শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

নন্দিনী পাল

                



আমার স্বর্গ


আকাশটা আজ অবাধ্য নীল
চাঁদটা লাজুক মুখে আনত চোখে তাকিয়ে
পৌরুষের অহংকারে দিবাকর তছনছ করেছে
সকালের কুমারীত্ব
বিষাদের ভিতর থেকে 
ডানা ঝাপটে উড়ছে পাখপাখালি
ধপধপে সাদা বক ঊড়ে যায় কলুসহীন
 সকাল পেরিয়ে
প্রতিধবনির মত ফিরে আসে প্রেম
ভেজা সবুজে বাঁদামী আঁচড় কেটে
কে যেন মৃদু হেসে তাকিয়ে আছে
ঠিক যেন চেনা নয়
স্বপ্নের মত, বাতাসে ভাসতে থাকে
মৃদু গুঞ্জন তুলে,অলকের প্রান্ত ছুঁয়ে
চুপি চুপি কথা বলে কানে
শিশির ভেজা মাটির সোঁদাগন্ধ
চুম্বনের উষ্ণতাটুকু শুষে নিয়েছে শেষরাতে
এরকম এক সজল প্রভাতে
প্রত্যাখান করতে পারি ঈশ্বরের স্বর্গ
যা কিছু নশ্বর তা শুধু আমারই।
 



বেলাশেষে


সবকিছু বাঁধাছাদা হয়ে গেছে আজ
খাট, বিছানা, আলমারী আর যত দামী জিনিস
গুছিয়ে নিয়েছি অনেক যত্নে
হয়নি ঊনিশ বিশ
কিছু কি রয়ে গেল ঘরের আনাচে কানাচে
কিছু কি ফেলে যাই দরজার খোলা কপাটে
সব কিছু নেওয়া হল সারা
তবুও তো মন দেয় না কোনো তাড়া
বারান্দায় দাঁড়িয়ে একবার দেখে নি
টেম্পোটা নিয়ে গেছে সব
ফেলে কি কিছুই যায়নি?
সেইসব সকালের ব্যস্ততা
সেইসব সুখী কিছুদিন
উড়ে যায় হাসি কান্নায় ঝরে যাওয়া কিছু পাতা
সব রয়ে গেছে এদিকে সেদিকে
বাতাসের ঘ্রাণে অক্ষরের মত
লিখেনি তাই দিয়ে হৃদয়ের কোলাজে
একখানি চিঠি
যেটা পোষ্ট হবে না কোনদিন
স্মৃতির আ্যলবাম খুলে পড়ব জীবনের
 শেষ কিছুদিন।


অচল পয়সা

নন্দিনী পাল

বেঁচে থাকা যখন বিড়ম্বনা
তখন মৃত্যুকে ছুঁয়ে ফিরে আসা আনন্দ দেয় না
টেবিলের উপর জমতে থাকা ওষুধের গন্ধ
গভীর রাতে অন্ধকার চিরে
সাদারঙা গাড়ীর লাল আলোটা
জমাট রক্তের মত হৃৎপিন্ডে আটকে থাকে
সবকটা যন্ত্র বিকল হবার মুখে
তবুও কেমন আছির উত্তরে
ভাল আছি বলা ছাড়া উপায় নেই
ভাল নেই বললে এত প্রশ্ন ছুটে আসে
তার সবকটার উত্তর হয় না
জীবনের স্বাদ চলে গেলে
বাড়তি আয়ু অনেকটা অচল পয়সার মত
ব্যাগের এক কোনে পড়ে থাকে
ঝনঝন করে আওয়াজ করা ছাড়া  
কোন দরকারেই লাগে না।
 
 
নিঃশব্দে চলে যায়  

 
সবাই  চলে যায়
কেউ কেউ নিঃশব্দে
যাদের বেঁচে থাকায় শব্দ থাকে না
মরণের পর তারা নিঃশব্দে বেঁচে থাকে
ঘরের আনাচে কানাচে
চটি জোড়া সযত্নে রাখা আছে
চশমাটা খাপের মধ্যে ভরা
ঝাপসা  দৃষ্টি ছোঁয় না বহুকাল
তবুও মনে হয় এই এক্ষুনি ঘরের দেওয়াল ফুঁড়ে
বেরিয়ে এসে সবাইকে চমকে দেবে
চমকে দেয় না, নিঃশব্দে চলে যায়
যাদের বেঁচে থাকার শব্দ থাকে না
ফুল মালা চন্দনের গন্ধ উড়িয়ে শেষবারের মত
তারপর আর কেউ বলে না তার কথা
তার কোনও কথাই ছিল না
নিঃশব্দে চলে গেলে
তার জন্য কষ্ট হয় না কারোর।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন