শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

সমিধ গঙ্গোপাধ্যায়

                              


ঈশপের গল্প
-------------------
সমিধ গঙ্গোপাধ্যায় 
---------------------------

১.
অতঃপর রঘুসাঁই মুহূর্তের নাড়িভুঁড়ি ভক্ষণ করিয়া
বিদেশ ভ্রমণে চলিলেন।

তাঁর কোমরের ঘুনশিতে সূর্যের অবিসংবাদি দণ্ডবৎ।যারপরনাই দস্যুগণ সেমসাইডে গোল করতে ব্যস্ত, দ্যাখো আর্হেন্তিনার জাদু পাদুকা--ওই যে মধ্যমাঠ থেকে ধ্যান বাড়িয়েছে ন্যাসপাতিবেদানাপৃথিবী,
বাঁ-পায়ের চিমড়ে বুড়ো আঙুলে চিউইংগামের মতো
সেঁটে যাচ্ছে মিঠেরস অহো যেন রাধাভাবে মাতোয়ারা গড়াচ্ছে কাঁদনহাসি, 
"কেন্দ্রীভূত কেন্দ্রীভূত" বলে চেঁচাচ্ছে কেউ, 
"আঃ এত গোল কোরো না" বলার সঙ্গে সঙ্গে
ঘনতর যুদ্ধ বাধল, বহুব্রীহি, 
"কি বললেন, গোল করব না?তাহলে খেলছি কিসের জন্য?"

ব্যাঙ্গমা শাবকের রদ্দায় ঘাড় ভেঙে 
ওয়াকওভার ওয়াকওভার "দেব না, চালাকি পেয়েছ? 
এত দাম দিয়ে গোল কেনা!" 
গোল গলা গোল গাল কামানো ভুরুর নিচে 
গোল চোখ গুলু গুলু তেড়ে এল 
পরাক্রমশালী ঘাসুড়েরা, " এত খেটে সাইজমতো সবুজ পাঞ্জাবী বানালাম এখন বললেই হল নিড়ানির দাম নেই?" সাতসমুদ্দুর আর তেরোতম নদীর তর্জনে প্রাণে নিরবধি হট্টগোল বেধে গেল। 
শতেক গৃহবালা সিঁথি আলুথালু কটমটে কটাক্ষ বেলনার দিকে, 
"কই আমরা এত কেঁদে মরি, ঠিকঠাক গোল তো হয় না! তাই ভাবি নিম্নচাপ লাগলেই মাঝমধ্যিখানে 
কেন আঙুরনয়না টপ করে খসে পড়ে আর কর্তা অসময়ে ঢেঁকুর খসান।"

ওদিকে বয়স বহিয়া যায় "টপ" ধ্বনি মনে ঝোল টানে। 
ক চ ত প আর যাবতীয় যত অনশ্বর ঘানিটানা বলদাভ কানা বর্গ তাদের অমূল যত ন্যাকাহাঁদা বিষাদের মিল টিল বন্ধ হয়ে যাক।

সময়ও কেমন ছলকে মধুময় হাড় কেটে কাত করা রাঁড়, টিক টক টিক টক টিক টক নিষিদ্ধ কথাকলি কপালে আঁকছে-- 
আহা এই কলতান দ্রব্যগুণে একমাত্র সিদ্ধি পেয়েছে।

শ্রাবণে তাহলে শুধু টাপুর টুপুর
হৃদয়ে আতিথ্যের বাতিক শুধুই কিটকিটে
তাঁকে ডাকো কেবলম টাক ডুমো ডুমো টাকে
ছিটকিনি খুলে ভালোবাসো ওহে টিকির টিকির
হাট্টিমের টিম টিমে ডিমের ঝোলে আসুক যত খাদ্যপ্রাণজ্বালা
দুক্কুরবেলা ছমছমে টিংটং হোক সদরের অতিথিসংশ্লেষ

নোনতা মিষ্টি ঝাল টক সব জিভে আর টাকরায়
এক গতি
এক নতি
এক মতি
এক যতি সবিনয়ে "টক্কাস" উল্লাসে মিতালি পাতাক টমটমে চেপে টেপে বসে টসে ফোটো টোটো শুট করে টরে নিক।

দেখেছ "ট" ছাড়া কোনো কথার অলংকারই গ্রাহ্য হয় না মার্কেটে ফার্কেটে। 
তার কেটে মেটে গেছে টেছে বলে টলে 
গাঁট্টা মারতে টারতে এলেও সেই...
দ্যাখো কফির সঙ্গে টফি না এলে গণমান্যে গরল আর চা'য়ের সঙ্গে টা সত্যি বলো সামনে এলে আপত্তিকর বলে জিগির টিগির তোলো কেউ?

হুঁহুঁ বাবা সেই কবে থেকে জানা আছে এই সৌর চামচে করে শালগ্রাম শীলাছিদ্রে সেবা ঢাললেই পিতার খড়মাকৃতি আর মাতার কাঁচুমাচু কাঁচুলির দর্শন হয়। নৌকো বানানোর বাতিকে যখন হরপ্পার মাথার খুলি নিখুঁত গোলাকার ফুটো করে প্রথম থ্রিলার লেখা হল, তখন থেকে এই আবিষ্কার আমাদের ধামাধরা। গুটিকয় আমরাই তারপর ডলফিনের মধ্যে দেখতে পাই মহাবিশ্বরূপ। এতগুলো উপগ্রহ সফল স্বরক্ষেপে বাড়ি বাড়ি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এসেছে তবু তোমাদের নিজেদের উপস্থকথন ঝড়ের বিবিধ নামে বারবার ঝুলিয়েছে এঁড়েবকনা ডিভিডেন্ডগাথা।

সুসমতল মেঝেয় তোমরা আত্নভোলা পেছনগন্ধী সাম্যাবস্থা পাবে বলে, 
উবু হওয়ার ব্যবস্থা করেছি এখন কার বাহ্য বেশি কার তরলকঠিন কার ধোঁয়াটে কার বা গুলি গুলি তাই নিয়েও কতশত বিতন্ডা লাঠালাঠি তোমাদের বুদ্ধিজীবিকার। 
কার গাড়ুজল কার নাভিকূপে ব্যাঙছানা স্থাপন করেছে তাকে শমন পাঠাও। অথচ মেঘে মেঘে এত শান্তিফুল ফুটে আছে দেখেও পুজোয় বসতে  অনীহাকাতর। 
এহেন পাঁকালপিছলানি দেখে মন্ডলাকৃতি
আলুশশাকুমড়োঢ্যাঁড়সপৃথিবী
গোল হতে গিয়েও শেষতক, খসখসে কাগজে মুছে দিচ্ছে নিজেরই নিতম্বের কর্মফল। 
ফলতঃ যা হওয়ার, ওই অবিমৃশ্য কাগজের গন্ধ আর সহ্য করা যায়?
নিজেদেরই কোষ্ঠীর বিচারে কাঠিন্য পুঁতে নিজেরাই মাত হচ্ছ। মিছিমিছি ক্রিয়াহীন প্রতিক্রিয়াগ্রস্ত হয়ে নিজের হাতে নিজেকেই পিন্ড গেলাচ্ছ অহেতুক।

কোথাকার চৌখুপিমার্কা আলিবাবা লালিপপ ছুড়ে ফেলে নাতনিকে খাওয়াচ্ছে কাগজের কাঁড়ি। 
কোথাকার তিনকোণা উদ্ভট আনারকলি স্তনকেকের ওপর বৃন্তচেরী সাজিয়ে ভিক্ষে চাইছে কোঁচকানো দোমড়ানো কাগজের থলি।
কোথাকার আখাম্বা কাগজও ভাবছে
ম্যানিকিওরড রক্তবমি
আহাম্মক কুকুরটা চেটে দিয়ে যাবে।
অথচ ডলফিন যে তোমাদের সবার চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান 
সে বোধটুকুও এত লোক থাকতে একগাদা আধাখ্যাঁচড়া  ডাইনোসরের কাছে ধার বাকি রেখে এসেছ। 
সইতে সইতে এত ভীড়ভাট্টা বেড়ে গেছে এখন লাও ঠেলা, সঙ্গরোধজাত মুদ্রাও অফসাইড মোটে খুঁজে পাচ্ছে না। 

তোমাদের রেখেঢেকে দেওয়ার মত হরি হরি বাস্তুতন্ত্রেরও জাঙ্গিয়ার পকেটের মনোনীত কোনো মান্ধাতা নেই!


২.
আসনশুদ্ধি পূর্ব্বক মুন্ডিত মস্তিষ্কে সহস্র দলযুক্ত পুষ্প(নিতান্ত অভাবে অক্সিটোসিন) ধারণ করিয়া মুদিত চক্ষুদ্বয় টিপিয়া ধরিয়া(আচমন অকুস্থলে অপ্রয়োজনীয়) আবেগাপ্লুত কন্ঠস্বরে ছন্দ বজায় রাখিয়া যার যেমন সাজিবার অভিপ্রায় অনুসারে উচ্চারিত হইবে--

হইহই রইবই
আলোচনা কালো চোনা
শুঁয়োপোকা লিটিচোখা
মেরু জলে মরু ফলে
চিকাকাঁই আইঢাই
মাহুত সহিস
গাড়োয়ান দারোয়ান
মাস্তানি কাপ্তেনি
তান্ত্রিক যান্ত্রিক
চবুতরা খরবায়ু
রাতঝর্ণা মেঘপর্ণা
তেড়েতাং কেড়ে ভাঙ
ছায়া কোল কায়া দোল
এলিয়ট অনিমেষ
কালিকট পরী দেশ
ভাজা মকর তাজা নখর
দ্রিমিদ্রিম বাঁকা শিম
খই-শপথ মই-কপোত
ধলাচাঁদ কালাকাঁদ
ইত্যাদি প্রভৃতি

অতঃপর পানশি চলুক--
আমি আমি আমি আমারই চেতনার রঙবাজি মেনে দাড়ি হল অখণ্ড গোঁফ উঠল চোঙাকার হয়ে
এহেন খামচা-খামচি চারশতবিশ বার খেয়ে ও খাবলে খোঁচাপ্রবৃত্তি হল সম্ভবামি যুগে যুগে
(Imagine there is no paracetamol) 
আর চার মহাকাব্যিক ঘোড়াচালকেরা ম্যাদামারা indifferent
এমনকি চকমকি শিল্পও গুহাকুটিরের নীলিমায়
ৎ এর উৎসেচকে ধাত্রীপ্রবণ;
ওহে চকিতএষণা কল্লোলিনীকলা ওহে মাকালমালিকা ওহে যক্ষ দক্ষ ভক্ষ দামিনী শ্যামলী প্রজ্ঞার অতীত কিংবা আগামীপারমিতা এসো,
শূন্যেরও শূন্যতাকামী পুঞ্জময়ী অদ্বিতীয়া পেখম বিধুরা এসো এসো দাহ করো
যা কিছু জঙ্গুলে
যা কিছু নাগরিক
যা কিছু মূক
যা কিছু মুখরা
যা কিছু বধির
যা কিছু লম্বকর্ণ
যা কিছু শিশুচর্বি
যা কিছু বৃদ্ধপরগাছা
যা কিছু পেটরোগা
যা কিছু আতুপুতু
যা কিছু মৌটুসী
যা কিছু গৃধিনী
যা কিছু অপরচুলো
যা কিছু খনিজলোম
এসো দাহ করো, আমি হও অতর্কিত আমি
"ওঁ অগ্নয়ে স্বাহা ওঁ অগ্নয়ে স্বাহা"
হিকরি ডিকরি গিলি গিলি ছুঃ
হরিতকীর মুখশুদ্ধি--পরিণয়ে আমলকির
মেজো সেজো বড় দাওয়াত হোক
ছাই পোড়াও সন্দেহের
ছাই পোড়াও অপ্রেমের
ছাই পোড়াও অলস মৃত্যুর
ফিনিক্সেরও আত্মীয়তা স্বীকার কোরো না
আমার মুখে আমাকে তুলে দাও আহা বাহারী কাবাব দাউদাউ খটখটে
তারপর যা হয়
দিনকে ওস্তাদ করব
রাতকে ছোটলোক
খানিক মদন হবে খানিকটা মার
ছ'দিন পাঁচ রাত্রি পরে ম্যাগেলানের মত
তোমাদের অনুরক্ত নাভিস্মৃতি ফিরে আসবে গোলাকার  লাইন টেনে টেনে
আশ্চর্য মহায়ুর্বেদে তোমাদের জুড়ে দেওয়া হবে
একদন্ডেই
তোমাদের সভ্যতায় আর কোনো আধপোড়া ঠাঁইনাড়া ঈর্ষা হবে না...

অতঃপর রঘুসাঁই কঠোর উপবাস লইয়া স্বদেশ ভ্রমণে চলিলেন।





1 টি মন্তব্য: