রবিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২২

মিনাক্ষী ঘোষ

                      


কোল্হাপুর ডায়েরী ৬
কোল্হাপুর শহরটা আড়ে দৈর্ঘ্যে খুব বড় নয়। মিঃ বোসের বাড়িও খুব কাছেই। ঠিকানা ও ডিরেকশন মিলিয়ে
বাড়ি খুঁজে পেতে খুব একটা অসুবিধে হলোনা। এই অঞ্চলটা কোল্হাপুরের অন্যতম পশ এরিয়া। অনেক
ধনী লোকের  বাস এই অঞ্চলে। প্রায় সব বাংলো ধরণের বাড়ি।কোল্হাপুরে এসে মিমির আরো একটা
জিনিস নজরে পড়লো এখানে সব বাড়িতেই সবুজের খুব আধিক্য। বাংলোতে তো বটেই ছোট ফ্ল্যাটেও লোকে একটু হলেও সবুজ চারা রোপণ করে। উপত্যকা শহর হওয়ায় এখানে আবহাওয়া সারা বছর নাতিশীতোষ্ণ।
আরো একটা জিনিস মিমি লক্ষ্য করেছে প্রায় সব বাড়িতেই পোষ্য রয়েছে। বোঝা যায় এখানে সারমেয় প্রীতি
নিতান্ত অবহেলিত নয়।
কোল্হাপুর মহারাষ্ট্রের শ্যুগার বেল্ট হওয়ায় এখানে  পার ক্যাপিটা ইনকাম অনেক বেশী। বেশির ভাগ  লোকের অনেক খেতি জমি রয়েছে। মূলত আখের ফলন হয়। আখের চাষ খুব লাভজনক। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পয়সা উপার্জনের চিন্তা না থাকায় এখানকার জীবনযাত্রা
অন্যান্য বড় শহরের তুলনায় অনেক শ্লথ ।
বৌদির বাড়িতে পৌঁছে দেখলো সেখানে আরো বেশ কিছু বাঙালি পরিবারের সমাগম। একে একে সকলের সাথে আলাপ করিয়ে দিলেন বোসদা ও বৌদি।
আলাপ হলো ওনার পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গেও
ওনাদের পরিবারে ওনার ছেলে ছেলের বউ ও অবিবাহিতা মেয়ে রয়েছে। অনেকটা মিমির মতোই ছেলে বড় মেয়ে ছোট। ছেলে সদ্য বিবাহিত। ছেলের বউটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি মিশুকে স্বভাবের। মেয়েকেও ভারি মিষ্টি দেখতে। সকলেই খুব সহজ সরল আর আন্তরিক।
এই পরিবারটির সাথে ক্রমে ক্রমে হৃদ্যতা আরো বেড়েছে। সম্পর্কটা আর অফিসের চৌহদ্দির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি।বরং নিকটাত্মীয়ের রূপ নিয়েছে।
ওখানে পরিচয় হোলো আরো কিছু সম্ভ্রান্ত বাঙালী পরিবারের সাথে। প্রায় সবাই ওখানে অনেক বছর ধরে আছেন। মিশে গেছেন ওখানকার রীতিনীতি সংস্কৃতির সাথে। কোল্হাপুরের সংস্কৃতির নিজস্ব একটা স্বাতন্ত্র্য
আছে।মিমি ধীরে ধীরে তার পরিচয় পেয়েছে।
সেদিনের ঘরোয়া আড্ডায় ঠিক হোলো আগামী রবিবার সকলে মিলে পান্হালা যাওয়া হবে। বাঙালীরা সাধারনত আড্ডাপ্রবণ জাতি।প্রবাসে এই সম্মিলিত আড্ডার মেজাজটাই আলাদা। এর স্বাদও মিমির কাছে নতুনত্বের।
পান্হালা কোল্হাপুর শহর থেকে বাইশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি ছোট্ট পাহাড়ী শহর। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা 3177 কিলো মিটার।মহারাষ্ট্রের সর্বাপেক্ষা
ক্ষুদ্রতম শহর এইটি।প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে পান্হালার গুরুত্ব অপরিসীম।
বর্তমানে কোল্হাপুর মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিলের অন্তর্গত হওয়ায় এর রক্ষণাবেক্ষণে মহারাষ্ট্র সরকার যথেষ্ট যত্নশীল এর মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু পান্হালা দুর্গটি মারাঠা সাম্রাজ্যের ও ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের ঐতিহাসিক সাক্ষ্য বহন করে।
ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ তার বাল্যকাল ব্যতিরেকে পাঁচশত দিনের অধিক এই দুর্গে জীবন অতিবাহিত করেছেন।১৭৮২ থেকে১৮২৭ পর্যন্ত মারাঠা সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল পান্হালা।
কোল্হাপুর শহরের উত্তর পশ্চিমে কুড়ি কিলোমিটার দূরে সহ্যাদ্রি পর্বতের  বহির্স্তরে সমতল থেকে ৪০০মিটার উচ্চতায় পান্হালা দুর্গটি অবস্থিত।দাক্ষিনাত্যের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ দুর্গ হলো এইটি।
কূটনৈতিক কৌশলগত দিক থেকে ও এর গুরুত্ব অপরিসীম।এই দুর্গের প্রাকার থেকে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার প্রধান সড়ক যোগাযোগ পথগুলি নিরীক্ষণ
করা যেত। শুধু তাই নয়, এই দুর্গের প্রাকার থেকে সমগ্র উপত্যকাটি দৃষ্টিগোচর হয়।
১১৭৮ থেকে ১২০৯ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে নির্মিত এই দূর্গটি প্রথমে শীলহার রাজ ভোজের প্রসাশনিক কেন্দ্রস্থল ছিলো।  ষোড়শ শতাব্দীর প্রারম্ভে এটি কর্ণাটকের বিজাপুর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।  পরে মুঘলসম্রাট ঔরঙ্গজেব এটি করায়ত্ত করেন।এই দুর্গের উন্নতিসাধন প্রকল্পে মূলত আদিলশাহীর ভূমিকা অনস্বীকার্য।  ১৬৫৯ খ্রীষ্টাব্দে শিবাজী এটি দখল করেন।  পরে ১৬৮৯ খ্রীষ্টাব্দে
আওরঙ্গজেব পুনরায় এই দুর্গটি অধিকার করেন। তার অনেক পরে মহারাণী তারাবাঈয়ের অনুগামী রামচন্দ্র এটিকে নিজ অধিকারভুক্ত করেন ও কোল্হাপুরের  প্রশাসনিক আওতায় পান্হালাকে  নিয়ে আসা হয়।
১৮৪৪ খ্রীষ্টাব্দে এই দুর্গটি ব্রিটিশদের অধীনস্থ হয়।
ক্রমশঃ



 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন