা মজা দেখেছে, কখনো মুসলিম লীগ কখনো কংগ্রেস দুদিকেই হাওয়া দিয়ে গেছে। এই সাম্প্রদায়িকতার আবহ যেন অটুট থাকে, সেই দিকে সবসময় নজর থাকতো তাদের। একের পর এক দাঙ্গায় প্রাণ গেছে হিন্দু মুসলমান উভয়েরই কিন্তু তখনো শাসনভার নিজেদের কাছে থাকলেও সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়নি ব্রিটিশেরা, বরং উত্তেজনার পারদ আরো ওপরে উঠতে দিয়েছে।

মুসলিম লীগের নেতারা বা জাতীয় কংগ্রেসের নেতারা তখন যোগ বিয়োগ গুণ ভাগের খেলায় মত্ত। কে কতখানি ক্ষমতার অধিকারী হবে, কে কোন পদ নেবে সেই নিয়েই আলোচনায় বিভোর ছিল তারা। এই ভাগাভাগির খেলায় মত্ত থাকতে থাকতেই এল সেই দিন ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট। ভারত ভেঙে টুকরো হল। নেপাল ভুটান ইংরেজ শাসনের আওতায় আসেনি বলেই তাদের সীমা অবিকৃত থাকল। শুরু হল এক সীমাহীন অনাচার, অত্যাচারের দিনলিপি। সব হারিয়ে, সযত্নে সাজানো ঘরবাড়ি জমি জায়গাত পিছনে ফেলে কাতারে কাতারে মানুষ এক দেশের বেড়া টপকে শুধু একটু মাথা গোঁজার আশ্রয়ের সন্ধানে চলে আস্তে লাগল। নিরন্ন, নির্বসন, গৃহহীন মানুষগুলোর বুকে তখনো পদ্মার ঢেউ ছলাত ছলাত শব্দ করে চলেছে। চোখে ভাসে সন্ধ্যে বেলায় তুলসীতলায় জ্বালানো প্রদীপের আলো।

এতেই শেষ নয়। দিল্লী, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, কাশ্মীর, গুজরাত, রাজস্থান সবজায়গাতেই তখন শরণার্থীদের ভিড় উপচে পরছে। কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সমস্ত জেলা, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় আছড়ে পড়েছে সেই সবহারানো জনসমুদ্র। ধীরে ধীরে সেই অবস্থা কাটতে শুরু করল, কিন্তু আবারো পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ লাগল ১৯৭১ সালে। অজুহাত সেই একই। ধর্মের নামে হানাহানি তখনো ছিল, যা আজও আমরা প্রতিনিয়ত দেখে যাই আমাদের দেশে, বিদেশে, নানা জায়গায়।

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ, গভীর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলাদেশের ওপরে। ঢাকা শহরে ও অন্যান জায়গায় হিন্দু মুসলমানদের এবং পূর্ববঙ্গে তখনো থাকা হিন্দুদের ওপরে তুমুল জঘন্য অত্যাচার শুরু করা হয়। বাংলাদেশের সদ্য রাজনৈতিক ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে। প্রথমত নিজেদের সামান্য সম্বল নিয়ে লড়াই শুরু করলেও, ভারতের কাছ থেকে সাহায্য পেতে থাকে গেরিলা বাহিনী। একসময় পাকিস্তানী বাহিনী ঢাকা শহর দখল করে নিলেও ক্রমশ তারা কোণঠাসা হয়ে পড়ছিল। গৃহযুদ্ধের ফলাফল এভাবে বিরুদ্ধে যাবে তা ভাবতে না পেরে, এই যুদ্ধকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই পাকিস্তান ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বিমান হানা শুরু করে দেয় ডিসেম্বর মাসে।

১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর, গভীর রাতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যুদ্ধ ঘোষণা করেন। সুসজ্জিত ভারতীয় বাহিনী এই অপেক্ষাতেই ছিল। সর্বশক্তি নিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে। ভারতীয় বাহিনী চারদিক থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে আক্রমণ করে, পূর্বে ত্রিপুরা থেকে সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, উত্তরে কোচবিহার দিনাজপুর ইত্যাদি সীমান্ত থেকে দিনাজপুর, রংপুরের দিকে, পশ্চিম দিক থেকে বাহিনী যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর অভিমুখে আর আরেকটি বাহিনী মেঘালয় হয়ে ময়মনসিং ও জামালপুর অভিমুখে রওনা দেয়। এত দ্রুত ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের সাকরেদ বাংলাদেশী রাজাকারদের পরাস্ত করে যে তা কল্পনাতীত ছিল।

১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর, নব্বুই হাজারের বেশি সৈন্য নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের কম্যান্ডার ইন চীফ নিয়াজী ভারতের কাছে আত্ম সমর্পন করতে বাধ্য হয়। যুদ্ধের পর পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল। কিন্তু কাঁটাতারের বেড়া যে মানুষের মনকে আটকাতে পারেনা, তা আজো দুদেশের সাহিত্য, আলোচনা ইত্যাদির মাধ্যমে বারবার সামনে চলে আসে। অন্যদিকে পাকিস্তান সারা পৃথিবীতে আতংকবাদীদের পীঠস্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এরই মধ্যে। ব্রিটিশদের দখলে থাকা বার্মা স্বাধীন হয়েছে, স্বাধীন হয়েছে সিলোন বা বর্তমান শ্রীলঙ্কা। স্বাধীন হয়েছে মালদ্বীপ। কিন্তু এত কিছুর পরও কাঁটাতারের বেড়া মানুষের মনকে বেঁধে রাখতে পারেনি।

রাজনীতিবিদরা আসে, চলে যায়, যে যার নিজের আখের গুছিয়ে নেয়, সেই খেলা আজো চলেছে। পারলে আজো দেশটাকে আরো কয়েকটা ভাগে ভাগ করে দেয় তারা, দিয়েছেও। রাজ্যের সংখ্যা বেড়েছে বৈ কমেনি। দেশভাগ নামক কদর্য শব্দটা, আজো সেই আতঙ্কের বাতাবরণ সৃষ্ঠি করে। সকলের মধ্যে না হলেও অন্তত কিছু মানুষের মনে যারা সেদিনগুলো দেখেছিলেন। শুধু আমাদের দেশেই নয়, সারা পৃথিবীতেই একই অনুভূতি ছুঁয়ে যায় মানুষকে। আজো দেশভাগের নামে ক্ষমতালোভীদের পাশা খেলা চলছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। ভুগছে, মরছে সাধারণ মানুষ।

আমরা সাধারণ মানুষরা শুধু প্রার্থনা করতে পারি যেন আর কোন দেশ এভাবে ভাগ না হয়। যেন মানুষকে নিয়ে রাজনৈতিক খেলা আর কেউ না খেলে। যেন কোন মায়ের কোল, স্ত্রীর স্বামী, শিশুদের বাবা মা যেন প্রাণ না হারায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন