রবিবার, ২০ জুন, ২০২১

যুগান্তর মিত্র

                                                                         




পুনর্গঠন 


এবার ভাবছি বাড়িটা রিপেয়ার করিয়ে নেব। অনেক জায়গায় ফেটে ফেটে গেছে। নতুন করে রঙও করিয়ে নেব বাবা। 
তা ভালো। কবে শুরু করবি? 
দুটো ফিক্সড ডিপোজিট ম্যাচিওর করেছে। হাতে টাকা এলেই হাত দেব। 
হয়তো এই রঙটাই করাব। রিপেয়ারের পরে তো নষ্ট হয়ে যাবে। তাই রঙ করাতেই হবে। 
হুম। আমার আর নতুন রঙ-করা বাড়ি দেখা হল না। দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে ঋষিকেশ বলেন, এই রঙটা তোর মায়ের পছন্দের ছিল। দত্ত হার্ডওয়ারে আমার সঙ্গে গিয়ে নিজে রঙ পছন্দ করেছিল। 
আমাকেও মা বলেছিল। মা চেয়েছিল দেয়ালের একদিকের রঙ ডিপ হবে। তিনদিকে হালকা কোনও রঙ। তুমিই করতে দাওনি। 
কথাটা শুনে চুপ করে থাকেন কিছুক্ষণ। তারপর নিজেই নৈঃশব্দ্য চিরে বলে ওঠেন, হুম। তখন মনে হয়েছিল, এ আবার কেমন ব্যাপার! তিনদিক একরকম রঙ, একদিক আলাদা! পরে দেখেছি অনেকের বাড়িতেই এইরকম আছে। 
আছে তো! বেশ ভালোও লাগে দেখতে। আমার পরিচিত অনেকের বাড়িতেই আছে। 
তোর মা অবশ্য খুব বেশিদিন পছন্দের রঙ-করা ঘরের দেয়ালে আটকে থাকল না। মাস ছয়েকের মধ্যেই চলে গেল! 
ক্যানসারটা লাস্ট স্টেজে ধরা পড়ল! মা এত কথা বলতে ভালোবাসত। অথচ গলাতেই ক্যানসার হল! শেষদিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকত মা! কথাটা বলেই বাবার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে সুধন্য। 
ও যে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে বুঝতে পারিনি! 
আবার কি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন বাবা? ঠিক বোঝা গেল না। চোখের পাতা স্থির। বোঝার উপায় নেই বাবা আপশোস করলেন কিনা। 
তুমি বরাবরই এইরকমই বাবা। আমাদের কারও কথারই কোনও গুরুত্ব দাওনি। নিজের একগুঁয়ে ভাব বজায় রেখেছ। 
এভাবে বলছিস? 
খুব কি ভুল বললাম বাবা? ভেবে দেখো। কথাটা বলে সুধন্য আর বাবার দিকে তাকায় না। উঠে গিয়ে চায়ের কাপ-প্লেট সিঙ্কে নামিয়ে রাখে। ফ্লাক্সটা সরিয়ে রাখে টেবিলের কোণে। তারপর ধীরপায়ে হেঁটে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরিয়ে আয়েশ করে একটা টান দেয়। ঠোঁট সরু করে ধোঁয়া ছাড়ে বাতাসে। আর-একটা টান দিতে গিয়ে থেমে যায়। আঙুলের ফাঁকে সিগারেট রেখে ঘরে আসে সে। 
বাবা, তোমার মনে পড়ে একবার খুব মেরেছিলে আমাকে? 
হ্যাঁ, সে তো তোর ভালোর জন্যই। 
আমার ভালোর জন্য? ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে জিজ্ঞাসা করে সুধন্য।  
তা নয়তো কী? সেইসময় তুই কয়েকজন বন্ধু জুটিয়ে আড্ডা মারতিস খুব। ওই বয়সেই ওরা বিড়ি টানা শুরু করেছিল। তুইও কয়েকদিন খেয়ে বাড়ি এসেছিলি। মুখে লেবুতাপার গন্ধ পেতাম। প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে জেনেছি বিড়ির গন্ধ ঢাকার কৌশল ওটা। খবর পেতাম মাঝে মাঝে বন্ধুদের সঙ্গে তাসও পেটাস। খুব রেগে গিয়েছিলাম। তখনও মারধর করিনি। শুধু বলেছিলাম, সবকিছুই ঠিকঠাক আছে। পড়াশোনাটাও তো করতে হবে! অপেক্ষা করছিলাম পরীক্ষার রেজাল্টের জন্য। যখন দেখলাম কোনওমতে পাশ করলি, তখন আর মেজাজ ঠিক রাখতে পারিনি। সেদিন মারটা একটু বেশিই হয়ে গেছিল, এটা ঠিক। 
একটানা কথাগুলো বলে ঋষিকেশ থামেন। সুধন্য মাথা নীচু করে চুপ হয়ে থাকে। 
একটু দম নিয়ে ঋষিকেশ আবার বললেন, এরপর থেকেই তুই বদলে গেলি। একেবারে প্রথম তিনজনে বরাবর। ক্লাস সেভেনের সেই মার তোকে পাল্টে দিয়েছিল। এমএসসি পর্যন্ত আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। 
সুধন্য সিগারেট আর টানে না। জ্বলতে জ্বলতে অর্ধেক পেরিয়ে গেছে। ধোঁয়ায় ভরে গেছে ঘর। অ্যাসট্রেতে ছাই ঝেড়ে বারান্দায় চলে যায়। তারপর সেখানে দাঁড়িয়ে সিগারেটটা ছুঁড়ে মারে দূরে। লেবুগাছের গোড়ায় পড়ে ধোঁয়া ছড়ায় আধ-পোড়া সিগারেট। ঘরে এসে প্রায় ফিসফিস করে বাবার দিকে তাকিয়ে বলে, আমি একটু আসছি বাবা। 
নিশ্চয়ই কোনও জনসেবা? 
না না। এই একটু ঘুরে আসছি। মুচকি হেসে জবাব দেয় সুধন্য। 
বেশ। যা। তবে নিজের কথাও একটু ভাবিস। 
কী কথা? 
এই যে বাড়িটা ঝুরঝুরে হয়ে যাচ্ছে… 
সব হয়ে যাবে বাবা, বললাম তো… 
কিছু কিছু টাকা জমা সু। টাকা ছাড়া সব অচল। একা থাকিস। বিয়ে-থা করলি না। কখন কী হয় বলা যায় না!  
তুমি কি এসব ভেবেছিলে কখনও? ভাবলে আমাদের এইরকম হত না বাবা। মার চিকিৎসা করা যেত আরও ভালোভাবে। বুকের মধ্যে এই কথাগুলো অভিমান হয়ে জমে আছে। মাঝে মাঝেই বেরিয়ে আসতে চায়। কিছুতেই আটকাতে পারে না সুধন্য। 
বেসরকারি চাকরি করতাম সু। তুই জানিস। কত আর মাইনে পেতাম! 
জানি। কিন্তু বাবা, বুলু পিসিদের সংসারও তুমি টানতে। এতে আমাদের অভাব দিনে দিনে বেড়েই গেছে। অনেক টাকা ধার হয়ে গেছিল। ধারের পর ধার। এই সেদিন সেসব শোধ করলাম। 
ঋষিকেশ ধারের প্রসঙ্গ পাশ কাটিয়ে বুলুর কথায় চলে গেলেন। বুলুটা একটা ভুল করে ফেলেছিল। না-বুঝেই ঝপ করে তারককে বিয়ে করে ফেলল। মদ্যপ একটা ছেলে! বাড়িতে এসে বউকে পেটাত! 
ওদের ব্যাপার ওদেরই বুঝে নিতে দিতে পারতে। তোমার তো নিজের বোন নয়। কাকার মেয়ে। তাও দূর সম্পর্কের। 
দূর সম্পর্কের বলিস না সু। সম্পর্ক রক্ত দিয়ে হয় না। নান্টুকাকার কথা ভুলি কী করে বল? আমরা যখন খেতে পেতাম না ঠিক করে, নান্টুকাকাই কিন্তু আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। তাঁর মেয়ে… 
বাবা এই রেকর্ডটা মাঝে মাঝেই বাজান। মাও বিরক্ত হতেন। সুধন্য চুপ করে যায় বাবার কথা শুনে। সে শুনেছে সবই। একসময় সত্যিই খুব উপকার করেছিলেন সেই দাদু। বুলুপিসি দুম করে তারককাকুর সঙ্গে পালিয়ে গেল। তারককাকু এপাড়াতেই ভাড়া থাকত মাকে নিয়ে। বিয়ে করে চলে গেল পাশের পাড়ায়। প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করত। প্রচুর মদ খেত। কী দেখে যে বুলুপিসির মতো ঠান্ডা মেয়ে তারককাকুকে পছন্দ করেছিল কে জানে! মদ খেয়ে খেয়েই লোকটা মরে গেল। 
তুই কিন্তু বুলুর পাশে দাঁড়ালি না! অনুযোগের সুর ঋষিকেশের কণ্ঠে। 
এখন আর দরকার নেই বাবা। পিসি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করে। 
তা জানি। কিন্তু মাইনে খুবই কম। 
এই তো বললে নিজের কথা ভাবতে! এখনই আবার অন্য কথা বলছ বাবা? সুধন্য বাবার দিকে চোখ রেখেই সরিয়ে নেয়। জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকায়। স্ট্রিট লাইটের জোরালো আলোয় দেখতে পায় উঠোনের গাছগুলো স্থির হয়ে আছে। মায়ের প্রিয় সবেদা গাছটা দাঁড়িয়ে আছে একা। অনেকটা যেন তারই মতো। 
যা ঘুরে আয়। বেশি রাত করিস না।  
হ্যাঁ যাচ্ছি। কথা শেষ হওয়ার আগেই বেরিয়ে পড়ে সুধন্য। দরজায় তালা মেরে চাবিটা পকেটে ঢোকাতে ঢোকাতে ভাবে, আজ একটু এলোমেলো ঘুরে আসা যাক। বাবার বলা ‘জনসেবা’ কথাটা হাওয়ায় পাক খাচ্ছিল। বোধহয় সবেদা গাছে ধাক্কা খেয়ে তার কানে এসে পৌঁছেছিল আবার। আর তখনই ঠিক করল, আজ আর বেরোবে না। তালা খুলে ঘরে ঢুকেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল, দাদার কথা মনে পড়ে বাবা? বাবার চোখে চোখ রাখে সে। বিষণ্ণ ছায়া কি ঝুলে আছে চোখে? খোঁজার চেষ্টা করে সুধন্য। 
মনে তো পড়ে! খুবই মনে পড়ে! 
দাদার লাশ শনাক্ত করতে গিয়ে তুমি বলেছিলে এই বডি আমার ছেলের নয়! এই ঘটনাটা মা আমাকে প্রায়ই বলত আর কাঁদত। তুমি কী করে পারলে? নিজের ছেলে… 
পারতেই হয়েছিল সু। তোর মাও বুঝতে চায়নি। তুইও না। রত্না আমাকে অনেকবার অনুযোগ করেছে। আমি সবার ভালোর কথা ভেবেই প্রদ্যুম্নর মৃতদেহ চিনেও চিনতে চাইনি। আমি যদি সেদিন বলতাম, হ্যাঁ, এটাই আমার ছেলের লাশ, তাহলে রেহাই পেতাম? রাষ্ট্রের চোখে ওর মতো অতি বামপন্থীরা অপরাধী। ও আমার ছেলে স্বীকার করলে পুলিশ কি আমাদের ছেড়ে দিত? ইন্টারোগেশনের নামে কম হ্যারাসমেন্ট করত? কিছুটা দৌড়ঝাঁপ করে, অনেক ধরাধরি করে ব্যাপারটা সামলানো গেছিল। এসব না-করলে তোর পড়াশোনা, আমাদের সুস্থির ভাবে টিকে থাকা এখানে সম্ভব হত, বল? পাড়াপ্রতিবেশী আমাদের সহজভাবে মেনে নিত? 
না নিলে না নিত! দাদা তো খারাপ কাজ কিছু করত না। হতদরিদ্র, খেতে না-পাওয়া মানুষগুলোর জন্য কাজ করত। সেটা তো অন্যায় ছিল না বাবা! 
তা ছিল না। কিন্তু পুলিশ কি সেসব শুনতে চায়? প্রশাসনের কাছে এসবের মূল্য নেই! 
তা বলে নিজের ছেলের লাশ… মাথাটা ঝাঁকায় সুধন্য। বাবার দিকে তাকাতে ইচ্ছে করে না তার। 
তোরা কেউ কি আমার কথা একবারও ভেবেছিস? নিজের ছেলের লাশ দেখেও অস্বীকার করতে হয়েছিল আমাকে। সে যে কী যন্ত্রণার তোরা বুঝবি না! 
