রবিবার, ৬ জুন, ২০২১

জযতী রায় মুনিয়া

                                               |




ভালো আছি/ ভালো থেকো




   জীবনে সুখী হব না অ- সুখী অনেকটা  আমাদের হাতে। বলতে গেলে পুরোটা। শুনতে খুব অদ্ভুত লাগলেও ভারতীয় প্রাচীন দর্শন বাতলে দিয়েছে সুখী হবার উপায়। 

    সুখ বা দুঃখ মনের অবস্থা মাত্র। কোনটাই দেখতে পাওয়া যায় না। আমরা অনুভব করি। আমরা ফিল করি। যেটা হয়, সেটা হল এনার্জির ওঠাপড়া। মন খারাপ থাকলে শরীর খারাপ লাগে? কারণ? এনার্জি কমে যায়। ভিতরের আলোর সুইচ অফ হয়ে যায়। বিশেষ করে কোনো প্রিয় জন মারা গেলে, বাচ্চা জীবনে কৃতি না হলে, স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হলে---আরো হাজার কারণ। প্রতিটি কারণ জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ। 

মনে রাখতে হবে, জীবনে গুরুত্বপূর্ণ। জীবন আছে তাই গুরুত্ব আছে। মরণে কিন্তু কিছুই আর যায় আসে না। 

এবার এই ঘটনা গুলি কেন ঘটে? অনেকে ভাবতে পারে  তার  ক্ষেত্রেই কেন হয়?

জীবন ঘটমান। আমরা তার খেলার জীব মাত্র। কিছু না কিছু ঘটবে ই। আমি কি আলাদা? না, আলাদা নই । জীবন রঙমঞ্চের একজন কুশীলব মাত্র। যে চরিত্রে অভিনয় করতে দেওয়া হয়েছে সেটা করতেই হবে। একজন অ সফল গায়িকা? লেখিকা? মাতৃহীন শিশু অথবা পঙ্গু--চরিত্র আগেই ঠিক করা--রেহাই নেই। তবু, মানুষের একটা প্লাস পয়েনট তার মনের এনার্জি। ঐ  নেগেটিভ রোল মেনে নিয়ে তার থেকে উঠে দাঁড়ানোর ক্রমাগত চেষ্টা। পঙ্গু পাহাড় অতিক্রম করতে পারে, এই মনের জোরে রামচন্দ্র সাগরে সেতু নির্মাণ  করেন। অর্থাৎ, ভবিতব্যের  উপরে ওঠার চেষ্টা করতেই হবে। একটি প্রাণ যদি রক্ষা পায়, সে ক্রমাগত চেষ্টা করবে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে অন্য প্রাণের আশ্রয় হতে। এটাকে বলে জীবনের ধর্ম। জীবন মহান। নিত্য দুঃখের  আবর্জনায় তার এনার্জি বা উদ্দীপক নষ্ট না করে ছড়িয়ে দেওয়া হোক চারিদিকে। মনের এনার্জি নষ্ট হলে মানুষ দুঃখের  সামনে আর দাঁড়াতেই পারবে না। 

   

**

আমরা বেঁচে থাকি এবং থাকতে হয়। মাতৃশোক, পুত্রশোক, সমস্ত শোক সামলে, বাজারে র থলি হাতে বেরুতে হয়। কারণ? জীবনের দাবি  মেটানো  ধর্ম। তাহলে মনে রাখতে হবে, শোক শুধু আমার একলা র নয়, এই এক শোক বহন করছে আরো কোটি মানব। এমনকি, আমি একলা সুখী ও নই । এমন কিছু করছি না, যে আমি আলাদা। লেখক হিসেবে সফল হলেও সামনে পিছনে অগুন্তি, ধনী হিসেবেও আরো অনেক, ফেসবুক এ গ্রুপ চালিয়েও আলাদা কেউ নই । কৃতি সন্তান হলেও লাফিয়ে কাজ নেই। অমন পাঁচ কোটি আছে। কাজেই , বস্তু দিয়ে সুখী মনে করার কারণ নেই। ওটাও জীবনের সঙ্গে আছে। মরণে নেই। 

তবে, কোন কাজ মরণের পরেও জাগ্রত থাকে? সেটা হল স্বার্থহীন মানবিকতা। যার জন্য বিবেকানন্দ। লেখাও যদি মানব কল্যাণে হয়, তবে মরণের পরেও মানুষ মনে রাখে। অর্থাৎ, শরীরের মৃত্যু হয়, ভাবনা বেঁচে থাকে। 

ভাবনা ই সত্য। ভাবনার মধ্যেই সুখ দুঃখ। ভাবনা কে ছড়িয়ে দিতে হয়। সামনে সকলে সফল আমি নই  অথবা অনুকরণ করি --এই রকম  ভাবনা এনার্জি কমিয়ে দেয়। অনুকরণ না করে নিজের ভিতর অনুসন্ধান করা উচিৎ। তবে উপযুক্ত পথ খুঁজে পাবো। অনুকরণ মানুষের প্রিয় প্রবৃত্তি। এটাও দুঃখের কারণ। একের জন্য যা  সার্থক আমার ক্ষেত্রে নাও হতে পারে  সফল। নিজেকে নিয়ে বসে নিজের রাস্তা ঠিক করতে হয়।

সুতরাং, আমি--এই শব্দ সত্য। বাকি জীবনের সঙ্গে যুক্ত। আমি যদি এনার্জি ভরপুর থাকি, তবে অপরের আশ্রয় হয়ে উঠব নতুবা আমি হব সমাজ, পরিবার এবং জগতের ভার মাত্র। শেষে মিশে যাব ধুলিকণার সঙ্গে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন