রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১

চুমকি ভট্টাচার্য

              




রাখীবন্ধন



-তোমার জন্যে বেদানা ছাড়িয়ে রাখলাম মা।

ধারালো ছুরি দিয়ে মুসাম্বি টুকরো করতে করতে বলে মিতা।

রান্নাঘরের এক কোণের বেসিনের কলটা খুলে জলের ধারায় পানের গোছ থেকে এক একটা পান নিয়ে কাপড়ের টুকরো দিয়ে আলতো হাতে ঘসে পরিস্কার করছিলেন অনুপমা দেবী। মিতার কথার উত্তর না দিয়ে তিনি বললেন,  

-পঞ্জিকায় দেখলাম পড়শু রাখীপূর্ণিমা! আমার গোপালের জন্য সুন্দর একটা রাখি এনে দিতে বোলো তো শুভ্রকে। আর কিছু ফুল, ফল, মিষ্টির কথাও বলতে ভুলো না… তুমি যা ভুলো!


শাশুড়ীমায়ের খোঁচা দেওয়া কথাটা কানে নেয় না মিতা। রাখিপূর্ণিমার কথা শুনেই ভাইয়ের মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। মায়ের সংগে যোগাযোগের মাধ্যমও শুধুই ফোন। মনে মনে হিসেব করে কতদিন মায়ের কাছে যায়নি সে। এমনিতেই এবাড়ীর লোকেরা তার বাপেরবাড়ী যাওয়া পছন্দ করে না, তার ওপর আবার এখন কোভিডের তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে চলেছে। শুভ্রর কড়া নির্দেশ মা আর মুন্নীর সুস্থতার কথা ভেবেই সে যেন কোথাও গেলে ভেবেচিন্তে যায়। শুভ্রর এটা ভদ্রভাবে না বলার নামান্তর তা মিতা বোঝে। 


-আচ্ছা মা।

মুন্নীর জন্য মুসাম্বির জুস বানাতে বানাতে শাশুড়ী মায়ের কথায় সায় দেয় মিতা। 

বাইরের ব্যালকনিতে আপনমনেই খেলছে মুন্নী। রান্নাঘর থেকেই মিতা শুনতে পায় দুদিন আগে শেখা রাইম বারবার সুর করে গেয়ে তার অদৃশ্য ছাত্রছাত্রীদের শেখাচ্ছে মুন্নী। মুন্নীর জন্য জুসের গ্লাস হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে যায় মিতা। কিন্তু ব্যালকনিতে এসেই দুর্গন্ধে মিতার সারা শরীর পাক দিয়ে ওঠে। নীচের রাস্তায় তাকিয়ে দেখে এই অবেলায় দুজন সাফাইকর্মী ডাস্টবিনের সব নোংরা পরিস্কার করে একটা গাড়িতে তুলছে। মিতার দৃষ্টি গিয়ে পড়ে ডাস্টবিনের পাশে পড়ে থাকা একটা আধময়লা গদির ওপর। গতকাল থেকেই ডাস্টবিনের পাশে পড়ে আছে গদিটা। পাশের বাড়ির বৃদ্ধা গতকাল মারা গেছেন। 

- ডাস্টবিনের পাশে পড়ে থাকা বিছানার এই গদিটা আবার বৃদ্ধার নয়তো? 

ভয়ে শিউরে ওঠে মিতা!


এই আবাসনে তারা খুব বেশিদিন হয়নি এসেছে। আশেপাশের কারো সঙ্গে তেমন মেলামেশা নেই ওদের, শুধু এক নন্দা কাকিমা ছাড়া। তিনিই শাশুড়ীমাকে পাড়ার যাবতীয় খবরের জোগান দেন। আজ সকালেই নন্দা কাকিমা শাশুড়ীমাকে ফোন করে জানিয়েছেন পাশের বাড়ির বৃদ্ধার মৃত্যু সংবাদ। তবে সাধারণ মৃত্যু নয়, কোভিড কেস। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর নাকি জানা গিয়েছিল বৃদ্ধা কোভিড আক্রান্ত। তাই, বাড়ীর লোক আর মৃতদেহ বাড়িতে না এনে সরাসরি নিয়ে গেছে বার্ণিংঘাটে। 


মিতা তাড়াতাড়ি মুন্নীকে নিয়ে ঘরের ভিতর ঢুকে গিয়েও বেড়িয়ে আসে

 - ওরা গদিটা আবার ফেলে যাবে না তো?

মিতা কোনোরকমে গায়ের ওড়না দিয়ে নাক ঢেকে সাফাইকর্মীদের বলে, 

-এই যে, তোমরা গদিটা নিয়ে যেও কিন্তু! 

মাস্ক পড়া দুই সাফাইকর্মী তাদের দোতলার বারান্দার দিকে তাকিয়ে প্রায় একই সংগে বলে,

-হা দিদি, আমরা গদ্দি লিয়ে যাব।

"দিদি" শব্দটা শুনে মিতার মন যেন কেমন ছ্যাৎ করে ওঠে। সে আনমনে বলে,

-হে ঈশ্বর ওদের রক্ষা কর! শুভ্র যদি আরও দুটো রাখী এনে দিতো…

1 টি মন্তব্য:

  1. কমেন্ট -বক্সে কমেন্ট দিয়ে পোস্ট করলাম, কিন্তু হল না! যাইহোক, এখানে কমেন্ট করছি।
    তোমার অণুগল্প "রাখীবন্ধন" মনছুঁয়ে গেল চুমকি! এই কঠিন ফর্ম্যাটে চরিত্র-চিত্রণ ভালোই করেছ তুমি। কিন্তু যে ব্যাপারে উল্লেখ না-করলেই নয়, তা হল ছাপার ভুল। তোমার কিছু করার নেই। যেমন--- একাধিকবার এসেছে ভুল শব্দ "বেড়িয়ে"। হবে "বেরিয়ে"। আর শেষে এসেছে বাংলাভাষায় আগত বিদেশি শব্দ "বার্নিংঘাট" -এর জায়গায় "বার্ণিংঘাট"। বিদেশি শব্দের বানানে ণ-ত্ব বিধান প্রযোজ্য নয়। যেমন--- জার্নি, মডার্ন... ইত্যাদি।
    এমন সুন্দর শারদ উপহারের জন্যে চুমকি তোমাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।

    উত্তরমুছুন