তুমি কীরকম দেখেছিলে দাদাকে? 
এই জিজ্ঞাসাটা না-করলেও পারত সুধন্য। কেননা বাবার মুখে অনেকবারই শুনেছে। বাবা নিজেই বলেছিলেন। সে নিজেও কয়েকবার জিজ্ঞাসা করে জেনেছে। তবু বারবার জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করে। বাবারও যেন এর জবাব দিতে ক্লান্তি নেই। ঘোরের মধ্যে থেকে প্রতিবারই একই জবাব দিয়েছেন। 
দেখলাম আমার প্রদ্যুম্নর ডানাদুটো পাশে মাটিতে ছড়িয়ে আছে। নিষ্প্রাণ শরীরের নানা জায়গায় রক্তের দাগ। ও সবসময় বলত, আমি পাখি। পাখির মতো উড়ি। উড়ে উড়ে দেখি মানুষের যন্ত্রণা। খারাপ থাকা। ওদের কষ্ট বুঝতে চেষ্টা করি। সেই পাখিটার ডানা থেমে গেল রে, একেবারেই থেমে গেল! জনসেবাই আমার ছেলেটাকে কেড়ে নিল। কেন যে এসব পথ বেছে নিয়েছিল, কে জানে! 
সুধন্য কোনও কথা বলে না। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে খাটের পাশে। 
বেরিয়ে আবার ফিরে এলি যে? শরীর খারাপ লাগছে নাকি? 
নাহ্, শরীর ঠিকই আছে। আজ আর বেরোতে ইচ্ছে করছে না। কেমন যেন ঘুম ঘুম পাচ্ছে। 
এই তো চা খেলি। সিগারেট খেলি। তাও ঘুম কাটল না? 
নাহ্। খুব ক্লান্ত লাগছে বাবা। খুব… 
তাহলে ঘুমো। বিশ্রাম নে। 
হ্যাঁ বাবা। কথাটা বলে পোশাক না-ছেড়েই বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয় সুধন্য। 
তুই কি বিয়ে করবি না? আচমকা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন ঋষিকেশ। 
না বাবা। আমার বাঁধা পড়তে ইচ্ছে করে না। 
বাঁধা বলিস না। আমি কি বাঁধা পড়েছিলাম? 
তুমি হয়তো পড়োনি। কিন্তু মা পড়েছিল। গান ভুলে গেল। ছবি আঁকা ভুলে গেল। বাসন্তী কলোনির ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়েদের পড়াত। তুমি বাধা দিলে। মানুষের পাশে থাকা তো খারাপ কাজ নয় বাবা! 
না, খারাপ নয়। আসলে তোর দাদার কথা মনে পড়লেই কেমন যেন ভয় করত। এখন অবশ্য সমস্ত ভয়-টয়ের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে এসেছি। 
ওসব তোমার অমূলক ভয় ছিল বাবা। 
আচ্ছা আচ্ছা, অনেক হয়েছে। বাবাকে সুযোগ পেলেই সমালোচনা করিস। মরে গিয়েও শান্তি নেই। এখন ঘুমো। 
ঘুম! কতদিন যে নিশ্চিন্ত ঘুম আমার আসে না বাবা! কিছুতেই আসে না! 
আচ্ছা, মাঝে মাঝেই মধ্যরাতে ছাদে চলে যাস। কেন রে? 
আকাশ দেখি। ওটা আমার মায়ের আকাশ। সেই আকাশে মাকে খুঁজি। 
তোর মায়ের আকাশ? তোর মা বলত বুঝি? 
হ্যাঁ। বিনুকাকা মাকে দিয়েছিলে একটুকরো আকাশ। মা সেটাকেই যত্ন করে ধরে রেখেছিল। 
বিনুকাকা আকাশ দিয়েছিল মানে কী? 
মারা যাবার কিছুদিন আগে একবার বিনুকাকা ফোন করেছিল মাকে। সেদিন ছিল মায়ের জন্মদিন। মা হাসতে হাসতে বলেছিল, ‘জানো বিনু, আজ আমার জন্মদিন। তোমার দাদার মনে নেই। কোনওদিনই মনে রাখে না অবশ্য।’ তখন বিনুকাকা মাকে বলেছিল, তুমি জানলা দিয়ে আকাশ দেখতে পাচ্ছ বৌদি? মা বলেছিল, হ্যাঁ পাচ্ছি। বিনুকাকা বলেছিল, যতটা আকাশ দেখতে পাচ্ছ, সেটা তোমাকে দিলাম। ওটা তোমার জন্মদিনের উপহার। আজ থেকে ওটা তোমার। সেই থেকে মা পুব আকাশের ঐ অংশটা নিজের মনে করত। আমি খুঁজে দেখি মাকে পাওয়া যায় কিনা সেখানে। 
বিনুটা কী যে ভালবাসত তোর মাকে! ছোট থেকেই আমাদের বাড়িতে আসত। খুব বৌদি বৌদি করত রত্নাকে। সবাইকে অবশ্য বলত, বৌদি আমার মায়ের মতো। সেই বিনুও কেমন হারিয়ে গেল! ওই তো প্রদ্যুম্নর মনে মানুষের কথা ভাবার মন্ত্রটা দিয়েছিল। 
চুপ করে বিনুকাকার কথা ভাবে সুধন্য। দাদার থেকে সামান্যই বড় ছিল। দুটো বাড়ির পরে থাকত। পাড়া সম্পর্কে বাবাকে দাদা আর মাকে বৌদি বলে ডাকত বিনুকাকা। দাদা কাকা ডাকলেও তুই করে বলত। দুজনের খুব ভাব ছিল। কীভাবে যেন দাদাও জড়িয়ে গিয়েছিল বিনুকাকার সঙ্গে। মাকে মাঝে মাঝে ফোন করত। তবে কোথা থেকে করত, জানাত না। দাদা কমই ফোন করত। বিনুকাকাই দাদার খবর জানাত মাকে। তার এইসব ভাবনার মধ্যেই ঋষিকেশ বলে উঠলেন, তুই শুধু আমার দোষ ধরিস। তোর মাও ধরত। 
তোমার দোষ ধরতাম না শুধু, ভালোও বাসতাম। তুমি বুঝতে পারতে না। এখনও ভালোবাসি। না-হলে তোমার ছবির সঙ্গে এত কথা বলি? মায়ের ছবির সঙ্গে তো বলি না! মা ছিল সবচেয়ে প্রিয়… 
মায়ের ছবির সঙ্গে কথা বলিস না হয়তো, তবে শোবার ঘরে তোর মাথার কাছের দেয়ালে মায়ের ছবি রেখেছিস। 
হ্যাঁ বাবা, আমি ঘুমোলে মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। সারারাত। 
বড় ছেলেকে হারিয়ে রত্না তোকে বেশি করে আঁকড়ে ধরেছিল। 
ঠিকই বলেছ। তুমি আমাদের দুজনের মাঝখানে কঠিন পাঁচিলের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছিলে। তাই আমি আর মা দুজনকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম। 
আচ্ছা ঠিক আছে। আর বকবক করিস না। সেই ছোটবেলার মতো আছিস এখনও। এবার ঘুমো। 
সুধন্য চোখ বুজে বাবার স্পর্শ অনুভব করে। তার মধ্যেই বাবার ফিসফিসে গলা শুনতে পায়, আমরা ভাবতাম নতুন প্রজন্ম শুধুই ক্যারিয়ারিস্ট। কিন্তু ওরা ক্যারিয়ারের পাশাপাশি মানুষের কথাও ভাবে! এসব দেখে খুব তৃপ্তি পাই এখন। আমরা তো সংসারটাকেই মুখ্য ভেবে জীবন কাটিয়ে দিলাম! ভালো থাকিস সু। মানুষের পাশে থাকিস। 

হাওয়ায় পাক খেতে খেতে ঋষিকেশের কথাগুলো ভেসে বেড়ায় ঘরের মধ্যে। সুধন্য চুপ করে শোনে। ঘুম জড়িয়ে আসে তার চোখে। 

৫টি মন্তব্য:

  1. মরমী লেখা! জন্মদিনে এক টুকরো আকাশ উপহার ۔۔খুব ভালোলাগলো!
    একজায়গায় ছোট্ট ছাপার ভুল আছে ۔۔লেবুপাতা ۔۔তাপা ছাপা হয়েছে |

    উত্তরমুছুন
  2. অনেকটা পড়ার পরে বুঝলাম কথোপকথনটা কাল্পনিক। খুব ভালো লাগলো।

    উত্তরমুছুন
  3. খুব ভালো লাগলো। চরিত্রগুলি ও ঘটনার বিবরণ নিখুত।

    উত্তরমুছুন
  4. ঘুমের ভেতর দিয়ে ... পড়ছি , পড়লাম , পড়ব আবারও। সুস্থ থাকুন ভাল থাকুন

    উত্তরমুছুন