মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯

জয়তী রায়

মন এবং আমি
_______________________
             
___________________________
     মন এবং আমির দ্বন্দ্ব চিরকালের।
           প্রচলিত কথা আছে__আমার মন খারাপ।
                  আমার মন, ভালো। আমার মন, বেড়াতে চায়। আমার মন, ঝগড়া করতে চায়। ইত্যাদি ইত্যাদি।
  এমন নানাতর ব্যাপারে ___নিয়ে মানুষ খুব ব্যস্ত। আমি নিজেও কলকাতায় ফিরে আসার পরে, বেশ মন খারাপ করে থাকতাম। মনে হত, কিছুই যেন বুঝতে পারছিনা। কাউকে তেমন ভাবে আগে চিনতাম না, আর যাদের চিনতাম__তাদের ব্যবহার অচেনা ঠেকত। মজার কথা হল__যারা আমার কাছে কাউন্সিলিং করতে আসত, তারাই তখন স্বান্তনা দিচ্ছে __মন খারাপ করো না। সব ঠিক হবে।
    ডাক্তারের কি রোগ হবে না? মন নিয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি বলে, আমার মন , খারাপ হতে পারে না?
     এই হল সূত্রপাত। খুব রাগ হল নিজের উপরে। এই " মন " ব্যাটাকে ধরত চেপে। তার এত সাহস? নিজে খারাপ হয়, আবার শরীরকে খারাপ করে ? রাগ করতে গিয়ে দেখলাম, ___মন তো আমার হাতে নেই! মন আমার কথা শুনছে না! উল্টে আমি শুনছি মনের কথা। অর্থাৎ মন চালিত রোবট একজন আমি। রিমোট হাতে মন , প্রভুত্ব করছে, শরীরের উপর, দেহের অণু পরমাণুর উপর ।
       দুঃখ কষ্ট জীবনের অঙ্গ। সুখ দুঃখ__আলো আর অন্ধকার। মানুষ জৈবিক চাহিদা পূরণে সক্ষম হলে পরে শুরু হয় আবেগের চাহিদা। অন্তহীন সে চাহিদা।
   প্রেম করার, ঘুড়ি ওড়ানোর, মিথ্যা বলার, প্রতারণা করার, লেখার, আঁকার ___সহস্র আবেগ। এই আবেগের স্রোত বাধা পায় মাঝে মাঝে। কষ্ট হয়। আপনজন আঘাত করে__কষ্ট হয়। অফিসে, বন্ধুদের আড্ডায়__সব জায়গায়__কষ্ট লুকিয়ে থাকে বিষধর সাপের মত।
  ছোবলে ছোবলে রক্তাত্ব মন , বার্তা পৌঁছে দিতে থাকে মস্তিষ্কে। ব্রেনের হাইপোথ্যালামাসে সেই কষ্টের বার্তার আঘাতে, কিছু রাসায়নিক অনু , ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে।  আক্রান্ত করে হৃদপিন্ডকে। যার অবধারিত ফল __করোনারি হৃদরোগ।
      ডাক্তারী কচ্কচি র মধ্যে না গিয়ে, সহজ কথায় বলি, স্ট্রেস শব্দটা পৌঁছে গেছে মানুষের নিত্য জীবনে। খুব স্বাভাবিক। প্রতিদিনের জীবন কদর্য। বাস অটো খোলা রাস্তা নিজের গৃহকোণ__সদা শঙ্কিত মানুষ। সেইসঙ্গে রয়েছে, সম্পর্ককে নিয়ে দায়। তার থেকে চাপ। সোশ্যাল মিডিয়া খুলে দিচ্ছে হাজার জানালা। সেই জানালা দিয়ে আলো যেমন আসছে, তেমনি আসছে ঝড় বৃষ্টি তুফান। মোকাবিলা করতে করতে ক্লান্ত মানুষ।

    মন না মস্তিষ্ক __মানুষকে কে চালায়__এই কচকচির ঝামেলা অনেক। মন নিয়ে কথা বলি বরং। সোজা কথা হল, সাধারণ মানুষকে চালায় মন। আর এই বেয়াদপ মনকে লাগাম পরাতে পারেন যারা , তারা হলেন নমস্য ব্যক্তি। মহামানব।
   মনকে খুশি রাখো, আনন্দে রাখো__তবে শরীর ভালো থাকবে__হামেশাই বলে থাকে ডাক্তার। কিন্তু, খুশি থাকার উপায় আমরা খুঁজি বাইরে থেকে। ফেসবুক , বন্ধু, বেড়ান__এগুলোর উপর নির্ভরশীলতা বাড়তে থাকে। কোনো একজন প্রিয় মানুষের মুখ মনে করলে দিন বদলে যায়। মন ভালো থাকে।
  তাই কি? ভালো থাকবে কি? বাইরের বস্তুর উপর নির্ভর যদি করে আমার মনের ভালো থাকা__তবে সেই _মন__আমার রইল কি?
   একদম সেটা সঠিক উপায় না। ফেসবুক, প্রকৃতি, বন্ধু __সব থাকুক জানালা হয়ে কেবল। দরকার মত খুলব, দরকার মত বন্ধ করব। তাদের ছাড়া মন খারাপ করা চলবে না।
  সেটা কি সম্ভব? অবশ্যই সম্ভব। শুধু কতগুলো পরিবর্তন আনতে হবে যাপনে। সঙ্গী হতে হবে পজিটিভ। জীবনে লক্ষ্য থাকবে, লোভ না।
  জীবন এক রঙ্গমঞ্চ। কোটিপতি ফিল্মস্টারদের জীবনে ঝড় আসছে । কেউ নিরাপদ না। কেউ জানেনা পরবর্তী দৃশ্য কি হবে? জীবন শুধু মুহূর্তের মধ্যেই সীমিত। কাজেই কালকের কথা ভেবে লাভ আছে কিছু? যখন আমার হাতেই নেই কিছু।
  মন কে হাতের মুঠোয় আনা যাবে না। কিন্তু তাকে বোঝানো যাবে। অবুঝ মন , ওরে অবুঝ মন__শান্ত থাক। সুন্দর থাক। এত বায়না করিসনি বাপ। বেশি বাড়াবাড়ি করলে, দেব অন্ধকার ঘরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে।
তুই ঐখানে বসে ঘ্যানর ঘ্যানর করে যা। আমরা ভালো আছি। ভালো থাকব।

1 টি মন্তব্য:

  1. আহা, বন্ধুদের মুখ মনে করলে সত্যিই মন ভালো হয়ে যায়, যেমন তোমার সদাহাস্যময় মুখটা। ভীষণ ভালো লেখা।

    উত্তরমুছুন