শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০

রঞ্জনা বসু



বৈশাখ মাসের রোদে গা পুড়িয়ে নাজিমা আলপথ ধরে হাঁটছে ।চারাগাছ বুকে নিয়ে পড়ে আছে 
বিশাল প্রান্তর । কয়েক মাস বাদেই ফসলে ভরে উঠবে মাঠ।
নাজিমারও এখন ভরা মাস।
ভারী শরীরটা টেনে নিয়ে চলেছে ।
তাড়াতাড়ি পা চালাতে কষ্ট হয় ।

আরও কিছু পথ গেলে তবে পৌছাতে পারবে । বাড়ির কথা মনে হতেই নাজিমার বুকের ধরপরানি বাড়ে। এলোমেলো পা চালাতে গিয়ে মুথো ঘাসের খোঁচা 
খেয়ে কাতরায় । তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ ।

নাজিমা আকাশের দিকে মুখ তুলে চায় । মনে মনে ভাবে 
আজ দেড়মাস হয়ে গেল মজিদের কোন খবর নেই ।
ছ’মাস আগে গাঁয়ের আর পাঁচজনের সাথে সুরাট গেল কাজের তাগিদে । ঘরে বসে সংসার চলেনা, শুনেছে ওখানে রোজগার ভাল । পোয়াতি বউকে রেখে মন চায়নি যেতে । কিন্তু টাকার দরকার । রোজগার না থাকলে খাবে কি?
এদিকে কতদিন যাবৎ করোনা আতঙ্কে লকডাউন হয়ে পড়ে আছে দেশ । সব যেন এলোমেলো হয়ে গেছে ।
দুদিন আগে নিতাইয়ের বৌটাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে পারেনি ।
বাড়ি ফিরে এসেছে ।
এইসব কথা মনে হতেই নাজিমার চোখ ছল ছল করে ওঠে ।কখন বাড়ির উঠোনে পা রেখেছে খেয়াল করেনি ।

মেয়েকে দেখে আমিরুন বিবি আনন্দে আপ্লুত হয়ে নাজিমার মুখে গালে চুমু খেতে খেতে বলে ভালো করছো, আগে আগে আইয়া পড়ছো । চিন্তার কিছু নাই, আমি তো আছি ।

কপালের চুল সরাতে সরাতে নাজিমা ভাবে, আমার আম্মুর হাতে কত শিশুর জন্ম হল ।তারা সবাই হেসে খেলে বড়ো হলো ।যদিও আজকাল সবাই হাসপাতালেই যায় ।নাজিমা ওর ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দেয় ।
আমিরুন বিবি বুঝতে পারে হাতে বেশি সময় নেই । সদরে যেতে হলে একটা গাড়ি দরকার 
হাজার চেষ্টা করেও সম্ভব হয় না ।
সেই রাতেই এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্মদেয় নাজিমা। আমিরুন বিবি নাতনির নাম রাখে করুনা ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন