শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০

ভজন দত্ত

জানো দেবাশিস,
মাঠের সাইডলাইনে বসে আছি। ঘরকে যদি প্যাভিলিয়ন ভাবো,তবে ধরে নাও প্যাভিলিয়নেই বসে আছি প্যাড পরে। টিভিতে লাইভ দেখাচ্ছে খেলা। এত ফার্স্ট বোলিং হচ্ছে যে,পৃথিবীর বাঘা বাঘা সব  ব্যাটসম্যানরা ঘায়েল। ধরো,এক একটা ব্যাটসম্যানের নাম এক-একটা দেশের নামে। তারা যখন সব অসহায়, একের পর এক প্রতিদিন উইকেটে পতনের শব্দে হাড় হিম হয়ে যাচ্ছে ,স্কোর দেখছি না নির্বাচনী ফলাফল দেখছি, সব যখন ঘেঁটে ট, তখন মনের অবস্থা বুঝতেই পারছো! যেকোনো সময়,কারোর না কারো ডাক পড়তেই পারে। আমি প্যাড পরেই আছি। মাঝে মাঝে চার দেওয়ালের ভেতর রিচার্ডসের মতো ব্যাট ঘোরাচ্ছি, ওয়ার্ম আপ করছি, এক্ষুনি নামতে হলো বলে!নিজেকে তৈরি রাখছি। জানি আউটের কপাল! তায় আবার কিছু বুঝে ওঠার আগেই আউট হতে হবে যে খেলায়, সেই খেলায় নামার আগে তাই পিছনে তাকিয়ে দেখি বারবার। ওদের ভবিষ্যৎ ভেবে আকুল হই,বাজারে ভিড় বাড়িয়ে ইমিউনাউজেশন বাড়ানোর জন্য  প্রাণিজ প্রোটিন নাহোক, সাধারণ ডালভাত শাকসবজির আয়োজন করার চিন্তা করি। মোবাইলে খোঁজ নেয় দূরের বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনরা, 'মাঠে নামিনি এখনো' বলি ওদের। বলি,'ভালো আছি, ঘরে আছি'।
তারপর,মোবাইলের নেট অন করলেই হড়হড় করে জল ঢুকে। এখানে ওখানে উইকেট পতনের খবর,খেলার নিয়ম না মেনে বিশৃঙ্খলার খবর আসে।আইনের রক্ষকদের সভয়ে পলায়নের দৃশ্য দেখি, আর আসে এতএত লাইভ ও ভিডিও। বিশ্বাস করো,মানুষের যে এতএত প্রতিভা লুকিয়ে ছিলো জানতাম না এই লকডাউনে না পড়লে!কজনই বা দেখে সেসব!আমার সেসবের কিছুই দেখা হয় না,কত কত লেখা দেখি তার ভেতরে ঢোকা হয় না, আমি লাইক দিয়ে দিয়ে নিজের অস্তিত্ব,নিজের বেঁচে থাকা প্রবলভাবে জাহির করি।
ঘরের বইগুলো এর আগে কোনোদিন সময় পায়নি,আমাকে এভাবে দেখতে!ওর সব জুলজুল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে,ওদের গায়ে জমে আছে এত এত ধুলো না জীবাণু কেজানে!
খুব ইচ্ছে করে, ওদের স্যানিটাইজ না করি,একটু পরিষ্কার করে গুছিয়ে সুন্দরম করে তুলি।সত্যি বলছি,করা হয়না।একেকটা বই খুলে পাতার পর পাতা উল্টে যাই শুধু  পড়া হয়না। সেই কবে থেকে প্যাড পরে বসে আছি, কখন যে ডাক আসে কেজানে! 
জানো,দেবাশিস খুব পড়তে ইচ্ছে করে কিন্তু বেহায়া মন কিছুতেই সায় দেয় না। সে এসে আমার দুচোখের পাতায় দুদণ্ড বসে না। আমার  পড়া হয় না। এই প্যাড,হেলমেট,গ্লাভস, ব্যাট যদি একবার  নামিয়ে রাখতে পারতাম তবে হয়তো....


1 টি মন্তব্য: