.
কুঠুরি
ব্যাগের জিপ খুলে লাঞ্চবক্সটা বের করতে গিয়ে নীলার হাতে উঠে এল একটা ছাতা ! নীলের উপর গোলাপি অ্যাবস্ট্র্যাক্ট প্রিন্টে দারুণ সুন্দর ছাতাটা।
নতুন ছাতা বোঝাই যাচ্ছে কারণ প্রাইস ট্যাগ লাগানো আছে। এটা কোত্থেকে সমরের ব্যাগে এল ! ভুরু কুঁচকে খানিকক্ষণ ছাতাটার দিকে তাকিয়ে থাকল নীলা। সমর এসেই রোজকার অভ্যাস মতো স্নান করতে ঢুকে গেছে। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা অফিস থেকে ফিরেই স্নান করে । এমনিতেও এখন চৈত্রের শেষ , গরম জানান দিচ্ছে । সমরকে
নতুন ছাতা বোঝাই যাচ্ছে কারণ প্রাইস ট্যাগ লাগানো আছে। এটা কোত্থেকে সমরের ব্যাগে এল ! ভুরু কুঁচকে খানিকক্ষণ ছাতাটার দিকে তাকিয়ে থাকল নীলা। সমর এসেই রোজকার অভ্যাস মতো স্নান করতে ঢুকে গেছে। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা অফিস থেকে ফিরেই স্নান করে । এমনিতেও এখন চৈত্রের শেষ , গরম জানান দিচ্ছে । সমরকে
জিজ্ঞাসা করবে ছাতাটার কথা। ভুরু কুঁচকেই কিচেনে যায় নীলা। চায়ের জল বসায়, ডিম পেঁয়াজ কাঁচালঙ্কাকুচি এক চিমটি অরিগ্যানো ছড়িয়ে ফেটিয়ে নেয় । দরাজ হাতে চিজ গ্রেট করে দেয়। ফ্রাইং প্যানে সাদা তেল ঢালে। পাউরুটি স্লাইসগুলো ব্যাটারে ডুবিয়ে সাবধানে গরম তেলে ছাড়ে। ভাজতে ভাজতেই টের পায় সমর বেরিয়েছে বাথরুম থেকে। চটপট ট্রেতে চায়ের সরঞ্জাম টোস্ট দুরকম সস সাজিয়ে নীলা ড্রয়িংরুমে আসে । ততক্ষণে সমর খবরের চ্যানেল সার্ফিং শুরু করেছে ।এগ চিজ টোস্ট সমরের খুব পছন্দ। গোটা একটা স্লাইস মুখে পুরে চিবোতে শুরু করে দেয়।
চায়ে এক চুমুক দিয়ে আড়চোখে সমরের দিকে তাকায় নীলা।
-- তোমার ব্যাগে একটা ছাতা দেখলাম ,নতুন-- বলার ভঙ্গি একটু আলগোছ রাখে নীলা। তার কৌতূহল সমরকে বুঝতে দিতে চায় না।
মন দিয়ে চিলি সসে টোস্ট ডুবিয়ে তুলছিল সমর, থমকে গেল। কয়েক মুহূর্ত। তারপর হেসে উঠল- আরে হ্যাঁ। তোমার জন্যই তো কিনলাম। পুরনোটা শিক টিক খারাপ হয়ে গেছে বললে না সেদিন। আজ প্রবালের সঙ্গে বেরিয়ে গেছিলাম ঐ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। অফিসের কাছেই যেটা নতুন খুলল। কত কি রেখেছে ! প্রবাল একটা ইনডাকশন ইউজেবল ননস্টিক প্রেসার কুকার কিনল। আমিও ভাবলাম তোমার জন্য নিয়ে নিই কিছু ।
--বললে না তো ফিরে । আমি ব্যাগ খুলে...
--আরে ভুলে গেছি। এসেই তো স্নান করতে গেলাম ।
বলতাম ঠিকই । পছন্দ হয়েছে ? তোমার ফেভারিট কালার। বলত বলতে টিভির মধ্যে ঢুকে পড়ে সমর। হাইওয়ে তোলপাড় করে গাড়ি ছুটছে । ভিলেনকে তাড়া করছে হিরো।
নীলা কাপ টাপ সব সিঙ্কে রেখে চলে আসে ব্যালকনিতে। হাওয়া দিচ্ছে হালকা শিরশিরে। আরাম লাগছে । বেতের দোলনাটায় বসে ভাবে, ছাতাটা তার জন্য এনেছে সমর এটা কেন যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। এনেছেই যদি তো জিগ্যেস করতে হল কেন?
ঠোঁট কামড়ায় নীলা। অফিসের কৌশানী বলে মেয়েটাকে গত শীতের পিকনিকে দেখেছিল। চটকসুন্দরী থাকে না কেউ কেউ, সেরকম। ছলবলে খলবলে গায়ে পড়ামতো। ভালো লাগে নি নীলার। সমরদা সমরদা করছিল খুব। ওর জন্যই কেনেনি তো ছাতাটা ! অফিস থেকে বেরিয়ে কিনে রেখেছে কাল উপহার দেবে বলে। ভাবনাটা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে নীলার। বহুদিন হয়ে গেল সমর কোনও গিফট এনেছে মনে পড়ে না নীলার আর হঠাৎ আজকে...
উঁকি মেরে একবার দেখে নীলা। টকটকে লাল শাড়ি পরা লাস্যময়ী নায়িকা নাচছে । উন্মুক্ত নাভি ধবধবে নিটোল কোমর ফিনফিনে শাড়ির ফাঁকে দৃশ্যমান । সমর নিষ্পলক তাকিয়ে। কেমন শিউরে উঠল নীলা। চোখ ফিরিয়ে নিল। সন্ধেগুলো এভাবেই পেরিয়ে যায়। আগে বাবুইকে নিয়ে হুড়মুড় করে দিন কেটে যেত। ছেলে পিলানিতে চলে গেল। এখন এত অবসরে হাঁপ ধরে যায় নীলার। সকালটা তবু সমরের বেরনোর তাড়াহুড়ো, ভাত তরকারি মাছের ঝোল, হালকা টিফিন তৈরির ব্যস্ততায় একরকম চলে যায়। তারপর ফ্ল্যাটটাকে নির্জন দ্বীপের মতো লাগে । এগারোটা সাড়ে এগারোটায় বাসন্তী আসে। বাসন মাজা ঘর মোছার ফাঁকে ফাঁকে বকবক করে। মাতাল বরের মার খায় প্রতিদিন তবু কেন আঁকড়ে আছে, সতেরো বছুরে ছেলে এখনই বাপের পথ ধরেছে। তারও নেশাভাঙে ঝোঁক, বড় মেয়ের বিয়ের দেনা শোধের চিন্তা থেকে বি-টুয়েলভের দত্তগুপ্তদের শাশুড়ি বৌমার খিটিমিটি, সি-ফাইভের অশনি চৌধুরীর নতুন গাড়ি ঘুষের টাকায় কেনা এমন হাজারো কথা বাসন্তীর ভাঁড়ারে। নীলা বাধা দেয় না। এভাবেও তো নিঃসঙ্গতা কাটে কিছুটা কিন্তু সে আর কতক্ষণ। ঝপাঝপ কাজ সেরে দৌড়য় বাসন্তী। আবার নিঝুম ঠান্ডা চারপাশ। রাত সাতটা আটটা হয় সমর ফিরতে ফিরতে।
সমর ফিরলেই বা কি এমন আর উনিশ বিশ ? হুঃ!
চায়ে এক চুমুক দিয়ে আড়চোখে সমরের দিকে তাকায় নীলা।
-- তোমার ব্যাগে একটা ছাতা দেখলাম ,নতুন-- বলার ভঙ্গি একটু আলগোছ রাখে নীলা। তার কৌতূহল সমরকে বুঝতে দিতে চায় না।
মন দিয়ে চিলি সসে টোস্ট ডুবিয়ে তুলছিল সমর, থমকে গেল। কয়েক মুহূর্ত। তারপর হেসে উঠল- আরে হ্যাঁ। তোমার জন্যই তো কিনলাম। পুরনোটা শিক টিক খারাপ হয়ে গেছে বললে না সেদিন। আজ প্রবালের সঙ্গে বেরিয়ে গেছিলাম ঐ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। অফিসের কাছেই যেটা নতুন খুলল। কত কি রেখেছে ! প্রবাল একটা ইনডাকশন ইউজেবল ননস্টিক প্রেসার কুকার কিনল। আমিও ভাবলাম তোমার জন্য নিয়ে নিই কিছু ।
--বললে না তো ফিরে । আমি ব্যাগ খুলে...
--আরে ভুলে গেছি। এসেই তো স্নান করতে গেলাম ।
বলতাম ঠিকই । পছন্দ হয়েছে ? তোমার ফেভারিট কালার। বলত বলতে টিভির মধ্যে ঢুকে পড়ে সমর। হাইওয়ে তোলপাড় করে গাড়ি ছুটছে । ভিলেনকে তাড়া করছে হিরো।
নীলা কাপ টাপ সব সিঙ্কে রেখে চলে আসে ব্যালকনিতে। হাওয়া দিচ্ছে হালকা শিরশিরে। আরাম লাগছে । বেতের দোলনাটায় বসে ভাবে, ছাতাটা তার জন্য এনেছে সমর এটা কেন যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। এনেছেই যদি তো জিগ্যেস করতে হল কেন?
ঠোঁট কামড়ায় নীলা। অফিসের কৌশানী বলে মেয়েটাকে গত শীতের পিকনিকে দেখেছিল। চটকসুন্দরী থাকে না কেউ কেউ, সেরকম। ছলবলে খলবলে গায়ে পড়ামতো। ভালো লাগে নি নীলার। সমরদা সমরদা করছিল খুব। ওর জন্যই কেনেনি তো ছাতাটা ! অফিস থেকে বেরিয়ে কিনে রেখেছে কাল উপহার দেবে বলে। ভাবনাটা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে নীলার। বহুদিন হয়ে গেল সমর কোনও গিফট এনেছে মনে পড়ে না নীলার আর হঠাৎ আজকে...
উঁকি মেরে একবার দেখে নীলা। টকটকে লাল শাড়ি পরা লাস্যময়ী নায়িকা নাচছে । উন্মুক্ত নাভি ধবধবে নিটোল কোমর ফিনফিনে শাড়ির ফাঁকে দৃশ্যমান । সমর নিষ্পলক তাকিয়ে। কেমন শিউরে উঠল নীলা। চোখ ফিরিয়ে নিল। সন্ধেগুলো এভাবেই পেরিয়ে যায়। আগে বাবুইকে নিয়ে হুড়মুড় করে দিন কেটে যেত। ছেলে পিলানিতে চলে গেল। এখন এত অবসরে হাঁপ ধরে যায় নীলার। সকালটা তবু সমরের বেরনোর তাড়াহুড়ো, ভাত তরকারি মাছের ঝোল, হালকা টিফিন তৈরির ব্যস্ততায় একরকম চলে যায়। তারপর ফ্ল্যাটটাকে নির্জন দ্বীপের মতো লাগে । এগারোটা সাড়ে এগারোটায় বাসন্তী আসে। বাসন মাজা ঘর মোছার ফাঁকে ফাঁকে বকবক করে। মাতাল বরের মার খায় প্রতিদিন তবু কেন আঁকড়ে আছে, সতেরো বছুরে ছেলে এখনই বাপের পথ ধরেছে। তারও নেশাভাঙে ঝোঁক, বড় মেয়ের বিয়ের দেনা শোধের চিন্তা থেকে বি-টুয়েলভের দত্তগুপ্তদের শাশুড়ি বৌমার খিটিমিটি, সি-ফাইভের অশনি চৌধুরীর নতুন গাড়ি ঘুষের টাকায় কেনা এমন হাজারো কথা বাসন্তীর ভাঁড়ারে। নীলা বাধা দেয় না। এভাবেও তো নিঃসঙ্গতা কাটে কিছুটা কিন্তু সে আর কতক্ষণ। ঝপাঝপ কাজ সেরে দৌড়য় বাসন্তী। আবার নিঝুম ঠান্ডা চারপাশ। রাত সাতটা আটটা হয় সমর ফিরতে ফিরতে।
সমর ফিরলেই বা কি এমন আর উনিশ বিশ ? হুঃ!
চা খেতে খেতে টুকটাক কথা তারপর খবর সিনেমা নাহলে ফোনে হুমড়ি খেয়ে পড়ে । আজকাল বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজনের আসা যাওয়ার রেওয়াজ তো নেই তেমন। রাতেও সমর চটপট খেয়ে উঠে পড়ে। ফোন নিয়ে সোজা বিছানায়।
নীলা আস্তেসুস্থে খেয়ে এঁটো বাসন তোলে। ফ্রিজে বাড়তি খাবার গুছিয়ে রাখে। ভালো করে দুবার ডাইনিং টেবিল মোছে । কিচেন স্ল্যাব গ্যাস ওভেন পরিষ্কার করে । উড়ন্ত পর্দার ফাঁকে দেখে সমর ফোনে মশগুল , ওয়েব সিরিজের নেশা হয়েছে ইদানীং। নীলা কোলাপসিবল গেটের তালা মেরে জানলাগুলো টেনেটুনে দেখে। আলো নিভিয়ে বাথরুমে যায়।
আগে বারোমাস হুড়হড় করে জল ঢালত গায়ে । ঘষে ঘষে ফেনা তুলত সাবানের। ভুরভরে সুগন্ধ ছড়িয়ে যখন ঘরে আসত সমরের দৃষ্টির মুগ্ধতায় ছমছম করত নীলার শরীর। এখন রাতে গায়ে জল ঢাললেই চট করে ঠান্ডা লেগে যায়। অগত্যা মুখেচোখে জল দিয়ে পরিষ্কার নাইটি গলিয়ে নেওয়া। ততক্ষণে সমর ঘুমে তলিয়ে গেছে।
চুল আঁচড়ে বিনুনি করে শোয়ার অভ্যেসটুকু বজায় আছে আর কোনো পরিচর্যা করতে ইচ্ছেই করে না। মুখে ক্রিম লাগাতেও ক্লান্তি আসে। শুয়েও ঘুম আসে না অনেকক্ষণ। আকাশ পাতাল ভাবে। এপাশ ওপাশ করে। সমর একটুও নড়েচড়ে না , এত গভীর ঘুম! নীলার আজকাল সন্দেহ হয় ইচ্ছে করেই সমর সাড়াশব্দ করে না। পঁয়তাল্লিশ পেরোতে পেরোতেই নীলার আকর্ষণ কমে গেল ? ছেলের পড়া, স্কুল , সংসার নিয়ে নাটাঝাপটা খেতে খেতে চিবুকের ডৌল , টানটান ত্বকের ঢিলেঢালা হয়ে যাওয়াটা টের পায়নি তেমন করে। টের পায়নি সমরের এত আলগা হয়ে যাওয়াটাও।
বাবুই চলে যাওয়ার পর সম্পর্কের খোঁদলগুলো আরো বেশি চোখে পড়ছে । কৌশানীর মেসেজ চুপিচুপি দেখেছে নীলা। আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ কথোপকথন কিন্তু তলিয়ে ভাবলেই মাথাটা কেমন করতে থাকে। মাঝরাত পেরিয়ে চোখের পাতায় ঘুম নামে আর ঘুমের ভিতর ছেঁড়া ছেঁড়া অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখে। অজস্র ফেনিল বুদবুদ তখন যেন ঘিরে থাকে নীলাকে। স্বপ্নের মধ্যে আসে সমর কৌশানী । যন্ত্রণায় চৌচির হয়ে যায় নীলা । প্রচন্ড রাগে ফেটে পড়তে ইচ্ছে করে পরক্ষণেই সুখের ঢেউ ভাসিয়ে নিয়ে যায় নীলাকে।
অফিসের ব্যাগ সমরের হাতে দিয়ে সহজ গলায় বলে নীলা -- ছাতাটা ব্যাগে দিলাম । আগেরটা তো ঠিকই আছে। সারিয়ে নিলেই হবে। দেখ না এটা ফেরত নেয় যদি, তাহলে একটা ভালো কফি মাগ সেট নিও।
-- এজন্যই কিছু আনতে চাই না। রেখে দিতে পারতে, তা না...দেখি ফেরত হয় কিনা-- বিরক্তি দেখালেও যেন সমরের গলায় স্বস্তির ছোঁয়া।
সিঁড়িতে পায়ের শব্দ মিলিয়ে গেলে দরজা বন্ধ করে নীলা। ফোনটা হাতে নিয়ে কনট্যাক্ট লিস্টে যায়। প্রবালের নম্বর আছে তার কাছে। আলাপও আছে ভালই। ওকে জিগ্যেস করলে হয় কালকে ও সমরের সঙ্গে দোকানে গেছিল কিনা। তাহলেই ছাতার রহস্য পরিষ্কার হয়ে যাবে।
এসব ভাবতে ভাবতেই প্রবালের নম্বরে রিঙ করে ফেলল নীলা। চলতি হিন্দি গান বেজে উঠতেই টুক করে কেটে দিল ফোন । ইসসস ভাগ্যিস ফোনটা ধরে নি প্রবাল! এসব জিগ্যেস করলে কি জানি কি ভাবত ছেলেটা। নাহহ সত্যি মিথ্যের এই জটিলতায় ঢুকবে না নীলা। তার চেয়ে ওর মন যা ভাবে , ভাবতে চায় সেটাই সত্যি হয়ে থাক না । ঘুমের ভিতর নেমে আসা বুদবুদের অস্তিত্ব এখনও যেন অনুভব করতে পারে নীলা। থাকুক না, কৌশানি সমরের উদ্দামতার নীল গোলাপি স্বপ্নগুলো থাকুক নীলার মনকুঠুরির গোপন সুখ হয়ে।।
নীলা আস্তেসুস্থে খেয়ে এঁটো বাসন তোলে। ফ্রিজে বাড়তি খাবার গুছিয়ে রাখে। ভালো করে দুবার ডাইনিং টেবিল মোছে । কিচেন স্ল্যাব গ্যাস ওভেন পরিষ্কার করে । উড়ন্ত পর্দার ফাঁকে দেখে সমর ফোনে মশগুল , ওয়েব সিরিজের নেশা হয়েছে ইদানীং। নীলা কোলাপসিবল গেটের তালা মেরে জানলাগুলো টেনেটুনে দেখে। আলো নিভিয়ে বাথরুমে যায়।
আগে বারোমাস হুড়হড় করে জল ঢালত গায়ে । ঘষে ঘষে ফেনা তুলত সাবানের। ভুরভরে সুগন্ধ ছড়িয়ে যখন ঘরে আসত সমরের দৃষ্টির মুগ্ধতায় ছমছম করত নীলার শরীর। এখন রাতে গায়ে জল ঢাললেই চট করে ঠান্ডা লেগে যায়। অগত্যা মুখেচোখে জল দিয়ে পরিষ্কার নাইটি গলিয়ে নেওয়া। ততক্ষণে সমর ঘুমে তলিয়ে গেছে।
চুল আঁচড়ে বিনুনি করে শোয়ার অভ্যেসটুকু বজায় আছে আর কোনো পরিচর্যা করতে ইচ্ছেই করে না। মুখে ক্রিম লাগাতেও ক্লান্তি আসে। শুয়েও ঘুম আসে না অনেকক্ষণ। আকাশ পাতাল ভাবে। এপাশ ওপাশ করে। সমর একটুও নড়েচড়ে না , এত গভীর ঘুম! নীলার আজকাল সন্দেহ হয় ইচ্ছে করেই সমর সাড়াশব্দ করে না। পঁয়তাল্লিশ পেরোতে পেরোতেই নীলার আকর্ষণ কমে গেল ? ছেলের পড়া, স্কুল , সংসার নিয়ে নাটাঝাপটা খেতে খেতে চিবুকের ডৌল , টানটান ত্বকের ঢিলেঢালা হয়ে যাওয়াটা টের পায়নি তেমন করে। টের পায়নি সমরের এত আলগা হয়ে যাওয়াটাও।
বাবুই চলে যাওয়ার পর সম্পর্কের খোঁদলগুলো আরো বেশি চোখে পড়ছে । কৌশানীর মেসেজ চুপিচুপি দেখেছে নীলা। আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ কথোপকথন কিন্তু তলিয়ে ভাবলেই মাথাটা কেমন করতে থাকে। মাঝরাত পেরিয়ে চোখের পাতায় ঘুম নামে আর ঘুমের ভিতর ছেঁড়া ছেঁড়া অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখে। অজস্র ফেনিল বুদবুদ তখন যেন ঘিরে থাকে নীলাকে। স্বপ্নের মধ্যে আসে সমর কৌশানী । যন্ত্রণায় চৌচির হয়ে যায় নীলা । প্রচন্ড রাগে ফেটে পড়তে ইচ্ছে করে পরক্ষণেই সুখের ঢেউ ভাসিয়ে নিয়ে যায় নীলাকে।
-- এজন্যই কিছু আনতে চাই না। রেখে দিতে পারতে, তা না...দেখি ফেরত হয় কিনা-- বিরক্তি দেখালেও যেন সমরের গলায় স্বস্তির ছোঁয়া।
সিঁড়িতে পায়ের শব্দ মিলিয়ে গেলে দরজা বন্ধ করে নীলা। ফোনটা হাতে নিয়ে কনট্যাক্ট লিস্টে যায়। প্রবালের নম্বর আছে তার কাছে। আলাপও আছে ভালই। ওকে জিগ্যেস করলে হয় কালকে ও সমরের সঙ্গে দোকানে গেছিল কিনা। তাহলেই ছাতার রহস্য পরিষ্কার হয়ে যাবে।
এসব ভাবতে ভাবতেই প্রবালের নম্বরে রিঙ করে ফেলল নীলা। চলতি হিন্দি গান বেজে উঠতেই টুক করে কেটে দিল ফোন । ইসসস ভাগ্যিস ফোনটা ধরে নি প্রবাল! এসব জিগ্যেস করলে কি জানি কি ভাবত ছেলেটা। নাহহ সত্যি মিথ্যের এই জটিলতায় ঢুকবে না নীলা। তার চেয়ে ওর মন যা ভাবে , ভাবতে চায় সেটাই সত্যি হয়ে থাক না । ঘুমের ভিতর নেমে আসা বুদবুদের অস্তিত্ব এখনও যেন অনুভব করতে পারে নীলা। থাকুক না, কৌশানি সমরের উদ্দামতার নীল গোলাপি স্বপ্নগুলো থাকুক নীলার মনকুঠুরির গোপন সুখ হয়ে।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন