শনিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২২

রত্না দত্ত

                   


 বই - আমাদের পরমাত্মীয়

বই মানুষের চিরন্তন বিশ্বস্ত সঙ্গী।বই মানুষের জীবনকে করে তোলে আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক।মানুষের সুঅভ্যাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট হল বই পড়া এবং অন্যকে বই পড়ার উৎসাহ প্রদান করা।কেননা, বইপড়ার মাধ্যমে মানুষের মনে আসে আনন্দ - বেদনার কাব্যিক,দার্শনিক সত্যবোধ।
     শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের সহচর হিসেবে বই পূর্বপরিচিত।বই মানুষকে হাসতে শেখায়,কাঁদতে শেখায়,নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা যোগায়।শত শত কাগজের মাঝে সীমাহীন জ্ঞানকে মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে।এই বই দুরন্ত শিশুকে যেমন আনন্দের খোরাক জোগায় তেমনি মাঝবয়সী,প্রবীণ ও নবীনদের
আত্মতৃপ্তির স্বাদ আহরণের সুযোগ দেয়। বিস্তীর্ণ পৃথিবীর দুর্লভ সব কার্যসিদ্ধির ইতিহাস লিপিবদ্ধ থাকে বইএর পাতায় পাতায়।সেইসব কালজয়ী কাহিনী স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে বইএর পাতার প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে।সঙ্গীহীন বালকটিও অজান্তে বইকে সঙ্গী করে নেয়।প্রতিটি মানুষের কাছে নতুন বইএর মানে নতুন কিছু আবিষ্কার।তবে কৃত্রিমতার বিষাক্ত ছোবল জ্ঞানের আধার বইকেও রেহাই দেয়নি।ধ্বংসাত্মক জ্ঞান সম্বলিত বই মানুষের স্বাভাবিক চিত্তকে বিষিয়ে তোলে।বই যেমন অন্ধকার জীবনকে আলোকিত করে তেমনি আলোকিত জীবনকেও অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তুলতে পারে। তা সম্পূর্ণভাবে বই ও পাঠকের উপর নির্ভর করে।পাঠককে সচেতনতার সাথে বইএর মর্ম বা গুরুত্ব উপলব্ধি করা অত্যন্ত প্রয়োজন। তা না হলে সেটা ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
     বই হল জ্ঞানের আধার।মানুষের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত বন্ধু বই।বইএর পাতার কালো অক্ষরগুলিতে সঞ্চিত হয়ে আছে মানবজাতির হাজার বছরের জ্ঞানপ্রবাহ।জ্ঞানের ধারক হিসেবে বই অতীত ও বর্তমানের সংযোগ সেতু।
বই পড়া হল একটি নির্মল আনন্দের উৎস।বইপ্রেমী মানুষ মাত্রই বই পড়ার আনন্দ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।মানুষ যুগে যুগে বই পড়ার মাধ্যমে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছে,নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার জগৎকে বিস্তৃত ও প্রসারিত করেছে।মনের প্রসারতার জন্য বই পড়ার বিকল্প নেই।প্রাত্যহিক জীবনের দুঃখ - দুর্দশা,ক্লান্তি - হতাশা মানুষের মনকে যখন বিষিয়ে তোলে তখন বই পড়ার মাধ্যমেই পাওয়া যেতে পারে অপার্থিব আনন্দ।মনীষীদের জীবনীপাঠে তাঁদের বইপড়ার অভ্যাস ও মানস গঠনে এর প্রভাব সম্পর্কে আমরা অবগত হই। বিপুলা এই পৃথিবীকে জানার জন্য আমাদেরকে বইএর দ্বারস্থ হতে হবে।জ্ঞান - বিজ্ঞানের বিচিত্র শাখায় মানুষের ধ্যানধারণার যে প্রতিফলন ঘটেছে তা স্থান পেয়েছে বই এর পাতায়।ছোটবেলায় সমস্ত শিশুদের হাতেই দেখা যায় সেই বিশ্ববিখ্যাত ' সহজপাঠ ' ও ' বর্ণপরিচয় '। যার হাত ধরেই আমাদের সকলের শিক্ষার হাতেখড়ি।তাই যে বই হোক না কেন তাকে অস্বীকার করে আমাদের শিক্ষার পথকে প্রশস্ত করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।পরবর্তী ক্ষেত্রে সাহিত্যের রস আস্বাদন,বিজ্ঞানের বৈচিত্রময় জগতে অবাধ বিচরণ কিংবা ইতিহাস,দর্শন তথা জ্ঞানের যেকোন শাখায় বিচরণের একমাত্র বাহন হল বইপড়া।তবে পড়ার জন্য বই নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে।পাঠকের রুচি ও মানসিক পরিপক্কতার আলোকে বই নির্বাচন করতে হবে।শুধু নিজে বই পড়লেই হবে না আমার পাশের লোকটিকেও বই পড়ার জন্য অনুপ্রেরণা দিতে হবে।তার জন্য যেকোনো জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বা অন্য কোনো পার্টিতে উপহারস্বরূপ তার পছন্দের ভালো কোনো সাহিত্যিকের বা ভালো কোনো কবির লেখা ভালো বই দেওয়া যেতেই পারে।
একটি ভালো বই পাঠকমনের সর্বোচ্চ উৎকর্ষসাধন করতে পারে।অন্যদিকে একটি বাজে বই পাঠকের মনকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে পারে। সুনির্বাচিত বই পাঠ আনন্দ লাভের পাশাপাশি নিঃসঙ্গতা ঘোচানোর এক শ্রেষ্ঠ উপায়।বই পড়ার মাধ্যমে ঘরে বসেই আমরা বিশ্বের বিখ্যাত ও শ্রেষ্ঠ মনীষীদের সান্নিধ্য পেতে পারি,পরিচিত হতে পারি তাদের চিন্তা,চেতনার সঙ্গে।নশ্বর এই পৃথিবীতে অপার্থিব আনন্দ কেবল বই পড়াতেই পাওয়া যায়।
বই পড়া হল শ্রেষ্ঠ ও অত্যন্ত উপাদেয় একটি শখ।অতীত ঐতিহ্য,নানা চিন্তার অনুশীলন ও বিচিত্র ভাবধারার সাথে আমরা পরিচিত হই।বিচিত্র ধরণের বইএর মাধ্যমেই মানুষ নিজেকে চেনে,নিজেকে জানে,বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করে।সেইসব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ ব্যক্তিজীবন তথা সমাজ ও জাতীয় জীবনকে উন্নত করে,সমৃদ্ধ করে।প্রত্যেককে বই পড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করুন।আজ ইন্টারনেটের যুগে,ফেসবুক ও হোয়াটস অ্যাপ এর যুগে বই এর গুরুত্ব তলানিতে এসে ঠেকেছে।তাকে আবার জাগিয়ে তুলুন,একে অপরকে বই উপহার দিন।বই একটি অন্যতম উপহার সামগ্রীও হতে পারে। যার মাধ্যমে একে অপরকে বইপড়ার অনুপ্রেরণা দেওয়া যায়।বইপড়ার মাধ্যমে সার্বিক মনের দিগন্ত উন্মোচিত ও প্রসারিত হয়,উদার ও মহৎ হয়।যাবতীয় অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলে আমরা প্রত্যেকে বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রগতিশীল হতে পারি কেবলমাত্র ভালো বইএর সংস্পর্শে এসে।একারণে,পড়ার জন্য ভালো বই, আনন্দদায়ক বই আমাদেরকে বেছে নিতে হবে।তাই আমাদেরকে পাঠাগারে যেতে হবে।না থাকলে সমবেত প্রচেষ্টা চালিয়ে পাঠাগার গড়ে তুলতে হবে।বিশেষ করে আমাদের দেশ, জাতি ও সত্তাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের বই অবশ্যই আমাদেরকে পড়তে হবে ও অন্যকে পড়াতে হবে।
বই পড়লে আমাদের মনে জাগ্রত হবে মানবিক চেতনা,দেশপ্রেম,মহৎ জীবন ভাবনা,সত্য - সুন্দরের সাধনা, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি, সময়ানুশীলন ও অধ্যবসায়ের সুদৃঢ় মানসিকতা যা সুন্দর জীবন গঠনে,সমাজ গঠনে ও দেশ গঠনে উজ্জীবিত করে।তাই স্বশিক্ষা অর্জনে বা নিজেকে ও অন্যকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম।বই আমাদেরকে শোকে স্বান্তনা,দুঃখে দুঃখজয়ের ব্রত ও পরাজয়ে বা ব্যর্থতায় সহিষ্ণুতার দীক্ষা দেয়।নির্মল ও অকৃত্রিম আনন্দ লাভের অন্যতম হাতিয়ার হল বই।
ছোটবেলা থেকেই যদি একটি শিশুকে বিভিন্ন ধরণের কমিকসের বই,ঈশপের কাহিনীর বই,জাতক জাতিকাদের গলপকথার বই,হস্যকৌতুকের বই,বিভিন্ন ধরণের গল্প ও ছড়ার বই  এর সঙ্গে পরিচয় করানো যায় তাহলে আস্তে আস্তে সেই শিশুটির মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ ও মানসিকতা গড়ে উঠবে।পারিপার্শ্বিক ও বাহ্যিক জ্ঞানের বিকাশ ঘটানো সম্ভব হয়।ছোটো থেকেই তাকে মুঠোফোনের স্বপ্ন না দেখিয়ে একটি সুন্দর বউ যদি তার হাতে তুলে দেওয়া যায় তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্ম সুস্থ,সুন্দর পরিবেশে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে পারবে।তাই ছোট বড় থেকে শুরু করে আবাল - বৃদ্ধ - বনিতা সবাই আমরা অধিক পরিমাণে বই পাঠে আগ্রহী হব যা দিতে পরে এক সুন্দর ও সুস্থ ভবিষ্যত।



   

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন