শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

মানসী গাঙ্গুলী

                            


 গৃহপ্রবেশ 

       নির্ঝরের বাড়ির আজ গৃহপ্রবেশ। অনিতার নিমন্ত্রণ। কি উপহার দেবে ভেবে নিজের হাতে একটা টুকরো কাপড়ে ফেব্রিক রং দিয়ে আঁকা ছবি বাঁধিয়ে এনেছে সে। আরে, এটা তো সেই পুরনো বাড়িটাই, তবে কি নির্ঝর পুরনো বাড়িটা কিনে নিয়েছে! মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগলেও ওদের পুরনো বাড়ির নতুন রূপায়ন বাইরে থেকে দেখতে বেশ লাগছে অনিতার। দরজার দুপাশে দুটো ঘট ও কলাগাছ, দরজার মাথায় তেল সিঁদুর দিয়ে ওঁ চিহ্ন ও একপাশে স্বস্তিক চিহ্ন আঁকা। পুরোহিতমশায়ের মন্ত্রোচ্চারণে বাড়ী গমগম করছে। নির্ঝর কোনোদিনই পুজোপাঠে বিশ্বাসী ছিল না। এ নিয়ে মাসিমার কিছু ক্ষোভও ছিল, কিন্তু নির্ঝর হেসেই উড়িয়ে দিত।
       সাদা ধুতি-পাঞ্জাবিতে নির্ঝরকে লাগছে বেশ। আর ওর বউ ঝুমা লালপাড় সাদা শাড়ি পরে পুরোহিতমশাইকে হাতে হাতে সব এগিয়ে দিচ্ছে, ধুনুচিতে হাওয়া দিচ্ছে। ঘর ধূপধুনোর গন্ধে ভরপুর, বেশ একটা পবিত্র, মাঙ্গলিক পরিবেশ।
        ওরা কলেজের বন্ধু, একসময় প্রায় নিত্য ওদের বাড়ি যাতায়াত ছিল অনিতা ও আরও চার বান্ধবীর। এখন অনিতার সঙ্গেই কেবল যোগাযোগ আছে নির্ঝরের, বাকিরা ছিটকে গেছে। ওদের দুজনের সঙ্গেই তাদের আর যোগাযোগ নেই। নির্ঝরের বাবা খুব অল্প বয়সে মারা যান, খুব কষ্ট করে বড় হয়েছে ওরা তিনভাই, তবু মাসিমার মুখে কখনও দুঃখ দেখেনি অনিতা, সর্বদা হাসিমুখ। ওদের বলতেন, "তোরা আসিস তাই একটু রঙিন কাপড় দেখি, এ বাড়ি থেকে তো সব রঙ হারিয়ে গেছে সেই কবে"। খুব শান্ত, ঠান্ডা কিন্তু বুঝদার মানুষ ছিলেন উনি, ছেলেদের নামকরণ থেকেই বোঝা যায় তা -নির্ঝর, কল্লোল, প্রবাহ। নির্ঝর কল্লোল তুলে প্রবাহিত হচ্ছে, আহা।
         ভাড়া বাড়ি, একটা ঘর, এক চিলতে বারান্দা আর ছোট উঠোন পেরিয়ে টালির চালের রান্নাঘর, আরেক দিকে অন্ধকার বাথরুম। এই একখানা ঘরের সংসারেই ছিল আনন্দ, হাসি অত অভাবের মধ্যেও। নিচের তলায় পাশে আরেকটি ঘর, খানিক বারান্দা আর রান্নাঘর ছিল বাড়িওয়ালার, উপরতলায় দুটি ঘর, বারান্দা যেখানে থাকতেন বাড়িওয়ালা ও তাঁর স্ত্রী। ওনাদের কোনো সন্তানাদি ছিল না। দুজনেরই যথেষ্ট বয়স হয়েছে, অসুস্থ হলে নির্ঝরই ডাক্তার, ওষুধ এসবের জন্য ছোটাছুটি করত, আর ওর মা তাঁদের সেবা, পথ্য, আহারের দায়িত্ব নিতেন নিজের থেকেই। এই বাড়িওয়ালার ছিল একদা সোনার দোকান আর বড়মা, মানে বাড়িউলি, নির্ঝররা তাই বলেই ডাকত, এক গা গয়না পরে থাকতেন সর্বদা।
        অনিতার আজ সব ধারাবাহিকভাবে মনে পড়ছে। শাঁখঘন্টার আওয়াজে মাঝে মাঝে সম্বিত ফিরলেও অল্প পরেই আবার অতীতে ডুবে যাচ্ছে ও। ওই অভাবের সংসারেও মাসিমা রোজ মুড়িমাখা, চা খেতে দিতেন ওদের সবাইকে, কখনও বা নিজে বাড়িতে চপ ভেজে খাওয়াতেন ওদের। তখন ওরা ছোট থাকায় অত ভাবত না রোজ রোজ ওদের কত খরচা হয়ে যায়, আজ অনিতা পরিণত মনে সেসব ভেবে লজ্জা পায়। মনে পড়ে শুভ্রা, রুমা, সুমিতা, গোপালি আর ও এই পাঁচজন বি.এসসি ফাইনাল পরীক্ষার পর প্রায় রোজ ওদের বাড়ি গিয়ে আড্ডা জমাত, তখন খুব তাস খেলার নেশা হয়েছিল ওদের। হৈ হৈ, হুল্লোড়, হাসি দারুণ ছিল দিনগুলো। শুভ্রার হাসিটা ছিল বিখ্যাত, মোড়ের মাথা থেকে শুনতে পাওয়া যেত। রবিবার ওরা যেত না, সবার বাবা বাড়ি থাকতেন, তাই আড্ডা বন্ধ, কিন্তু মাসিমা যেন হাঁপিয়ে উঠতেন। ওদের উচ্ছ্বলতা দেখে নিঃসন্তান বড়মাও ঘরে এসে বসতেন। বড়মা, মাসিমা সবাই ওদের আনন্দে খুশি হতেন, সমবয়সীর মত হইচই করতেন ওদের সঙ্গে। অত অভাবেও মানুষ অমন খুশি হতে পারে এ অনিতার কাছে রীতিমত বিস্ময়কর। ওরই মাঝে শুভ্রা একদিন দুম করে বলে বসল, "এ বাড়ি তো পরে নির্ঝরেরই হবে"। সেদিন থেকে বড়মা শুভ্রার ওপর খুব বিরক্ত, ওর সাথে ভাল করে কথা বলতেন না আর। আসলে ওনার দুর্বল জায়গায় আঘাত লেগেছিল। যেহেতু ওনার সন্তান নেই তাই নির্ঝর, এই জায়গাটায় উনি ব্যথা পেয়েছিলেন খুব।
          এরপর আবার সবার পড়াশোনা শুরু হল, রোজের আড্ডা তো বন্ধই, মাঝে মাঝে এক-আধদিন হতে হতে তাও বন্ধ হয়ে গেল। শুভ্রা কলকাতার এক স্কুলে চাকরি পেয়ে গেল। ও বাবা-মায়ের একই মাত্র সন্তান। তাঁদের দায়িত্ব তাই ওর, চাকরিটা ওর খুব দরকার ছিল। রুমা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিয়ে করল বাড়ির অমতে, বাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। সুমিতার এক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে বিয়ে হয়ে সে জাহাজে ঘোরে বরের সঙ্গে, আর গোপালী যে বিয়ের পর কোথায় হারিয়ে গেল! অনিতারই কেবল কাছাকাছি বিয়ে হওয়ায় যোগাযোগটা আছে তাও ব্যস্ততায় খুব কম। আগে মাসিমা থাকতে তাও অনিতা স্বামীকে নিয়ে যেত ওদের বাড়ি মাঝেমাঝে, মাসিমা জামাইকেও বেশ পছন্দ করতেন, বড়মাও ভালোবাসতেন ওদের। বড়মা ওদের সবার মধ্যে অনিতাকেই বেশি পছন্দ করতেন। অনিতা কনসিভ করলে ওর বাচ্চার জন্য বড়মা একটি মোহর রেখেছিলেন কিন্তু নিজে হাতে দিতে পারেননি, তার আগেই উনি মারা যান। সেই মোহর পরে মাসিমা অনিতার হাতে দেন বড়মার নাম করে।
         ভাবনার সুর কাটল যখন নির্ঝরের মেয়েটা এসে গলা জড়িয়ে ধরল ওর, একটু আদর করল ওকে। বেশ মিষ্টি হয়েছে দেখতে, অনেকদিন পরে দেখল ওকে। এখন তো এখানে থাকে না, দিল্লীতে থাকে, JNUতে পড়ে। নির্ঝর ছেলেমেয়েদের ভালো জায়গায় দিয়েছে পড়াশুনার জন্য, গাড়ি কিনেছে, পরিবার নিয়ে বিদেশ ঘুরেছে, কলকাতায় ফ্ল্যাট কিনেছে, আজ ও একজন সফল মানুষ। 
           বাড়িতে অতিথিরা আসছেন, নির্ঝর আজ খুব ব্যস্ত। দিনের বেলায় পুজোপাঠ হয়েছে তাই রাতে প্রীতিভোজের আয়োজন। অনিতা সকাল থেকেই রয়েছে। নির্ঝর ওর খুবই বন্ধু, বন্ধুত্বটা খানিকটা ভাইবোনের পর্যায়ে, তাই ওর সাফল্যে অনিতা খুবই খুশি। তবু কেন বারবার চোখের জল চলে আসে, তবু কেন বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। ওবাড়িতে যাতায়াত ছিল যখন রোজ তখন মাসিমা, বড়মা সবাই ছিলেন, অনিতা আজ ওঁদের হারাচ্ছে বড্ড বেশি ক্ষণে ক্ষণে আর দেখছে নির্ঝরকে, ওকে তো কতই খুশি দেখাচ্ছে, ওর কি মনে পড়ছে না মায়ের কথা! খুব চুপচাপ রয়েছ অনিতা, হঠাৎ ঝুমার ডাকে সম্বিত ফিরল। ঝুমা ওর নতুন কিছু বন্ধুদের সাথে আলাপ করিয়ে দেবার জন্য ডাকছিল ওকে। সেখানেও মাসিমার কথা উঠল, মাসিমা ঝুমার শাড়িতে ফলস পাড় লাগিয়ে দিতেন, নাচ শিখতে পাঠাতেন, ওর ঘুঙুর বেঁধে দিতেন, সেসব কথা। বউদের মেয়ের মতই ভালবাসতেন। সত্যি কোনো কোনো মানুষের অনুপস্থিতি বড্ড পীড়া দেয়, তেমনই একজন মানুষ ছিলেন মাসিমা। এই মানুষটার ছবিতে মালা দিয়ে দেয়ালে টাঙানো দেখাটাও বড্ড পীড়াদায়ক। মালা গলায় মাসিমার ছবিটা বড় জীবন্ত লাগছে আজ যেন। মনে পড়ছে অনিতার, একদিন দুঃখের দিনের কথা বলতে বলতে মাসিমার মত অমন হাসিখুশি মানুষটার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়েছিল, গলার স্বর রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেসব অপমানের স্মৃতি উনি আমৃত্যু ভুলতে পারেননি। বরাবরই অভাবের ঘরে বাস, তবুও নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে আত্মীয়ের বাড়ির বিয়েতে গিয়েছিলেন দু'দিনের জন্য  তিন ছেলেকে নিয়ে। সে বিয়েবাড়িতে এক আত্মীয়ের কানের দুল হারিয়ে যাওয়ায় আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল নির্ঝরকে। সেদিনের সে অপমান ওনাকে প্রতিমুহূর্তে দগ্ধ করেছে। পরে অবশ্য জানা গিয়েছিল যে কানের দুলের জন্য নির্ঝরকে ক্ষণিকের মিথ্যে আসামী হতে হয়েছিল তা তিনি বাড়ি থেকে আনেনইনি বিয়েবাড়িতে। আনতে ভুলে গিয়েছিলেন, পরে বাড়ি ফিরে পেয়েছিলেন। এসব মাসিমা শুধু  অনিতাকেই বলেছিলেন কোনো এক দুর্বল মুহূর্তে। সেদিন  তিনি বলেছিলেন, অভাব মানুষের সবথেকে বড় শত্রু, তিনি যদি অবস্থাপন্ন হতেন, তাঁর ছেলেকে ওভাবে সবার কাছে ছোট হতে হত না ক্ষণিকের জন্য হলেও।
        কিন্তু নির্ঝরকে আজ খুব খুশি দেখাচ্ছে। আজ বৈভবের আতিশয্যে ওর সে অপমান হয়ত চাপা পড়ে গেছে, সে ক্ষতে হয়তবা প্রলেপ পড়েছে। ভাবে অনিতা, 'থাক নির্ঝর তুই খুশিই থাক'। মাঝে নির্ঝরের সঙ্গে একটা ভুল বোঝাবুঝিতে কিছুদিন দুজনের মধ্যে যোগাযোগ ছিল না। নির্ঝর তার শ্রীরামপুরের বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় থাকবার জন্য মাসিমাকে সমেত নিয়ে যখন চলে যায় অনিতাকে সে কথা জানায় না সারপ্রাইজ দেবে বলে। আর অল্প কিছু দূরত্বে থাকা অনিতা তা জানতে না  পারায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে আর ওর সঙ্গে কথা বন্ধ করে দেয়। নিত্য হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। নির্ঝর ওকে কিছুতেই মানাতে পারেনি। এরপর যোগাযোগ বন্ধ থাকাকালীনই মাসিমা অগ্নিদগ্ধ হন আর সে খবর নির্ঝর আর জানায়নি অনিতাকে। অনেকদিন পর অনেক নিচে চলে যাওয়া নির্ঝরের নম্বরে ও দেখতে পায় একটা মেসেজ, "মা চলে গেলেন"। কি কারণে যেন সেদিন হোয়াটসঅ্যাপ স্ক্রল করতে গিয়ে অনিতার চোখে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে অনিতা, ততদিনে কাজ মিটে গেছে। খুব কষ্ট হয় অনিতার মাসিমাকে শেষ দেখা দেখতে পেল না বলে। আর আজ যখন নির্ঝরের বাড়িতে উৎসব, চারিদিক মুখর আনন্দ, হাসি, গান, বাজনা আলোর জৌলুসে, তখন অনিতার বুকের ভেতরটা হু হু করছে। ভীষণভাবে মাসিমার অভাব বোধ করছে ও। মাসিমা ওর কাছে মায়ের মতই ছিলেন। খুবই স্নেহশীলা, কাছে গিয়ে বসলে মনে হত যেন এক নিরাপদ আশ্রয়। সেই আশ্রয়টা আজ নেই অনিতার। আজ এত জৌলুসের মধ্যেও নিজেকে কেমন নিরাশ্রয় লাগছে ওর। দেওয়ালে বড় বড় চারটি ছবিতে চন্দন ও মালা পরানো, মাসিমা, মেসোমশাই, বড়মা ও জেঠুর। মেসোমশাইকে ও বরাবরই ছবিতেই দেখেছে, জেঠু ঘরেই থাকতেন, মাঝেমধ্যে দেখতে পেত কিন্তু মাসিমা আর বড়মার স্মৃতি যে বড়ই উজ্জ্বল। মনে পড়ে অনিতার সেদিনের শুভ্রার কথায় বড়মা রাগ করলেও, সে কথাই সত্যি হল। বড়মা তাঁর একঝুড়ি গয়না নির্ঝরের বউকে দিয়ে যান আর বাড়িটা নির্ঝরকে। ওঁদের অবর্তমানে নির্ঝরই হবে মালিক। ঝুমার কাছেই জানতে পারল একথা অনিতা। বড়মা নির্ঝরকে একটু বেশিই স্নেহ করতেন। নির্ঝরের অনেক গুণ ছিল, মায়ের দায়িত্ব, বড়মা জেঠুর দায়িত্ব, ভাইদের মানুষ করার চেষ্টা, নিজের পড়াশুনার সঙ্গে সঙ্গে টিউশন করে সংসারটাকে দাঁড় করাবার চেষ্টা। কিন্তু আর দুজনের কোন হেলদোল ছিল না, তাই হয়তো বড়মা ওকেই বাড়িটা দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু অত অভাবের মধ্যে জীবন কাটিয়েও একফোঁটা লোভ ছিল না ওর। ও নিজে ওই সম্পত্তির একক মালিকানা পেতে চায়নি তাই তিন ভাইয়ের নামে রেজিস্ট্রি করায় তা। একসঙ্গেই সংসার, মেজো ভাইটাও বেশ দাঁড়িয়ে গেছে কেবল ছোটটাই তেমন কিছু করতে পারল না। তবু একান্নবর্তী পরিবারে অসুবিধা কিছু ছিল না, নির্ঝরই দায়ভার বহন করত, কিন্তু মুশকিল হল এই ছোট ভাইটির বিয়ে দিয়ে। বনিবনা না হওয়ায় নির্ঝর তার অফিস থেকে পাওয়া ফ্ল্যাটে চলে গেল মাকে সঙ্গে নিয়ে। আগেই পেয়েছিল, তবু এতদিন একসঙ্গে থাকবে বলে যায়নি। মেজোভাই কর্মসূত্রে অন্য রাজ্যে, পড়ে রইল বাড়িতে কেবল ছোট ও তার পরিবার। আর বড়মার দেওয়া বাড়ি ও গয়না তিন সমান ভাগে ভাগ করেছে ও, ভাইদের বঞ্চিত করেনি। ছোটভাই কমজোরি, তাই তার দাবী মত বড়মার রান্নাঘর, সিঁড়ি যে দিকটা সেদিকটা তাকে দিয়েছে। উপরে নিচে একটা করে ঘর, বাড়ির সামনে ওপরে নিচে সরু বারান্দা আর পিছন দিকে ওপরে নিচে দুফালি দালান, যাতে ওকে আর কিছু পয়সা খরচ করতে না হয় বাড়ির পিছনে। ওর ক্ষমতাও নেই খরচ করার আর গয়না যা পেয়েছে তাতে ওর মেয়ের বিয়ের জন্য রেখেও বাকি বিক্রি করে বিয়ের খরচ উঠে যাবে। বাড়ির অর্ধেকটা নির্ঝর নিয়ে নিজের মত পিছন দিকে বাড়িয়ে নিয়েছে আধুনিক কায়দায়, ইন্টিরিয়ার ডেকরেটার দিয়ে বাড়ি সাজিয়েছে সুন্দর করে। মেজোভাই বাড়ির অংশ নিতে চায়নি বলে পিছনের জমিটা তার বরাদ্দ হয়েছে। সততার মূল্য আজও আছে, ভাবে অনিতা। মাসিমা ও নির্ঝর নিঃস্বার্থভাবে অসহায় বড়মা, জেঠুকে যেমন বিপদে আপদে দেখাশোনা করেছে নিজের মত করে, তার পুরষ্কারও তারা পেয়েছে। আজ মাসিমা নেই, কলকাতায় নির্ঝরের ফ্ল্যাটে থাকার সময় সন্ধ্যে দিতে গিয়ে প্রদীপের আগুন গায়ে লেগে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে কদিন কষ্ট পেয়ে মারা যান। বাকি সব দেখে গেছেন কেবল এই বাড়িটা আর দেখে যাওয়া হয়নি তাঁর, ভাগাভাগি অবধি জেনে গেছেন।
        নিজেকে আজ বড় অপরাধী মনে হচ্ছে অনিতার। নির্ঝরের ওপর নিছক অভিমানে পরোক্ষে তার প্রিয় মাসিমার কাছ থেকেও দূরে সরে গিয়েছিল ও, আর সেই ফাঁকে মাসিমাও ফাঁকি দিলেন। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, আর কখনও প্রিয় মানুষদের কাছ থেকে দূরে থাকবে না। একা একপাশে চুপ করে বসেছিল অনিতা আনমনে। 'কিগো অনিতাদি খাবে চলো', ঝুমার ডাকে চমক ভাঙ্গল ওর। জোর করে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে চলল অনিতা ঝুমার সঙ্গে গৃহপ্রবেশের ভোজ খেতে।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন