রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১

মিনাক্ষী ঘোষ

                     




 ভান

যে মেয়েটি

মালসায় আগুন আর নাভিমূলে

শ্বেতপদ্ম রেখে ভেবেছিল একদিন

মৃত্যু আর অমরত্বের মাঝখানে

সেতু নির্মাণ করা যায় অনায়াসেই!

শুন্যতার অতল খাদে

মনটাকে অনায়াস গড়িয়ে দিয়ে

প্রথাসিদ্ধ নিয়ম জলে আচমন সেরেছিল

এক কমন্ডলু বিবমিষায়!

অমরত্ব পাবে ভেবে

 অবিনাশী পাথরজন্মকে

আগুনে পোড়াতে চেয়ে বারবার

পদ্মের মৃণালে  ঢেকেছিল তার সমস্ত ক্ষত

বল্কল অথবা লজ্জাবস্ত্র

কোনটিই আজ আর গ্রহণযোগ্য নয় তার

 সেতুহীন অমরত্ব পেতে গেলে

মৃত্যুর আগুনে স্নাত হতে হয়।


মাভৈঃ



নিকষকালো গুহায় দাঁড়িয়ে থেকেও

বুকের ভেতর সহস্র সূর্যকে পুষে রাখি

 যত ই ঝঞ্ঝা ভাঙুক শাখা সম্বল

অন্য কোথাও নীড় খুঁজে নেবে পাখি

 

অন্ধকারের প্রাচীরগাত্রে ক্ষয়

জানি,জানি তাও নিশ্চিত হবে কোনদিন

ততোদিন চোখে জোনাকি জ্বালিয়ে রাখি

ভাদ্রের নদী যদিই উজানে বয়


ফাটলের গায়ে ক্ষীণ যে স্রোতস্বিনী

এতদিন ছিল একলাই নিরিবিলি

জোয়ার প্লাবনে বাঁধ ভাঙে উচ্ছ্বাস

পাথর ভাঙতে প্রয়োজনে রঙ তুলি


নাগপাশে আরো যতই কঠিনে বাঁধো

কান পেতে থাকো,শুনতে আর্তনাদ

হাজার আলোর ঝাড়বাতি তবু জ্বেলে রাখি

ধরেছি মুদ্রাতে আনন্দ বিষাদ যুগপৎ ।


কথা দিলাম


বর্ষার আগে

জমিতে নিড়েন দিতে হবে বলে

তুমি ঠা ঠা রোদ্দুর টুকু উড়ানিতে বেঁধে

মাঠে নেমেছিলে!


বর্ষা নামার আগে

ভাবী ফসলের আগমন

সুনিশ্চিত করা চাই!

জৈষ্ঠ্যের তীব্র পরাক্রম তোমায় ক্লান্ত করলেও

হতোদ্যম করেনি তাই

জানিনা,কতটা প্রদাহ তুমি

সয়েছিলে এই অবকাশে

শাখাহীন গাছের আড়ালে

এতটুকু বিশ্রাম চেয়েছিলে বুঝি!

তাই কি আভাসে

অনাহুত অতিথির মতো

মেঘ হয়ে উড়ে আসি

তোমার আকাশে

যদি এতটুকু ছায়া দিতে পারি

এই খরতপ্ত জীবন প্রদোষে

সেকথা অজানা থাক

আমার চিবুক জুড়ে ছড়ানো বিষাদ

আজ বাঁধভাঙা বৃষ্টি হয়ে

সোহাগ ছড়াক

পরিতৃপ্ত ঘুম নেমে আসা

তোমার নিবিড় দু'চোখে

একে যদি সামিয়ানা বলো

আমৃত্যু তাই হবো আমি


কথাদিলাম।

নদীজন্ম



আকাশের রূপোলী সিঁথিতে চলকে ওঠা আলো

নাকি আরণ্যক বিষাদ

কোনটা জন্ম দিয়েছিল হিরণ্যগর্ভ মেঘের 

সেকথা বুঝতে বুঝতে

কেটে গেল আরো এক নদীজন্ম

নুড়িপাথরের ঠোকাঠুকি,আর

গাছগাছালির ফিসফিসানি

সূর্যাস্তের সবুজকে যে গভীরতা দিয়েছিল 

সেকথা কেবলমাত্র  যুবতী নদী জানে

অবধারিত সমুদ্রস্নানে 

যদি আর না ই যেতে হয়

সম্পর্কের কাটাকুটি খেলা তবে

তার শেষ জন্মশোধ 

আর কোনো দায় নেই তার বহতা হবার

নিজের সাথে বোঝাপড়া সাঙ্গ হলে

মেনে নেওয়া

চিরস্থায়ী একলার বসবাস 

শ্যাওলায়,পাথুরে গুহায়


তবু

সহস্র প্রাচীন সেই 

কোটর জমানো জলে

ফাটলের চোরাপথে

 ক্ষণজন্মা মেঘেরাও

মাঝেমাঝে

বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে

চিরায়ুষ্মতী হবার নেশায়।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন