শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

তপন কুমার বসু

 

              



                

























  

















প্রতিমা
    বলাই জাতে কুমোর। গাঁয়ে সে ঠাকুর গড়ত। প্রতিমা গড়তে তার জুড়ি ছিল না। গ্ৰামে আমাদের বাড়িতে বলাই প্রতিমা গড়ত। অন্যান্য গ্ৰাম থেকেও আমাদের প্রতিমা দেখতে ভীড় করত।
     লোকে বলত দুর্গা প্রতিমার মুখে বলাইয়ের বউকে আমি দেখেছি। অপরূপ সুন্দরী।
      তারপর নানা কারণে আমরা কলকাতায় চলে আসি। অনেকদিন পর প্রায় পুজোর মাসখানেক আগে কলকাতার রাস্তায় হঠাৎ বলাইয়ের সঙ্গে দেখা। চেনার উপায় নেই। এক মুখ দাড়ি, ছেঁড়া কাপড়, খালি পা। বলাই রাস্তায় ভিক্ষা করছিল। আমি চিনতে পারিনি। ও কিন্তু আমাকে ঠিক চিনেছে।
      ছেলেপুলে হয়নি। সুন্দরী বউকে নিয়ে কলকাতায় পালিয়ে এসেছিল। দিনের পর দিন অভাবে না খেতে পেয়ে অমন সুন্দরী বউ শেষে বীভৎস হয়ে উঠেছিল। তারপর একদিন কোথায় যে হারিয়ে গেল। বলাই নিজেও জানে না।
        বলাইকে বললাম ----- চল্ ; আমাদের বাড়ি চল্। এখানেও আমাদের বাড়িতে পুজো হয়। গাঁয়ের থেকেও বেশি ধুমধাম হয়। এবারের প্রতিমা তুইই গড়বি।
        কাঠামো এর, খড় এর, মাটি লেপা হল। রং করা শেষ হল। বাকি রইল তুলির কাজ। আমরা সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখছি। বলাই দুর্গার চোখ আঁকছে। তুলি দিয়ে আঁকার পর সাদা রং দিয়ে মুছছে।  হঠাৎ বলাই কিরকম অস্থির হয়ে উঠল। বারবার আঁকছে আর মুছছে। হঠাৎ চীৎকার করে বলে উঠল-- পারলামনি বাবু, আমি পারলামনি।
      বলাই সরে যেতেই ঠাকুরের মুখ দেখতে পেলাম। পৃথিবীর সমস্ত ক্ষুধা দুর্গা প্রতিমার চোখে জড়ো হয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।
                     ____________

1 টি মন্তব্য: