রবিবার, ২০ জুন, ২০২১

জয়া চৌধুরী

                                                                      



Aplastamiento de las gotas / Julio Cortázar

বৃষ্টিফোঁটাদের ভিড়/ খুলিও কোর্তাসার/ অনুবাদ- জয়া চৌধুরী

আমার জানা নেই, ও দেখবে, বৃষ্টি কী ভয়ংকর ভাবে পড়তে থাকে। সর্বক্ষণ বৃষ্টি পড়ে, বাইরে নিস্তেজ,

ধূসর, এখানে বারান্দায় বড় বড়, অখন্ড কঠিন দানায় এবং টপটপ করে ঝরে ও একটির পিছুপিছু আর একটি

চড়ের মত জড় হতে থাকে একঘেঁয়ে। এখন জানলার ওই উঁচু গরাদ থেকে টুপ করে এসে পড়ে ছোট্ট জলের

ফোঁটাটি। নিভে যাওয়া হাজার ঝিলিকের মাঝে যেন এক টুকরো ফোঁটা থিরথির করে কাঁপছে আকাশের গায়ে,

বেড়েই চলেছে, টলমল করে কাঁপছে, এই এখনই ঝরে পড়বে এবং পড়বে না, এখনও সে পড়ে নি।

সবকটি নখের পোশাক পরে আছে সে, ঝরে পড়তে চায় না, ওকে দেখা যায় দাঁত দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে এবং

ইতিমধ্যে বেড়ে উঠছে গর্ভ, এ তো এক বিপুল বৃষ্টিফোঁটা, মহিমময় ঝুলন্ত এবং মুহূর্তে ঝুপ করে পড়ে ওই

যে, টুপ, অসম্পাদিত এক, কিচ্ছু না, মর্মরে কোন ঘনসংবদ্ধতা।

কিন্তু, এটা দরকারী ওরা আত্মহত্যা করে এবং পর মুহূর্তেই সমর্পণ করে, গরাদে অঙ্কুরিত হয় এবং ওই

এক জায়গায় ডুবে যায়, লাফ দেবার থরথরানি দেখা যায়, তাদের পা গুলি আবরণ খুলে ফেলতে থাকে এবং ওই

পতন ও আত্মধ্বংসের ভেতরে চিৎকার ওদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়। বিদায় বৃষ্টি ফোঁটারা, বিদায়।


Tala পতন খুলিও কোর্তাসার/ অনুবাদ- জয়া চৌধুরী

এই চোখদুটি নিন, রঙিন নুড়ি যত,

টোটেম উপজাতির মত নাক, এইসব ঠোঁট যারা জানে

গুণক্রিয়ার সবকটি গুণিতক এবং সবচেয়ে বাছাই করা কবিতাদের।

আপনাকে সম্পূর্ণ মুখখানি দিই, জিভ এবং চুল সুদ্ধ,

এভাবে ভাবলে

কোন কাজ হয় না। চোখ বা আঙুল কিছুই নয়।

ফের গরম করা ওই খাবারও নয়, স্মৃতি নয়,

মনোযোগও না, হুকুমের চাকর তোতাপাখিটির মত।

সব কটা ইনডাকশন উনুন ও হ্যাংগারগুলি নিয়ে নিই

যেখানে ধোয়া ও ইস্ত্রী করা পরিপাটি শব্দেরা ঝোলে।

সবকিছু থেকে দূরে, বাড়ির সাথে সাথে,

শূন্য গর্তের মত আমায় ছেড়ে দাও, কিংবা ঝুঁকির মত।

হয়ত তখন, যখন ঈশ্বরের উদারতা


আমায় মূল্য দেবে না, ওই বয়-স্কাউট,

আর এই কার্পেটের মত সমতল যা তিনি সহ্য করেছেন

আশি বছরের পুরনো জুতোয় ঝরে পড়া তার ধীর বৃষ্টিফোঁটা

এবং তা পাক খোলা ব্যস আর কিছু নয়, পরিষ্কার কঙ্কাল যেখানে

টাকাওয়ালা রূপোর ময়ূরেরা মুছে ফেলেছিল,

এমন হতে পারে যে তোমাকে ছাড়াই তোমার নাম নিশ্চিত বলে উঠবে

এমনও হতে পারে যে হাত ছাড়াই তোমার কোমরে পৌঁছে যাবে।


Hablen, tiene tres minutes আপনারা কথা বলে যেতে পারেন, তিন মিনিট হাতে আছে আপনার/ খুলিও

কোর্তাসার/ অনুবাদ- জয়া চৌধুরী

আপনারা কথা বলে যেতে পারেন, তিন মিনিট হাতে আছে আপনার

এক চক্কর হেঁটে এসে

আঙুলের মাঝে তোমায় এক মুহূর্ত পাবার জন্য যেখানে একটি ফুলের সঙ্গে জুড়ে ছিলাম,

এবং এক বোতল বেয়াউখোলাইস রেড ওয়াইন পান করেছিলাম, কুয়োর তলায় নামার জন্য

যেখানে নেচেছিল লুনা ওসো কোম্পানির একজোড়া চপ্পল,

লম্ফবাতির সোনালি গোধূলিতে ঝুলিয়ে দিই আমার ত্বক

এবং জানি পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল

এ শহরে একলা থাকব আমি।

আকুলতার এই ভারসাম্য তুমি মাফ করে দেবে, ইঁদুরের মত পালানো ও মরফিন অভিযোগের মাঝখানে,

বড্ড ঠান্ডা এ কথা খেয়াল করতে করতে, আমার কফির পেয়ালায় বৃষ্টি ঝরতে থাকে,

এবং তার পায়ের স্পঞ্জে প্রতি টুকরো ক্রসেন্টে রুটির গায় আর্দ্রতা মসৃণ হয়ে যায়।

গোঁড়ার মত, অন্ধ যন্ত্রের মত, জ্বরের গং-এর মত অবিরাম পুনরাবৃত্তি করতে থাকে যে সংকেত,

আমি তোমাকেই ভেবে চলি একথা,

বিশেষভাবে জানতে জানতে

হাতের ভেতর চেটোয় আশ্রয় দেয় যে উন্মাদ, ঘন্টার পর ঘন্টা আদর করতে থাকে


স্রেফ এক নরম টুকরোয় মিশিয়ে ফেলে পালক এবং আঙুল।

ভাবি তুমি সন্দেহ করবে কী হল হঠাত এই ভেবে,

যেমন তোমার শহরে বসে দূরে থেকেও অনুভব করতে পারি তোমাকে,

চক্কর কেটে ফিরতে ফিরতে ওখানে হয়ত তুমি যোগ দিতে পারো

একই ফুলের সাথে, কিছুটা উদ্ভিদবিদ্যার খাতিরে,

কিছুটা যেহেতু তুমি এখানে আছ বলে

কেননা এটি অমূল্য

আর আমরা যে তত একলা নই, আমাদের মধ্যে

গড়ে উঠেছে এক পাপড়ি, সেটা যদিও ছোট্ট এক পা এগোনো, একটা শণ স্রেফ।



কবি পরিচিতিঃ খুলিও কোর্তাসার

তর্ক সাপেক্ষে আর্জেন্টিনা র সর্ব কালের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক খুলিও কোর্তাসার

১৯১৪ সালে বেলজিয়াম এ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা তখন সেই দেশেই

আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত পদে নিযুক্ত ছিলেন। কবি, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক,

প্রাবন্ধিক, অনুবাদক কোর্তাসার ছিলেন স্প্যানিশ ভাষার সাহিত্যে বুম জুগের

অন্যতম অগ্রপথিক। আর্জেন্টিনার ই নোবেল জয়ী সাহিত্যিক খোরখে লুইস

বোরখেসের ভাবশিষ্য ছিলেন তিনি। যদিও তাঁকে নোবেল পদক না দেওয়া নোবেল

পুরস্কারেরই মান খোয়ানো বলে মানা হয়। কার্লোস ফুয়েন্তেস তাঁর অসামান্য

লেখনীর জন্য মুগ্ধ হয়ে তাঁকে বলেছিলেন ‘আধুনিক ছোটগল্পের মাস্টার’ আর

‘উপন্যাসের সিমন বলিভার’। ফরাসী ভাষার অনুবাদক হিসাবে তিনি ইউনেস্কোর

সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন। এডগার এলান পো-র রচনাবলী ফরাসী ভাষায় তাঁর কৃত

অনুবাদ কেই সর্ব শ্রেষ্ঠ মানা হয়। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাস ‘রাইউয়েলা’ বা

‘এক্কাদোক্কা’কে স্প্যানিশ ভাষার বিংশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস বলা

হয়। মৃত্যুর অব্যবহিত আগে প্রকাশিত তাঁর কাব্যগ্রন্থ “সালভো এল ক্রেপুসকুলো”

বা ‘সন্ধ্যা ব্যতিরেকে’ তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্য কীর্তি। প্রবল রোগভোগে

১৯৮৪ সালে মারা যান তিনি।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন