হলুদ ভাতের আধুনিক নাম বাসন্তী পোলাও
ছিমছাম। পরিপাটি। কি ভাবছেন? আমি ঘর গুছোতে বসেছি নাকি ঘন্টা খানেক যোগা করে উঠলাম...
আজ্ঞে না,ছ্যাঁচড়া পোড়া বাটা ভর্তা ঝোল ঝাল...এতকিছুর পর কোনো একদিন আচমকা আমরা বলি তো স্রেফ পোলাও আর মাংস খাব।
আজ সেরকমই বাসন্তী পোলাও আর পেলবচিকেন
রান্নাঘর আসলে একটি কারখানা।নিত্যনতুন আবিস্কারের সাথে পাল্লা দিয়ে পুরোনো ঐতিহ্যবাহী পদ,সবকিছুই চলতে থাকে এখানে
পোলাও শব্দটি এসেছে পলান্ন থেকে। পল মানে হচ্ছে মাংস আর অন্ন মানে ভাত,অর্থাৎ মাংসভাত।যার আধুনিক নামকরণ পোলাও, আজ যেটা আমরা নিরামিষ হলুদ ভাত রান্না করি মিষ্টি মিষ্টি সাথে ঘিয়ের জব্বর গন্ধমাখা তার আসল নাম ছিল উড়ো বামুনের পোলাউ
আসলে মুসলিম শাসনকালে এই বিশেষ রান্নার বাংলায় আগমন তাই পোলাও মানেই ছিল মাংস সহযোগে ভাত রান্না করার বিশেষ পদ্ধতি। বেশিরভাগ ঐতিহাসিকই মনে করেন এটা।১৩৩৯ বঙ্গাব্দে গিরিশচন্দ্র বেদান্ততীর্থ তার রচিত প্রাচীন শিল্প পরিচয় গ্রন্থে মুসলিম ঘরে ঘরে ঘি জবজবে মাংস যুক্ত অন্ন ভাত এর উল্লেখ করেছেন
ইটালির রিসোত্তো বা টার্কির পিলাফ বা ইরানের পোলোও বা আফগানিস্তানের পুলাও বা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী আঁখনি পোলাও...নামে বর্ণে গন্ধে রূপে পোলাও আদুরে মেয়েটির মত লাজুক
রান্নার ইতিহাস হোক বা রান্নার ভূগোল আসলে স্বাদ আর তৃপ্তিই শেষ কথা। মাত্র তিনটি উপকরণ একত্র করে এত সুন্দর খাদ্য,শুধু বাংলা আর বাঙালি নয়,সারা পৃথিবী জুড়ে বিখ্যাত
গোবিন্দভোগ চাল ঘি কিসমিস কাজুবাদাম...কেল্লাফতে। অতিথি এসেছে, হাতে অল্প সময়, ঘরে বিশেষ কিছু নেই। বানিয়ে ফেলুন বাসন্তী পোলাও সাথে চিকেনের যেকোনো ধরণের গ্রেভি বা পুজো-আচ্চার দিন হলে আলুরদম বেগুনি।সবকিছুর সাথে খুব সহজেই মানিয়ে যায় এই পদ
পরিমাণ মত চাল নিয়ে জল বদলে বদলে বেশ কয়েকবার ধুয়ে ফেলুন,যতক্ষণ না চাল ধোয়া জলটা সাদা হচ্ছে। আসলে চালে যে স্টার্চ থাকে তা উঠে না গেলে পোলাও ঝরঝরে হবে না। এরপর একটা পেপারের ওপর বা একটা পরিস্কার কাপড়ের ওপর ছড়িয়ে দিয়ে শুকনো ঝরঝরে করে নিন। চাল শুকিয়ে খটখটে হয়ে গেলে এক চামচ ঘি আর চালের পরিমাণ অনুযায়ী এক চামচ ভর্তি করে হলুদ, হাফ চামচ আদা বাটা আর এক পিঞ্চ অরেঞ্জ বা ইয়ালো ফুডকালার (ইচ্ছে হলে দিতে পারেন আমি খুব একটা প্রেফার করি না কারণ স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর ) দিয়ে ভালো করে মেখে রেখে দিন আধ ঘন্টা। আদার রস গন্ধ ঘিয়ের তৈলাক্তভাব গন্ধ সবকিছু চালের ওপর কোট হয়ে গেলে রান্না শুরু করুন।কড়াই বসান। ঘি দিন। দুটো ছোট এলাচ চারটে লবঙ্গ দু'চারটে গোটা গোলমরিচ এক টুকরো দারচিনি দুটো তেজপাতা ফেলুন।মাঝারি আঁচে চালটা ভাজুন। একটু ফটফটে সাদা হয়ে এলে বুঝতে হবে চাল ভাজা হয়ে গেছে। নামিয়ে নিয়ে ওই পাত্রতেই আরও একটু ঘি দিন।কাজু আর কিসমিস হাল্কা সোনালী করে ভেজে তুলে রাখুন।সেই পাত্রতেই জল গরম বসান।এবার প্রশ্ন হল কতটা জল?
প্রথমেই বলি,এই রান্নার আসল তদারকি লুকিয়ে আছে জলের পরিমাপে। যতটা চাল তার ঠিক দ্বিগুণ জল, মানে যে কাপ মেপে চাল নিলেন যদি চাল দেড় কাপ হয় জল গরম করুন তিন কাপ।
এই জলে বাবল আসতে শুরু করলে ভেজে রাখা চাল দিয়ে দিন,তাপ মাঝারি থাকবে।সামান্য ফাঁকা রেখে ঢাকা দিন। খুব বেশি হলে মিনিট কুড়ি সময় লাগে।এর সময়টুকুর মধ্যে একবার ঢাকা খুলে ঝাঁকিয়ে নাড়িয়ে নিন। এইসময় চিনি দিন।রান্নাটা মিষ্টি স্বাদের হয় তাই নিজের ইচ্ছেমত চিনি দিন।একদম শেষ পর্যায়ে এসে দেখবেন জলও শুকিয়ে গেছে,চালও সেদ্ধ হয়ে ঝরঝরে পোলাও তৈরি হয়ে গেছে।
চিকেন মাটনের রগরগে ঝোল হোক বা নারকেল বাটার আলুরদম...ঝাঁপিয়ে পড়ুন থালার ওপর
আপনারা খান।আমি চলি 🙂।আবার দেখা হবে অন্য কোন রান্না অন্য কোন ইতিহাস অন্য কোনো ভূগোল নিয়ে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন