#একমুঠো_ভাত
-ওমা মা,মা গো আর একমুঠো ভাত দাও না গো,শুন্য থালা আর একরাশ অবিন্যস্থ চুলে মাথা ঝাঁকিয়ে বছর আটেকের অনন্ত মাকে শুধায়।রূক্ষ চুলে একমাথা সিঁদুর পরে সামনে এসে দাঁড়ায় কণিকা।এ কদিনে যেন আরও শুকিয়ে গেছে সে।অমন কোমর ছাপানো চুলে আর ঢেউ খেলে না।মুখের হাসি মলিন হয়ে গেছে।সেদিনের ক্লাব থেকে পাওয়া চার কেজি চালের অবশিষ্টাংশ দিয়েই আজ হাড়ি চরিয়েছে।অনন্তর একারই কোনোমতে হবে।
ও আর অনন্তর বাবা দুজনে শুকনো মুড়ি জলে ভিজিয়ে খাবার মনস্থ হাঁড়ি কাছিয়ে ভাত দিয়েছিল কণিকা।একটা দানাও হাঁড়িতে নেই।আবার ছেলেটা ভাতের কথা বললে পেটের আগুনটা মুখে জ্বলে উঠলো।
বলে ওঠে, শুধু খাই আর খাই।আমার মাথা খা,হাড়হাভাতে ছেলে।
অনন্ত ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে।সারাদিন পর শুধু একমুঠো ভাত।তাও মা বলে শুধু খাই খাই!অনন্তর আজ সকাল থেকে কতই না ক্ষিদে পেয়েছে,কেবলই কুঁজোটা থেকে জল নিয়ে খেয়েছে।
কাশতে কাশতে বিছানা ছেড়ে উঠে আসে অসীম,অনন্তর বাবা,ফুটপাতের এক সামান্য কাপড় বিক্রেতা।কদিন ধরে কাশিটা বড়ো বেড়েছে। লকডাউনের আগের মাসেই পাড়ার কোয়াক ডাক্তার রূপক দেব বলেছিল,
অসীম এবার কফটা পরীক্ষা করে নে।কাশিটা ভালো ঠেকছে না।ভেবেছিল চৈত্র সেলে বিক্রি বাটা হলে হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষাটা করেই নেবে।হাসপাতালে বিনা পয়সায় পরীক্ষা আর ওষুধ পেলেও যদি রিপোর্টটা খারাপ আসে।তাই ভয়ের চোটে সে পথ মাড়ায় নি অসীম।আর কণিকাকেও সব কথা চেপে গেছে।
ওকে আর মুখ কোরো না কণি, ওর কি দোষ বলো,পেট কি শুনবে মনের জ্বালা-অসীমের কথায় কণিকার পাথরের মতো কঠিন মুখে ঝর্ণার ফল্গুধারা নেমে আসে।অনন্তকে জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কাঁদতে থাকে সে।হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ানোর আওয়াজ আসে।এঁটো হাতেই অনন্ত দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখে পাশের বাড়ির সোমা কাকিমা টিফিন বক্সে গরম ভাত আর সব্জী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন