শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০

সিলভিয়া ঘোষ

অভ্যাস বদল
--------------------

 সিলিং ফ্যানের গুলোর গায়ে লেগে আছে   কত জন্মের ধুলো, মাকড়সার জাল বিস্তার  করেছে দেওয়ালে টাঙানো পুরস্কার প্রাপ্ত ফটোগুলির গায়ে।
        তবে আগেও কি  সব এমনই ঝাঁ চকচকে ছিল ?না তা কখনই নয়, কিন্তু যে জিনিসটা ছিল তা খুঁজে  বেড়ায় অনন্য রায়।
   ইলেভেনে পড়া যে মেয়ে বেলা ৯ টার আগে ঘুম থেকে ওঠেনা,  সেই  কি না আজ সকাল  থেকে রান্না ঘরে ! অন্তরা  রান্না করে এনে দিচ্ছে  বাবা ,দাদা কে! মায়ের হাতে সকালের খাবার  খেতেই  যে ছেলেটা আজীবন অভ্যস্ত, সে মুখটা হা করেই বলে ওঠে,  'অনু  একদম  দূরে  সরে যা, কেমন গা গুলিয়ে উঠছে,  আমি খেতে পারব না'!  কথা শেষ হতেই বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্টুডেন্ট অন্তর।
           আপাত দৃষ্টিতে যিনি উদাসীন, শান্ত, বেখেয়ালী মানুষ, মিনিটে মিনিটে  চা চাওয়া যার বাতিক, তিনি কেবল ঘরময় ছড়িয়ে  ছিটিয়ে থাকা শাড়ি,  ব্লাউজ , নাইটি,  চুরিদারে হাত বুলাচ্ছেন  আর নাকের কাছে সব ধরে নিয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিচ্ছেন  যা  একসময় অভ্যেস ছিল অনন্যার। তার স্ত্রীর।
        বারো বছর বিছানায় পড়ে থাকা একটা প্রাণ যার সঙ্গী ছিল চব্বিশ ঘণ্টার , ঐ ফ্রেমে বাঁধানো মানুষ টা, যে কি না এক আধদিন বিছানা নোংড়া হলে বলে উঠত 'আর কতদিন এভাবে জ্বালাবেন,  এবার মুক্তি দিন'..তারও দুচোখের গোড়া দিয়ে গড়িয়ে পড়ে জল। মনে মনে বলেন ভগবান আর কথা নিষ্ঠুর হবে তুমি! মা হয়ে  লক্ষ্মীহীন ছেলের সংসারে জঞ্জালের মতোন পড়ে আছি অথচ আমার ঘরের লক্ষ্মী কে তুমি এভাবে কাছে টেনে নিলে! আমার মুক্তি আর কবে দেবে...!
ঠাকুর ঘরের লাল সাদা গরদের শাড়ীটা থেকে এখনও ধূপ ধূনোর গন্ধ বের হয়। মাঝে মাঝে  অরণ্য বাবু সকলের দৃষ্টিগোচরে তার ঘ্রাণ নিয়ে থাকেন। টের পান যেন পাশেই স্ত্রী অনন্যা রয়েছেন।

২টি মন্তব্য: