মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯

সিলভিয়া ঘোষ


#অভিমান



অফিস থেকে ফিরেই মনামী পাঁচ বছরের ছেলের সারাদিনের দুষ্টুমি, বায়না,  অপকর্মের কথা বাবার মুখ থেকে শুনতে শুনতে অধৈর্য হয়ে  ছেলের স্কুল ব্যাগের থেকে ডায়েরিটা বের করেই মাথায় হাত দেয়। আগামী কালই  গার্ডিয়ান কল  হয়েছে। কিন্তু কাল যে  ইউনিয়ন মিটিং আছে  অফিসে।  না গেলে এবার চাপ হবে।  উমাপতি বাবু এবার সবাই কে বলে রেখেছেন মিটিং এ না এলে পরবর্তী কালে কোন রকম  সমস্যায় সাহায্য করবে না ইউনিয়ন।  এদিকে জরুরী  গার্ডিয়ান মিটিং কেন ডাকলো সে টেনশনে মনামী ছেলে কে ধরে বিভিন্ন রকম ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগায়,  প্রণবেশ ( মনামীর বাবা)  মেয়ে কে বারে বারে বোঝানোর চেষ্টা করেন ঐভাবে বকাবকি  করলে হবে না  বরং খেলার ছলে গল্পের ছলে ওর  কথাগুলো জানার চেষ্টা করতে হবে। মনামীর  কোন উপদেশই মাথায় কাজ করছেনা।  এটুকু ছেলে যে কতটা অবাধ্যতা করতে পারে  সেটা বাড়িতে দেখেই  সে বুঝেছে। সে রকমই নিশ্চয় স্কুলেও এমনটাই করে... 
    তিতান  বাড়িতে  এটা তুলছে,  ওটা ভাঙছে, জল ঘাটছে , দাদুর সাথে কুস্তি করে দিন কাটাতেই ভালোবাসে।  একটা জিনিস  লক্ষ্য  করেছে  মনামী, তিতান যেন তাকে সহ্য করতে পারছেই না। সারারাত আজেবাজে স্বপ্ন আসে  ঘুমের মধ্যে মনামীর। সকাল হতে না হতেই ফোন করে তিতানের ক্লাস টিচার কে,  জানতে চায় কতটা দরকার আজকের মিটিং টার। ক্লাস টিচার  সুদেষ্ণা রায় একটু যেন অসুন্তুষ্ট হয়েই বলেন "না এলে জানবেন কি করে ছেলে কি করছে না করছে? শুধু মাসে মাসে টাকা ফেলে দিলেই তো আর  বাচ্চা মানুষ হয় না! তাকে সময়ও দিতে হয়।" কথাটা শেষ হতে না হতেই  ফোনটা কেটে দিল মনামী। আজকাল এতটুকু জ্ঞান নিতে পারেনা সে।  অফিসে কানাঘুষো তাকে নিয়ে আলোচনা চলে সেটা অভিষেকই  প্রথম জানিয়েছিল।  মনামী জানে পরিবারের সবাই তার আড়ালে  তাকে নিয়েই ঠাট্টা তামাসা করে তবুও সব সহ্য করে সে একজনের মুখের দিকে চেয়ে।   সেই ছোট্ট তিতান কে মাথায় রেখেই আজকাল  সব কিছু মানিয়ে নিয়েছে  সে। তবুও... 
        
        স্কুলে যেতেই  হবে জেনে মনামী  তাড়াতাড়ি  ছেলের পুলকারেই চলে গেলো স্কুলে। ক্লাস টিচার বললেন একটু  ব্যক্তিগত কথা জানতে চাইছি আপনার কাছে, তার কারণ বাচ্চার উপর তার পরিবেশের প্রভাব পড়ে বেশী তাই।  তিতান  এমনিতে নরম্যাল কিডস তবুও ওর মধ্যে কিছু কিছু অ্যাবনর্মালিটি আছে। যেমন এক জায়গায় বসে না সে কখন,  অন্য বাচ্চাদের বাবাদের সাথে আসতে যেতে  দেখলেই ও তাদের সাথে মারামারি  করতে  উদ্যত হয়। এর কারণগুলো জানা দরকার। 
       ঘণ্টার  শব্দে  বাইরে বেরিয়ে আসে মনামী। মনে মনে ভাবে হায়রে জীবন!  যে বিশ্বাসঘাতক , লম্পট,  মাতালের  জন্যে  পালিয়ে এলাম   কলকাতার মায়াবী আলো ছেড়ে  এত দূরে ছেলে মানুষ করতে,  আজ সেই ছেলের  মনেই এতটা অভিমান জমা হয়ে আছে তার  মায়ের প্রতি,  না কি হারিয়ে যাওয়া বাবার প্রতি !  যাকে  মনামীও ভুলতে চায়  রোজ রাতে  বালিশের মধ্যে রাখা  শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ লাগানো   (নির্ঘুমভাবে আগলে রাখা)  একটা ছুরির বিনিময়ে... 


চিত্র সমরেন্দ্র মণ্ডল 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন