সোমবার, ২১ জুন, ২০২১

সুচেতা বিশ্বাস

                      




জন্মদিন 


বৃষ্টি টা ধরে এসেছে, সকাল থেকে ই অসহ্য গরম ,তাতেও সব কাজ মুখ বুজে করে গেছে পুনম , মায়ের শরীরটা ভালো নেই তার উপর গরমে নাজেহাল.. তাও মা সোফায় বসে বসে সবজি কেটে , রুটির আটা  টা মেখে দিয়েছিলো , ছুটির দিন ভাই ভাইবৌ দেরিতে ই উঠেছে , সব রবিবার যেমন ওঠে ,ওদের আজ বন্ধুদের সাথে কোনো রিসোর্ট এ পিকনিক ,সেজে গুজে সকাল সকাল রওনা দিলো , লাঞ্চের পর  .স্কুলের বাচ্ছাদের . টেস্ট পরীক্ষার খাতা  গুলো সারা দুপুর বসে চেক করলো  .ছেলে কে নিয়ে পড়াতে বসলো  ,তার পরে ই হঠাৎ মনে পড়লো ,আজ তো রবিবার  ..নীল এখুনি বায়না করবে  মল যাবার জন্য ...সারা সপ্তাহের পর রবিবার মানেই . .মল এ গিয়ে    পেট পুরে  বার্গার খাওয়া,  ম্যাকডোনাল্ড থেকে .,এটাই নীলের একটু খানি জীবনে খুশিই মুহূর্ত ...সারা সপ্তাহ সে অপেক্ষা করে যায় দিনটার জন্য ..কিন্তু আকাশ এর অবস্থা  দেখে  পুনম বুঝেছে  আজ নীলের মন খারাপ হবে.. ..কিন্তু নীল গেলো কোথায় ? 
এখন নীল কে খুঁজতে যাওয়া মানে সারা বাড়ি খুঁজে দেখা ... ..গলা চড়িয়ে ডাক দিলো পুনম " নীল ...কোথায় গেলি " 
"আসছি মাম্মা "
একছুটে দৌড়ে এসেছে নীল ..জোরে জোরে  হাঁপাচ্ছে
হাতে একটা চার্ট পেপার না ? 
মিট মিট হাসছে ছেলেটা ..
মায়ের কাছে এসে  ই চার্ট পেপার এ এগিয়ে দেয় .
চার্ট পেপার  দুভাজ করে বানানো একটা বার্থডে কার্ড. 
বাড়ির কারুর মনে নাই আজ পুনমের জন্মদিন ..মা বাবার তো বয়স হয়েছে ..ওদের কথা পুনম ধরে না ..কত কথাই  তো ওরা ভুলে যায় ..ভাই ও ভুলে গেলো ..কাল রাতে ই পুনম ভেবেছিলো বিকেল হলে ই অন  লাইনে এ সবার মনের মতন কিছু খাবার দাবার আনিয়ে নেবে ..তখন ঠিক কারুর না কারুর মনে পরে যাবে ..
আজ 7 বছর হয়ে গেছে সন্দীপ সেই যে পুনম কে বাপের বাড়ি দিয়ে গেলো ...তখন পুনম অন্তসত্তা ..আর আসে নি সন্দীপ ..এই সাত বছরে একবার নিজের ছেলে কেও দেখতে আসে নি ..দুবাই এর  ভালো ব্যাবসায়ী পরিবার দেখে পুনমের বাবা খুব ঘটা  করে তার একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম ...মন খুলে দুহাত উজাড় করে খরচ করে ছিলেন ..সন্দীপের ব্যাবসার জন্য কিছু টাকার দরকার ছিল ... তা ও তিনি দিয়েছিলেন বিনা দ্বিধায় ..না গয়না না টাকাপয়সা ..কোনো টাই  পুনম নিয়ে আস্তে পারেনি ..কোনো রকম যোগাযোগের রাস্তাই  ছিল না ..বড়ো আদরের মেয়ে তাদের ...কাছে টেনে নিলেন মা বাবা ভাই ....ভালো ছবি আঁকার  হাত 
ছিল পুনমের ...কনভেন্ট এ পড়াশুনা করেছে ....শহরের  নাম  করা একটা ইংলিশ মিডিয়াম এ বাবার চেষ্টাই পুনমের চাকরি হয়ে যায় ..ছেলে নীল কে সবার মাঝে ভালো ভাবে মানুষ করছে ...তাও ছেলেটার দিকে তাকালে ই ভিতর টা ডুকরে ওঠে ...বাবার জায়গাটা তো শূন্য  ..নীল কে সে ছোট বেলার থেকে যা সত্যি সেটা  ই বলেছে ..মাঝে মাঝে বড়ো মন মরা হয়ে থাকে ছেলেটা ..আর এটাই পুনম কে  কুড়ে কুরে শেষ করে দিচ্ছে ..
বার্থডে কার্ড টার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না পুনম ..কার্ড এ মা আর ছেলে ...নিচে লেখা আছে " মা আর নীল " কত বেলুন ,কেক ,চকলেট ....ভীষণ কান্না পাচ্ছে পুনমের ...নিজেকে সামলে নেয় , "তোর মনে ছিল " 
"না মাম্মা ..মামু  আমাকে কাল রাতে ই মনে করিয়ে দিয়েছে ..মামু তোমার জন্য রাতে সারপ্রাইজ পার্টি রেখেছে ",...কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলে যাচ্ছে একনাগাড়ে কথা গুলো নীল ..."আমি তো তোমাকে সব বলে দিলাম যা হ ...."
এবার ও খুব সামলে নেয় নিজেকে পুনাম ...ওতো অন্য কিছু ভেবেছিলো ..."আমি কাউ কে কিচ্ছু বলবো না .ঠিক আছে ...যা হ সারপ্রাইজ পার্টির জন্য রেডি হয়ে নে "..
নীল খুশিতে এদিক ওদিক দৌড়া দৌড়ি করে বেড়াচ্ছে ..পুনম নীলের আঁকা কার্ড টার  দিকে তাকিয়ে থাকে ..বাইরে একটানা বৃষ্টি আজ সারাদিন 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন