শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০

তনিমা হাজরা


#ভালো_থাকিস_তুই


নাওএর উপর ছই, 
সাইদুল, যাস রে কোথায় তুই, 
পেরিয়ে কালবোশেখির ঝড়, 
মাঝি, তুই সাবধানে যাস ঘর।

নদীর জলে ঢেউ, 
মাঝির মনে ভাসে কেউ, 
অপূর্ব এক জুটি,
যেন বকমবকম বিহঙ্গম সে দুটি, 
কলকল হাসি, 
দু'জন পাশাপাশি।। 

বড্ড মন কাড়া,
ভাবতে বসে মাঝি,
কেমন আছে তারা??

সবাই তো নাও এ চড়ে,
ক'জন মাঝির খবর করে, 
মাঝির বসত ঘর, 
মাঝির প্রাণের স্বর,
মাঝির ডাইল-ভাত, 
মাঝির সন্ততি অঙ্গজাত,
কিছু তুচ্ছ কথায় মাখা,
উপহারের নামমাত্র টাকা,
তাতেই মাঝি পুষে রাখে ভালবাসার ঋণ,
একটি স্মৃতিমেদুর দিন।।

তাই তো  মাঝির মন,
আজ বিষম উচাটন, 
মারী যে চারদিক, 
রমজানে রাখে তৌফিক 
মাঝি তুই কেমন করে হলি
তাদের এমন অক্ষয় রফিক। 

আপন বলে কাকে,
যে ব্যথায় খবর রাখে, 
বাজে মাঝির চলভাষ, 
তার কন্ঠে দুশ্চিন্তার ত্রাস।

ওরা জানতে পারে, 
ওদের কথা মাঝির প্রায়ই বড্ড মনে পড়ে, 
হে মন, এ উতল দরিয়ায়
 কি করে কে যে কার আপন,
অহো! কী অমর্ত্য এ ক্ষণ, 
কী অপার্থিব এ বন্ধন, 
কথার গায়ে টুপটুপিয়ে
 কথারা সব ঝরে, 
 ঝাপসা অশ্রুভারে,
 দুখের ভাগ নিলে তা কমে, 
 সুখের ভাগ নিলে তা বাড়ে 
মাঝি, জানবি তুইও ওদের আপন 
তোর এমন সরল প্রাণের 
জোয়ার ভালবাসায় 
লাগলো মননদীতে পূর্ণমাসীর জোছনা-রজত কাঁপন।।

নাওএর উপর ছই, 
সাইদুল, এখন কোন গাঙে রে তুই, 
পেরিয়ে কালবোশেখির ঝড়, 
দোয়া রাখি, 
বন্ধু, যেনো প্রত্যহ সাবধানে তুই ফিরিস নিজের ঘর।। ত নি মা।। 

শব্দার্থঃ 
রমজান- কলুষদহনকারী অগ্নি
তৌফিক - সম্প্রীতি
রফিক -বন্ধু, প্রাণপ্রিয়  ।।।ত নি মা।।

#দেবতার_কান্না 


আচ্ছা তোমাদের সেইসব নানা ধর্মের নানা নামের দেবতারা সব কেমন আছেন এখন,
একবার নিতে চাই ভাই খোঁজ। 

সেই যাঁরা সকাল থেকে নানা উপাচারে  তোমাদের বাধ্য হয়ে ফুলে, দীপে সেজে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করতেন  রোজ।।

তোমরা তাঁদের সামনে যাবে,
 ধূপ দেবে, ধুনো দেবে, ফল দেবে, ফুল দেবে, মোমবাতি দেবে, চাদর চড়াবে, মাথা ঠুকে প্রণামী বাক্সে  ঘুষ দেবে নিজেদের ষোলো আনা ভালো হোক এই প্রার্থনায় ।।

তারপর, স্তবের স্তবকে স্তবকে  বিবিধ ধর্মস্থানগুলি মুখরিত হবে বিবিধ ধর্মগীতিকায়।। 

 দেখো কি পরিমাণ অসহ্য হয়েছো এই সামান্য কদিনের বন্দীত্ব সহ্য করে, 
সেইসব স্বরচিত দেবতাদের কথা ভাবো তো একবার দয়া করে, 
 কেমন আবদ্ধ তারা  চিরকাল তোমাদের যোগ ও সাজশে বদ্ধ গর্ভগৃহে ধর্মকুটিরে, কুটিরে। 

ডাকছে বিপন্ন মানুষ এতবার এত করে, 
তবুও মানুষের ভিড়ে, 
এসে দাঁড়াতে দাওনি তাঁদের নিজেদের ক্ষুদ্রতাদোষে, 
বেঁধে রেখে দিয়েছ তাঁদের কষে, 
মন্দিরে, মসজিদে, গীর্জায়, 
লাগতে দাওনি ধূলো দেবতার পায়, 
চড়িয়ে রেখেছ বাহারী পোশাক সাজ ও গহনাসম্ভার তাঁদের অনিচ্ছুক গায়, 
শিকল দিয়েছ তাঁদের  পায়, 
যেন কিছুতেই তাঁরা কয়েদের পাঁচিল না টপকায়, 
তোমাদের ছুঁৎমার্গ কেটে, 
হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ,পারসীক ইচ্ছেমতো নানাবিধ  লেবেল দিয়েছ তাঁদের গায়ে জোর করে সেঁটে। 

এত যে মানুষ মরছে থরে থরে, 
তবু্ও প্রহরায় তাঁদের আটকে রেখেছ  ঘরে মনের ক্ষুদ্র গন্ডি করে।।  

মানুষ তো মরণশীল, 
দেবতা যে অমর, অপার।।
তবুও দেখো কী পোড়া ভাগ্য তাঁর
তোমাদের হাতে পড়ে ।। 

তোমাদের হাতে পড়ে, 
জাত যায় তার, 
ঘুষ খেয়ে যেতে হয় হররোজ
 প্রণামী বাক্সের ফেরে।

দেবতার মহত্ত্ব নিয়েছে
ডাকাতের মতো কেড়ে,
ভক্তের ভক্তির চূড়ান্ত  নীচতা 
এসে, হায়।

দেবতা বলেছেন  বারবার তোমাদের কাছে উচ্চৈঃস্বরে কেঁদে, 
দেবত্ব নয়, দেবত্ব নয়, অমরত্ব নয়,
এ শিকলের, এ গরাদের হোক ক্ষয়,
অগণিত মানুষের মাঝে 
দেবতাও পরিপূর্ণ এক সামান্য মানুষই হতে চায়।।।।ত নি মা।। 

#পুনরুত্থান 

যীশু উঠলেন 
মৃত্যুকে জয় করে, 
যন্ত্রণাকে মুছে ফেলে গা থেকে, 
যীশু উঠলেন কবরের বল্কলে, 
পুরনো শরীর ঝেড়ে ফেলে রেখে। 

যীশু উঠলেন যেমন করে 
ভুলগুলি করে ক্ষমা 
মহামানবেরা অভিব্যক্তিপথ খোঁজে, 
যীশু উঠলেন মানবের প্রতিনিধি 
যেন মাশুল গুনেছে খেটে খাওয়া তার রোজে।

যীশু উঠলেন ভোরের আলোর মতো 
আকাশের গায়ে অবিনশ্বর দম্ভে,
যীশু উঠলেন প্রাণের প্রেরণায় 
সৃষ্টির প্রারম্ভে।।

যীশু উঠলেন, যীশু উঠবেন, 
পৃথিবীর বুক চিরে, 
যীশু উঠলেন,যীশু উঠবেন 
সবুজের সারি ঘিরে।।

যীশু উঠছেন ধমনীর দ্রুত রক্তপ্রবাহ যেমন হৃদয়ের থেকে প্রাণবায়ু নিয়ে প্রতি কোষে কোষে ছোটে,
যীশু উঠবেন যেমন করে গায়ের অজস্র শুঁয়োগুলি ঝেড়ে প্রজাপতি তার ডানা দুটি মেলে গুটির গরাদ কেটে।।

যীশু উঠবেন হিংসার শেষে বিজয়ী বিবেকদ্যুতি, 
যীশু উঠবেন শোক ভেদ করে আশার আলোর প্রতি।। 

শবদেহ ছেড়ে যীশুর উত্থান 
আসলে শোক জয় করে জীবনেরই গান।।

মৃত্যুর অন্তিম তীরে বসে বসে জীবনের টংকার,
তাই যীশু উঠলেন, যীশু উঠছেন, যীশু উঠবেন বারবার।।

গর্ভিনী ধরার সন্তানদের নিঃশেষ করে, বিলুপ্ত করে, 
এমন সাধ্য কার??
ওরে, এমন সাধ্য কার??? ত নি মা।। 
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন