আরেকটি সলিলোকি
বছর গড়িয়ে এলে তোমাকেই ইতস্তত চিঠি লিখব ভাবি
কি যেন ঠিকানা ছিল, এখন তো গুরগাঁও তে নাকি
যাই বল উঁচু বেশ সাউথের এস্ক্যালেটরগুলো, তখন তো নতুন কিনা
মেট্রো থেকে নেমে মিনিট দশেক, একটা পোল পেরোতে হত,
আমি অবশ্য সাঁকো বলতাম, এখন আর বিশেষ বলি না,
রিকশা ভাড়া পনেরো টাকা, ঈষৎ দরদাম, দুজনে গেলে কুড়ি,
সে ও অবশ্য বছর সাতেক, না না ও রাস্তা নেবেন না, পরের গলি নিন,
না হয় পাঁচ টাকা বেশি দেব, আহা ও দিকে তো ছোট মামার দোকান,
হরিমতী হার্ডওয়্যার, ছোট্ ঠাকুমার নাম, প্রাঃ লিঃ, এখানে সুলভ মুল্যে…
ইত্যাদি যেমন হয়, অল্প ঝাপসা এখন, আমাকে আবার সাড়ে সাতটার মধ্যে
আসলে রাত হলে সদনে এত ভিড়, বলছি, একটা সিগারেট…, না না চল
এই ফুচকাওয়ালা, দশ টাকায় ক’টা, হুঁ হুঁ বাওয়া, ঝাল বেশি মানে বেশি,
বিহারে কোথায় তোমার গাঁও আমাকে বল, আমরা দুজনে কিন্তু এক সাইডে,
না না ওভাবে আলাদা খাবো না, জলদি ভাই, ফাউতে লাল চাটনি দেবে,
ট্রেন চলে এল, তাড়া কি, তোমার তো স্মার্ট কার্ড ছিল, এভাবে মিনিট দুয়েক
বাড়তি বরাদ্দ যেটুকু, হ্যাঁ হ্যাঁ, তাহলে নেক্সট বুধবার সেকেন্ডহাফে,
ওই চাইনিজ রেস্তোরাঁয় তো, ওয়েটারের বাঁ হাঁতে আঁকা ড্রাগনের উল্কি,
ওখানেই দেখা হবে, হয়েছিল কি, গ্রেভি নুডলস, এখন খাও না বোধ হয়
কি জানি, ছবি দেখে মনে হল, আসলে অদরকারি ইনফরমেশন, কি বললে
আমার ব্যাপারে, না না, মাইন্ড করবো কেন, আমি তো এখানেই, আপাতত
এই যেমন দেখছ, বাড়িতে সব ভালো তো, ও প্রশ্ন আমায় করে লাভ নেই
সাউথে তো আজকাল খুব ভিড় শুনি, আসলে আমিও বহুদিন, অহেতুক যাপন
এবং আদতেই দিন যায়, যায় রে, তাছাড়া সত্যি বলতে কি যা গেছে তা যাক …
দোতলার গান
হাইওয়ের ওপরে একটা খুব পুরনোমতন গাড়ি
আবারও থেমে যাচ্ছে কোনো অপ্রত্যাশিত বাঁকের সামনে
আর প্রাচীন উপকথা থেকে উঠে আসা ঘোড়সওয়ারেরা
ক্রমশ ঢুকে পড়ছে এইসময়ের একটা সরাইখানায়
অবশিষ্ট মদ হাতে যেখানে কয়েকজন ক্লান্ত ভাঁড়
মনোরঞ্জন করছে মালকিনের, অদূরেই জনৈক মাতাল
ধরে নেওয়া যাক সে কানে খাটো, এসব দেখেনি
বরং ভেবেছে একমনে, সোডার মধ্যে এত বেশি মৃত্যুর গন্ধ
কেন সে পাচ্ছে আজকাল, ঘোড়সওয়ারেরা ফিরে যায়
অন্যমনস্ক জেনারেল, গ্লাস শেষ না করেই উঠে পড়েন
চলুন কতকটা তাঁর পিছু পিছু যাওয়া যাক, রাস্তায় আবার
রাস্তার ওপাশে রাস্তা, অবিন্যস্ত ফ্ল্যাটবাড়ি, আমরা পেরোই
নির্জন পার্ক, তার এই দৃশ্যের ভেতর আর কেউ নেই
শুধু বিকেলভঙ্গিমার ঠিক মাঝখানে একটি ক্লান্ত তরুণী
নিদ্রিত প্যারামবুলেটরের সাথে গল্প করছে একাই
জানলার ওপাশ থেকে আমরা খানিক তফাত রেখে দেখছি
অনতিদূরেই কেউ একটা কাঁদছে, তার শব্দ ছাপিয়ে দোতলার
ওই অস্পষ্ট গান আজ আবার আমাদের কানে ভেসে আসছে…
পরবর্তী স্বপ্নে দ্রষ্টব্য
খুব পুরনো একটা তারার গা বেয়ে বিকেল গড়িয়ে পড়ছে আর জানলায় সেটা ঝুঁকে পড়ে দেখছে ট্যাক্সি-ফেরতা মেয়ে, এই ফ্রেমটা তোমার ভালো লাগছে, ভালো লাগছে আরেকটা ক্ষণস্থায়ী দৃশ্য হারিয়ে ফেলার দুঃখ, নিয়ন শহর জুড়ে পাতা ক্যানভাস বরাবর একটা একটা করে রঙ নিপুণ হাতে সরিয়ে ফেলছে কেউ, ওই হাত ও আঙ্গুল, তার নোনতা রক্তের স্বাদ তুমি খুব বেশি করে জানো, আয়নার ওপার থেকে দেখেছো অনেক আর বারে বারে ছুটে গেছো প্রবল আশ্লেষে তার বিপরীতে, সরণবিহীন ওই রাস্তা বরাবর আমাদের চেনা কোনো সাইনবোর্ড নেই, অথচ পুরনো অভ্যাসের বশে অজানা হরফগুলো চিনে নিতে তুমি ফিরে যাচ্ছ, ফিরে যাচ্ছ ওই মেয়েটার ঠোঁটে, রক্তের ভেতর দিয়ে ঘোড়া ছুটে যাচ্ছে আমাদের আর শাদা পাতাগুলো রিওয়াইন্ড করছে দ্রুত, আরও দ্রুত ক্যামেরার পেছনে নেওয়া এই ক্লোজ-আপ বরাবর দেখো তোমার আমার স্বপ্নটা ক্রমশ কেমন সিনেমা হয়ে যাচ্ছে …
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন