শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০

পৌলমী ভট্টাচার্য

গল্প_অভিমান 

    
      খুব সাদামাটা জীবন ধারণের ছকে নিজেকে জড়ানো এই ভদ্রলোক, পেশায়  সঙ্গীতের শিক্ষক। সঙ্গীত জগতে নাম ডাকের অভাব ছিল না। চাকরি ছেড়ে শখ কেই বেছেছিলেন পেশা হিসেবে। বেখেয়াল মানুষ টার মাথায় অপর একটা জীবনের ভার এসে পড়ে হঠাৎ ই।পরিবার রক্ষার্থে মরিয়া হয়ে ওঠা তখন থেকে। নিশ্চিন্ত বাঁচাতে পড়ল ছেদ। পরিবারের সাথে স্বতস্ফূর্ত ভাবে গলা মেলাতে ভয় পেত বোকা লোক টা ; ভয় পেত নিজের গুণ কে মেলে ধরতে বাইরের জগতে।বয়সের কাছে এক সময় হার স্বীকার করতে গিয়ে স্তিমিত হয়ে আসে কণ্ঠ। এই অবরোধ হ'ল তাঁর জীবনে কাল।
              আকাশের তলায় কত প্রদীপ জ্বলে উঠেছে। ঘরে ঘরে দীপান্বিতার শুভ সূচনা।নিজে হাতে সকালেই পুজো করেছিলেন সেদিন, মন ভালো নেই তাঁর। শরীর অবাধ্যতা করছে। 
 -----  বাঁচতে ইচ্ছে করলেও লড়াই করতে ইচ্ছে করে না আর,,,
 ------  কেন এসব কথা বাবা? 
           দীর্ঘশ্বাস প্রসারিত করে হাহুতাশের সুর ছিল ভদ্রলোকের গলায়। সম্ভবত মানুষ টা জীবনের ওপর লকডাউন শুরু করতে চেয়েছিলেন। স্ত্রী, সন্তানের তাগিদে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলেন হাসপাতাল থেকে, পারেন নি।হৃদযন্র লকডাউন ডেকেছিল। বোকা অভিমানী মেয়ে ওর বাবার রোদে আছড়ানো নিথর দেহ কে আগলাতে চেয়েছিল আপ্রাণ ভাবে, কেউ আমল দেয়নি ; ডেডবডি কিনা। জোর করে ওর থেকে বাবা কে কেড়ে নিয়েছিল পৌষ মাস। বাবার অসম্ভব পছন্দের ছিল রকমারি পারফিউম ,সেদিন ও সুগন্ধি ধূপ, আতর, রজনীগন্ধায় সুসজ্জিত হয়েছিল। 

---- বাবা বলেছিল, দেখবি আমি রাজার মতো মরবো, তোদের কষ্ট দেব না। 
ঠিকই বলতো বোকা লোক টা। বোকা লোক টার মেয়ে ও একই গোত্রের। অভিমানের চাদরে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিল আজন্ম কাল। শব্দকোষে এ শব্দের ইংরেজি অনুবাদ হয় না, তাতে কি? রবিঠাকুর রচিত ইংরেজি শব্দগুলো আছে না  ! 
--- "টরচারড্ এক্সপ্রেশন অফ উনডেড ভ্যানিটি " ,,,, 
মনকাড়া শব্দগুলো কে নিয়ে খেলা করত মেয়ে টা কেবল। কী দুর্ভাগ্য! এখানে ও মেয়েটার অভিমানের লকডাউন শুরু হয়েছিল বাবার মৃত্যুর সময় থেকে। সময় যেতে থাকা ঘড়িটার মৃত্যু ঘটেছিল; লকডাউন হয়েছিল ,শেষ হয় নি এখনো। একটা জীবনে কত বিষয় ভিত্তিক লকডাউন আসে, তাই না  ?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন