শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

রত্না দত্ত

                         



              
সর্ব শক্তিময়ী নারী


" নারীদের ক্ষমতায়নই উন্নয়নের সব থেকে বেশি কার্যকরী হাতিয়ার ........"
নারীরা অর্জন করতে পারেনি এমন বিশেষ কিছু অবশিষ্ট নেই - তা সে পরম্পরাগত ভূমিকায় হকবা আধুনিক রূপে।মাতৃরূপে তারা অনাদিকাল থেকে দুনিয়ার ভাবী নাগরিকদের অথবা ভাবী প্রজন্মদের গর্ভে ধারণ করে,জন্ম দিয়ে,লালন - পালন করে আসছেন।কন্যা, সহদরা ও স্ত্রী ও মায়ের ভূমিকায় তারা পুরুষকে নানাভাবে সমর্থন জুগিয়েছেন,সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।আরও আধুনিক রূপে তাদের শিক্ষাবিদ,ব্যবস্থাপক,রাজনৈতিক নেত্রী,প্রভৃতির ভূমিকায় দেখা যায়।সাম্প্রতিককালে লিঙ্গ বৈষম্যের প্রাচীর ভেঙ্গে তারা বিভিন্ন দুঃসাহসিক কাজের ভাগীদার হতে এগিয়ে এসেছেন।
পর্বতারোহী,বিমানচালক,ডাক্তার,নার্স, ব্যাঙ্ক কর্মী,ট্যাক্সিচালক,বাসচালক,অটোচালক এমনকি সশস্ত্র বাহিনীতে যুদ্ধংদেহী রূপেও তাদের দেখা যায়।
অবশ্যই শুরু থেকেই পরিস্থিতি এমন অনুকূল ছিল না।প্রাচীনকালে পুরুষের পরিচয় ছাড়া কোনও নারীর অস্তিত্বকে গণ্যই করা হত না - সে শুধু কন্যা,স্ত্রী বা মা।তার অস্তিত্বকে সবসময় নিয়ন্ত্রণ করত তার জীবনের
' পুরুষরা ',পিতা - পতি - পুত্র।সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার বা সুযোগ ছিল না।
জনসংখ্যার অর্ধেক হচ্ছে মহিলা ও কন্যাসন্তান।এরা শুধুমাত্র ভারতে কেন,অধিকাংশ দেশেই বৈষম্যের বলি। মেয়েদের ওপর চলে জোরজুলুম - হিংসা।তারা কোণঠাসা ও ক্ষমতাহীন।ভাবাদর্শ,সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং বিষয় আশয়ের লাগামটা পুরুষের হাতেই বেশি থাকে।এটা এই সমাজব্যবস্থারই একটি অঙ্গ।জোরজবরদস্তি বা বলপ্রয়োগের হুমকি এককথায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে মেয়েদের দাবিয়ে রাখা হয়।সর্বত্র না হলেও,ভারতের বহু জায়গায় ভয়ভীতি,দায়দায়িত্ব, বাধাবিঘ্নকে সাথী করে সারাটা জীবন কাটাতে হয় মেয়েদের
বৈষম্য ও অবহেলার শিকার হওয়ার পাশাপাশি ঘরকন্না,বাচ্চাকাচ্চাদের দেখাশোনা ইত্যাদি দায়দায়িত্ব সহ বাড়ির ও বাইরের হরেকরকম কাজের ঝক্কি - ঝামেলা তাদেরই সামলাতে হয়।ভয়ভীতি,আশঙ্কা,
উদ্বেগ মেয়েদের জীবনে নিত্যসঙ্গী।এই ভয়ের শুরু ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে থেকেই।কন্যাসন্তান আছে এই কথা জানা মাত্রই মাতৃগর্ভেই ভ্রূণহত্যা - যতি পড়ে যায় জীবনে।জন্মের পরও থাকে বিষ খাইয়ে তথা অবহেলা করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার আশঙ্কা।বেঁচে থাকলেও অযত্ন,অপুষ্টি তথা চিকিৎসা ও শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা। যৌন নির্যাতনও মেয়েদের তটস্থ করে রাখে।অশালীনভাবে গায়ে হাত দেওয়া থেকে শুরু করে ধর্ষণের ভয়। কড়া আইন পাসের পরেও নৃশংস গণ ধর্ষণের ঘটনা ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে। পদে পদে বিপন্ন মেয়েরা।বিয়ের পর সঙ্গ না পাওয়া, বনিবনার অভাব,সামাজিক ও দৈহিক অত্যাচারের আতঙ্ক।কোনকিছুতেই যেন রেহাই নেই।আতঙ্কের নাগপাশে যেন জড়িয়ে আছে তারা।
স্বদেশের সামাজিক অবস্থার বিচারে নারীর স্বাধিকার ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বোধের পক্ষে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাই নির্দ্বিধায় বলতে পেরেছিলেন যে,
' আমাদের পুরুষশাসিত,পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষেরা বাইরের সমস্ত আমােদপ্রমোদে লিপ্ত রয়েছে আর মেয়েরা তাদের নিজস্ব সম্পত্তি,একটা পোষা প্রাণীর মতো,অন্তঃপুরের দেওয়ালে শৃঙ্খলে বাঁধা আছে।"
অবশ্য রবীন্দ্র সময়ের সেই বাস্তবতা আজ অনেকাংশেই বদলে গেছে।তবুও নারীদের বড় একটি অংশকে শুধুমাত্র গৃহকর্মের চাকাতে বেঁধে রাখার পক্ষে পুরুষের সংখ্যা মোটেও কম নয়। তা সত্ত্বেও নারীরা তাদের আপসশক্তি  ও বেশ কিছু সাংগঠনিক সহযোগিতায় প্রতিনিয়তই এগিয়ে চলেছে।এখন অনেক ক্ষেত্রেই নারীর উপস্থিতি চোখে পড়ছে।তাদের নেতৃত্ব,সৃজনশীলতা ও কঠোর পরিশ্রম দেশের উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।রাজনীতি,সমাজ ও সংস্কৃতির নানা আঙিনায় সফল নারীর সংখ্যা এখন আর হাতে গোনার পর্যায়ে নেই।
আজ নারীরা তাদের মনোবল, শক্তি,অদম্য সাহস আর কঠিন পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে এগিয়ে এসেছে।তারা আর পিছিয়ে নেই।তাদের কর্মযজ্ঞের কারণেই আজ দেশ সাফল্যের শিখরে পৌঁছতে পেরেছে।
সেই আদিকাল থেকে আজ অবধি পৃথিবীতে সকল শক্তির উৎস কিন্তু নারী .......কিন্তু নারী জাতি এমনই এক জাতি যাকে নিয়ে কথা বলতে শুরু করলে সেই কথার শেষ কোথায় হবে কেউই তা জানে না।পুরুষশাসিত সমাজে নারীদের চরিত্রই  নাকি বেজায় জটিল।প্রথমে মেয়ে,তারপরে বৌ,তারপরে মা।বিভিন্ন চরিত্রে একজন নারী সাবলীলভাবে অভিনয় করে যায়........ তারপরেও তাকে শুনতে হয় নারী হয়ে জন্মানো মহাপাপের।
ভগবানকে শুধু একটাই জিজ্ঞাসা নারীরা কি পশুদের থেকেও অধম?কেন এত কষ্ট তাদের জিবনে?সইতে হয় সতীদাহ প্রথার জ্বালা,বিধবাদের হাজার নিয়ম পালন,তবুও আজ রাণী রাসমণি,রামমোহন,বিবেকানন্দ ও বিদ্যাসাগর ছিলেন বলে মেয়েদের জীবনে এসেছে নতুন ভোর,নতুন সূর্য,নতুন আলো......বন্ধ হয়েছে অনেক কষ্টদায়ক বিধান।বিধবা বিবাহ চালু হয়েছে,বাল্য বিবাহ বন্ধ হয়েছে, মেয়েদের প্রতি অন্যায়,অনাচার অনেকাংশে লাঘব হয়েছে। মেয়েরা আজ শিক্ষার দরজায় পা রেখেছে,পড়াশোনা করছে,চাকরিও করছে, সংসারও সামলাচ্ছে, দরকারে নিজের স্বামীর পাশেও দাঁড়াচ্ছে... শাড়ির পাশাপাশি এসেছে চুড়িদার, জিন্স,টপ যা এখন মেয়েদের পরিধান।তবে সৃজনশীলতা বজায় রেখে।অবশ্য অনেকেই এই উন্নতির অপব্যবহার করছে।শহরের পাশাপাশি গ্রামেও শুরু হয়েছে বিভিন্ন স্বনির্ভর প্রকল্প।গ্রামের মেয়েরা,বউরা অবসর সময়কে কাজে লাগাচ্ছে বিভিন্ন কাজে।বাড়ছে রোজগার,নিজের পায়ের তলার মাটি আজ শক্ত হচ্ছে - মেয়েরা আজকে দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশায় নিজেদেরকে সামিল করেছে।দেশের জন্য স্বর্ণপদক এনে দিয়েছে।তবে এবার সমাজ কি বলবে - নারীরা ছলনাময়ী,চরিত্রহীন,অপয়া নাকি যুগে যুগে যেমন দুর্গা অসুর বধ করেছিল, বেহুলা যেমন যমের দুয়ার থেকে ফিরিয়ে এনেছিল স্বামীর প্রাণ তেমনভাবেই নারীরা আজও সর্বশক্তিমানই আছে।নারীকে অপমান,অবহেলা আজ তারা সহ্য করবে না।তারা আজ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে,মুখোশ খুলে দিয়েছে বহু মুখোশধারী শয়তানদের,ধর্ষণকারীদের নিজেরাই শাস্তি দিচ্ছে,বিক্ষোভ মিছিলে সামিল হচ্ছে তারা।তাই বলি,
নারী জাতি শান্ত জাতি,মায়ের জাতে গড়া,
নারী সৃষ্টি,নারী ধ্বংস, নারীই হল সকল শক্তির উৎস।

                           
 

               


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন