শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০

সঞ্জীব কুমার


आरज़ू
>>>>>

খিলখিলিয়ে উঠলো মেয়েটা - "শোনো,  বয়স হয়েছে তোমার, পাগলামী কোর না...."

" কি? বয়স নিয়ে খোঁটা? অপমান! অপমান! ধরণী দ্বিধা হও....না থাক দ্বিধা হয়ে কাজ নেই....তবে এই অপমানের জবাব আমি দেবোই এবং সেটা এক্ষুণি।" - বলেই ছেলেটা থুরী লোকটা থুরী বুড়োটা জ্যাকেট খুলে ফেললো - তারপর জামা - তারপর গেঞ্জি -  অতঃপর খালি গা। 

চমৎকার দেখাচ্ছে লোকটাকে! একমাথা কাঁচাপাকা চুল - পাঁচদিনের বেড়ে ওঠা সুগার অ্যান্ড পেপার দাড়ি - গোঁফ, গায়ে সামান্য মেদ, জিন্স থেকে ঝুলতে থাকা রোদচশমা, পায়ে ডিঙ্গো, মুখে সিগারেট। শুধু গলায় একটা গীটার ঝুলিয়ে দিলেই....!

" অ্যাই কি করছো? পাগল হলে নাকি? এই ঠান্ডায়......." 

" ঠান্ডা? কোথায় ঠান্ডা? তুমি টের পাচ্ছো না আমার রক্তের স্রোত ছুঁয়ে বসে আছো তুমি?আমার দৃষ্টির উষ্ণতার আঁচ পাচ্ছো না তুমি? বলো - টের পাচ্ছো না, আমার উজার হয়ে যাওয়া জীবনে তোমার উপস্হিতির উষ্ণতা? টের পাচ্ছো না এই রাত ধীরে ধীরে উষ্ণ হয়ে  উঠছে? পাচ্ছো না - না? কি করে পাবে? তুমি যে আবার ভয় পেয়েছো - নিজেকে হারানোর ভয় - আমায় হারানোর ভয়।  
 
শোনো!  তুমি বরং আরো একটু তফাতে গিয়ে দাঁড়াও! কিছুক্ষণ আগে বলছিলে না - আমার বয়স হয়েছে - আমি বুড়ো হয়েছি - তাহলে যাওয়ার আগে দেখিয়েই যাই বুড়ো হাড়ের ভেল্কিটা! তফাৎ যাও!"

লোকটার চোখমুখ কেমন যেন বদলে গেছে! গলার স্বরে কিছুক্ষণ আগের ঠাট্টা আর নেই - লোকটা যেন আদেশ করতে শুরু করেছে এবার। এ কি পাগলামী? এমনিতেই শীতের পাহাড়ী পথ শুনশান - একটা গাড়িটাড়ীরও দেখা নেই - তারমধ্যে ঠাট্টা তামাশা করতে করতে এই বিপত্তি। মেয়েটা ভয়ে পেয়ে এবার সত্যিই একটু সরে এলো - তবে পাহাড়ের দিকে নয় - খাদের দিকটাতে!

লোকটা চেঁচিয়ে আর একবার আদেশ দিলো " ব্যাস! থামো! আর এক পা'ও পিছিও না! ঐ পাথরটার ওপর বোসো! দেখতে পাচ্ছো আমায়?" 

মাথার ওপর তারা ভরা আকাশ - চতুর্দশীর আলো - চারপাশে বরফে বরফে সাদা হয়ে যাওয়া পাহাড় রাজি - কেন দেখা যাবে না? বেশ দেখা যাচ্ছে ঐ মূর্তিমান বিভীষিকা!   

পাথরটার ওপর বসলো মেয়েটা! পায়ের ওপর পা তুলে! উদ্ধত সেই বসার ভঙ্গী যেন ব'লে দিচ্ছিল " বেশ বসলাম! এবার দেখাও হে পুরুষ - তুমি কেমন রোডোডেনড্রন হয়ে উঠতে পারো, দেখি!" 

" অলরাইট্! রেডী?" লোকটা হঠাৎ রাস্তার মাঝখানে চিত হয়ে শুয়ে পড়লো - মাথার নীচে গুঁজে দিল দুহাত - পায়ের ওপর পা - ডিঙ্গোতে তাল ঠুকতে ঠুকতে গলা ছাড়লো -
    
ये रातें.... ये मौसम.....नदी का किनारा
ये चंचल हवा......
कहा दो दिलों ने की मिल कर
कभी हम ना होंगे जुदा.......
 
গাইতে গাইতে উল্টে গিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে  এগোচ্ছে লোকটা - নিষ্পলক চোখে উঁকি দিচ্ছে এক বন্য দৃষ্টি..... নিশ্বাস গভীর.... মেয়েটা আবার হেসে উঠলো .... ক্রমে হাসি ফিকে হয়ে আসছে....এগিয়ে আসছে শরীরটা.....

सितारों की मेहफिल ने कर के इशारा
कहा अब तो सारा जहाँ है तुम्हारा.........

ঠিক এমন সময়ে ওপরের রাস্তা থেকে কর্কশ ব্রেক কষার শব্দ! বেশ কিছুটা পিছলে গিয়ে গাড়ীটা কোনরকমে থামাতে পেরেছে চালক! নেশা ছুটে গেছে - ঘুম উড়ে গেছে তার - হেডলাইটের আলোয় সে দেখছে পাহাড় থেকে ধীরে ধীরে শরীরের অর্ধেকটা নেমে আসছে - আর রাস্তাটাকে মাঝখান থেকে চিরে বাকি অর্ধেক শরীর নিয়ে ময়ালটা প্রায় পৌঁছে গেছে পাথরে বসে থাকা মেয়েটার পায়ের কাছে......

কাটা জিভটা বেরিয়ে আসছে ক্ষণেক্ষণে আর মেয়েটার পা চেটে জিভটা ঢুকে যাচ্ছে মুখের ভেতর - হেডলাইটের আলো পাত্তা না দিয়ে এবার ময়ালটা ক্রমশ উঠে দাঁড়াচ্ছে - মেয়েটা তখনো হাসছে - অলৌকিক অর্কেস্ট্রায় গান বাজছে পাহাড় জুড়ে - সাপটা তার প্রকান্ড শরীর নিয়ে সোজা উঠে দাঁড়িয়েছে - ওর মুখ মেয়েটার মুখের সামনে - একদম সামনে - সুরের তরঙ্গে একটু একটু একটু দুলছে প্রকান্ড ময়াল- নিষ্পলক দৃষ্টিতে - মেয়েটার চোখে চোখ রেখে।

তবে.......

প্রতিবারের মতো এবারেও মেয়েটা সাপটার ঠোঁটে ঠোঁট রাখার সুযোগ পাবে না - ঠিক তার আগেই প্রচন্ড শব্দে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুটে আসবে - গুলিবিদ্ধ শরীরটাকে জড়িয়ে ধরে মেয়েটা প্রচন্ড আক্রোশে আর একবার তাকাবে মানুষগুলোর দিকে - তারপর শেষবারের মতো প্রকান্ড মৃত শরীরটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে ডানা মেলে উড়ে যাবে - তবে এবার সে উড়ে যাবে সেই পৃথিবীর দিকে যেখানে কোনও মানুষ থাকে না - যেখানে আলো নেভে না কোনদিন। 
___________ 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন