শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০

জয়তী রায়

গুপ্ত হত্যার নেপথ্যে
___________'____________
    
________________

ভালোবাস আমাকে? তারা? ভালোবাসো? 
   সন্ধ্যার ঘন আধাঁর শরীরে জড়িয়ে বসে আছে তারা আর কিস্কিন্ধ্যা রাজ বালি। মনোহর উদ্যান। প্রযুক্তিবিদ নল তার সমস্ত জ্ঞান বিজ্ঞান উজাড় করে সৃষ্টি করেছে দেবলোকের চাইতেও  সুন্দর উদ্যানটি।  কিন্তু,  উদ্যানের আলোকময় দ্যুতি ,সমস্ত অহঙ্কার ,প্রকৃতির অনিন্দ্য শোভা __সব ম্লান হয়ে যায়, যখন,  তারা সেখানে এসে বসে। ঈশ্বর ,তাঁর ঝুলির সবটুকু সেরা সম্পদ উজাড় করে দিয়েছেন এই রমণী কে। পৃথিবীর সেরা রূপবতী জীবন সঙ্গিনী হলে, পুরুষদের হাল বড়ই করুণ হয়, রাজা বালির চাইতে একথা আর কে বেশি জানে?  বার বার আবোধ   প্রশ্ন করে নিশ্চিন্ত হতে চায়: 
আমাকে ভালোবাসো? তারা? আমাকে ভালোবাসো। 
অবুঝ স্বামীর সবল বুকে পিষ্ট হতে হতে  , অস্ফুটে তারা  বলে ভালবাসি ভালোবাসি। 

     ____তুমি কত সুন্দর তারা! যত দেখি, মুগ্ধ হই। মুগ্ধতা যেন কাটতেই চায়না। 
___আপনি বীর শ্রেষ্ঠ। স্বাধীন রাজা। আপনার শৌর্য বীর্য্য লজ্জা দ্যায় দেব দানব মানবকে। রমণী মনোহর রূপ আপনার। এমন আকুলতা আপনাকে শোভা দ্যায় না মহারাজ। মৃদু তিরস্কার করে তারা। 
____ভয় করে তারা। তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়। 
___পৃথিবীর কোনো পুরুষের ক্ষমতা নেই আপনার কাছ থেকে আলাদা করে আমাকে। আপনার সামনে অন্য পুরুষ , নারী বলে ভ্রম হয়! 
 জোরে হেসে উঠে বালি বলে, 
 ভ্রাতা সুগ্ৰীব আর বিরক্ত করেনি তো তোমাকে? তাকে খুব করে তিরস্কার করেছি। 
___তাতে কোনো প্রতিকার হলো না মহারাজ। তার পত্নী, রুমার  চাইতে আমি তার বেশি প্রিয়। সারাক্ষণ আমাকে জ্বালিয়ে মারছে।
___ শোনো শোনো। এতে দোষের কিছু নেই। পুরুষ সর্বদা অপরের পত্নীর প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। 
___পরিহাস নয় । 
___আপনি জানেন না মহারাজ, রাজ্যে এসেছে দুই মহা শক্তিধর।  রাম লক্ষণ। তারা মহাবীর। সুগ্ৰীব তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।  কাম মানুষকে উন্মাদ করে দ্যায়। আমি ভীত। 
___,ভয় নেই মহারানী। যত বড় বীর হোক। সামনে থেকে যুদ্ধ করলে, আমাকে কেউ হারাতে পারবে না। তাই তুমি নিশ্চিন্তে  আমার বুকের ভিতর ছোট্ট পাখিটির মত থাকো।
___আপনার কোনো বিপদ হলে, ওই সুগ্ৰীব আমায় ছিঁড়ে খাবে। যে ভোগ্য দেবতার , সে ভোগ্য কখনো শৃগালের যেন না হয়। 
বালি সজোরে জড়িয়ে ধরল প্রিয় তমা পত্নী কে। আশ্বাসে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে থাকল প্রিয়ার শরীর। হঠাৎ অন্ধকার চিরে বিদ্যুৎ ঝলকের মত বালির পিঠে বিঁধে গেল বাণ। একটি। দুটি। তিনটি। পর পর। যতক্ষণ না লুটিয়ে পড়ে বালি। উন্মাদের মত চিৎকার করতে লাগল তারা। খোলা চুল, সারা শরীর রক্তে মাখামাখি। মহা বলশালি বালির শরীর তখনো কাঁপছে। ছেড়ে যেতে চাইছেনা সাধের রাজ্য। প্রিয় পত্নী। প্রিয় পুত্র। 
কে এই গুপ্তঘাতক! সামনে আসুক
  আগুনের মত জ্বলছে বালির চোখ। ধীরে ধীরে সামনে এল ঘাতকের দল। রাম লক্ষণ আর সুগ্ৰীব। 
    সুগ্ৰীব এসেই তারার কোমরে হাত রেখে কাছে টানল
       " এবার? এবার কি হবে? দ্যাখ। কেমন করে হত্যা করলাম তোর ওই নায়ক কে। এবার? 
___কোনোদিন তুই আমাকে পাবি না, নরাধম।
___রাজি হতেই হবে। নতুবা তোর পুত্র অঙ্গদ হবে আমার শিকার। 
বালির শরীর ছুঁয়ে বসে রইল তারা। জ্বলছে দুটি চোখ। সমস্ত শরীর মাখামাখি প্রিয়তমের রক্তে। হিম শীতল গলায় উচ্চারণ করল:
 তুই পাবি   শরীর। আমার মন আজ চলে গেল সহমরণে। মন দ্বিচারিনী হবে না কখনো।  বালি পত্নী তারা __এই নাম থাকবে অমর হয়ে। 
    রাত শেষ হতে চলল। এক লজ্জাজনক ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ক্লান্ত সূর্য  উদিত হল কিষ্কিন্ধার আকাশে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন