শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০

সুতপা সরকার (দিল্লি)


উপসংহারে
---------------

ভোরবেলা যখন আলতো রোদ চুমু খায় শোবার ঘরের লাগোয়া 
বারান্দায় স্নান সেরে রিক্তা এক কাপ চা বসিয়ে দেয় কেটলীতে।।
কেটলীর সোঁ সোঁ আওয়াজে তার অনমনা মন ছ্যাঁকা খেয়ে
বাস্তবে ফিরে আসে। তারপর কড়া চায়ের লিকার যেই জিভ
ছুঁয়ে গলায় নামে ঝিমঝিমে মন একেবারে প্রাত্যহিকীতে ডুবে
যায়। চার বার্নার গ্যাসে ভাত, ডাল টোস্ট ওমলেট স্যাটাস্যাট রেডি। ডাইনিং টেবিলে যান্ত্রিক হাত সাজিয়ে ফেলে ব্রেকফাষ্ট
লাঞ্চ বক্স। এক পর্ব শেষ হতে না হতেই নিখুঁত আনাজ কাটা 
বাজার ঘুরে ব্যংক, ইন্সুরেন্স প্রিমিয়াম জমা দিয়ে শাশুড়ির
নিরামিষ রান্নায় লেগে পড়া। শাকভাজা, সুক্তো থেকে মায়
জলপাইয়ের জমজমে চাটনি রেডি। খুদীর মায়ের ভাত বেড়ে
রান্নার বাসন সিঙ্কে নামিয়ে ছেলেমেয়ে আনতে দৌড়। বাড়ী
ফিরে তাদের খাইয়ে ঘুম পাড়ানো অবধি সে বেশ থাকে। তারপর
যেই ঘন্টাকালীন অবসর মেলে সেই বিজন মুহুর্ত গুলোকে সে
বড় ভয় পায়। বুকের মাঝখান থেকে কে যেন হাতছানি দেয়
জানলার ওপারের মুক্ত আকাশে। কাঠঠোকরা খুট খুট করে
তার বুক ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। তাই ফের ওঠে 
অকারণে  ফার্ণিচার মোছে উবুড় করা বাসন গুলো
মুছে মুছে আরো চকচকে করে  ।  বিকেলে কলেজলএলে সে তার সেই পাখিডাকা নরম কুহেলিকা থেকে ফিরে আসতে ফের গা ধুয়ে
নেয়। জলচ্ছবি হয়ে  মুছে যায় উঁকি দেওয়া অঙ্কুরেরা।  

তাওয়ায় গরম রুটি সেঁকে চোখ লাল করে। আর যখন সেটা
গোল হয়ে ফুলে ওঠে ভাবে তারো তো এমনি ফুলে ওঠার কথা
ছিল। নাঃ সেসব ভাবতে নেই। ঘষা কাঁচের আয়নায় মুখ দেখাই
শ্রেয়।।সংসারে  শ্রী বজায় থাকে।  গড্ডালিকা য় ভাসিয়ে
দেওয়ার নাম নাকি জীবন!! তল মেলে না অতল ঢেউয়ের। মনে
হয় সে ডুবে যাচ্ছে স্যঁতস্যঁতে শ্যাওলায় আর পদ্মটি নাছোড়বান্দা 
কালো জলে ডুবসাঁতারে।

অতঃপর  সেই ঘন রাত আসে। বাতাবী গাছের পাতায় চাঁদ আলো
ছড়ায়। পেঁচাচোখ  নিম গাছে বসে দেখে  জ্যোৎস্নায় ভরে যায়
রাতের শরীর। ডাক্তার বোসের দেওয়া ঘুমের ওষুধ কাজ করে না।
তেতো হয়ে যাওয়া দাম্পত্য শুয়ে থাকে পাশবালিশের ভাগাভাগি তে। কথা দিয়েছিল সুপ্রতিম কে সে আর কলম ছোঁবে না। 

পারে না। মুখোশ ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে তার আমিত্ব। বুকের বোতাম
গুলো পট প ট করে ছিঁড়ে যায়। ঈশ্বর কড়া নাড়েন।  
অন্তর্দ্বন্দ্ব  চুকিয়ে তার সত্তা প্রকাশিত হয়। সেই ঝগড়ার পর থেকে পাতা না উল্টোনো হলুদ খাতাটায়
ভুবন ডাঙার মেয়ে নদী পার হয় চাঁদ তারা মাখে।  আনখশির কল্প জগতে ডুবে কবিতা লেখে। 
জল বাতাসা দেয় উপবাসী ঈশ্বরকে নৈবেদ্যে। আঃ কী তৃপ্তি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন