শেষচিঠি
........,
একটু আগে ডাক্তারবাবু বলে গেলেন , আজ আমি ভালো আছি । অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে ভালো থাকা আর না থাকার ফারাকটাও আর ঠিকমত বুঝতে পারিনা । সিস্টারকে অনুরোধ করেছিলাম , সারা শরীরে জড়ানো নলগুলো খুলে দিতে । হালকা হেসে এড়িয়ে গেছেন সিস্টার । ঐ হাসিই বলে দিয়েছে , এগুলো আমার শেষযাত্রার সাথী ।
আইসিইউ.র ভেতরটাতে অদ্ভুত এক নীরবতা । শুধু যান্ত্রিক কিছু আওয়াজ , তাও যেন নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে । বাইরের কোন শব্দের প্রবেশাধিকার নেই এখানে । আমার সাত নম্বর বেডটা ঠিক স্লাইডিং উইণ্ডোটার পাশেই । বাইরে বর্ষা , অঝোরধারায় বৃষ্টি হচ্ছে । জানলার কাচে বৃষ্টির ছাটের ফোঁটাগুলো গড়িয়ে গড়িয়ে যেন কতরকমের আলপনা আঁকছে ।
শৈবাল , তোমার মনে আছে এমনি একটা বৃষ্টিদিনে প্রথম আমরা কাছে এসেছিলাম । মুসলধারায় বৃষ্টি আর ঘন ঘন বিদ্যুতের ঝলকানিতে আমি চমকে চমকে উঠেছিলাম । তুমি তোমার চওড়া বুকের আড়ালে লুকিয়ে নিয়েছিল আমাকে , বলেছিলে সারাজীবন ওভাবেই আগলে রাখবে আমাকে । কিন্তু কথা রাখোনি তুমি । আমার শরীরে নতুন প্রাণের কথা জানতেই তুমি বদলে গিয়েছিলে অদ্ভুতভাবে । ওতো আমাদের ভালোবাসার ফসল ছিল শৈবাল , তাও তাকে নষ্ট করার কথা কি করে ভাবতে পেরেছিলে!
তোমাকে ছাড়াই সে পৃথিবীর আলো দেখেছে । তুমি তাকে অস্বীকার করেছ , তাই "বৃষ্টি" শুধু আমার সন্তান ।
আজ এতোবছর পরে এভাবে দেখা হবে ভাবিনি । বিখ্যাত অঙ্কোলোজিস্ট শৈবাল মিত্র এই হসপিটালেরই ডাক্তার আর ভাগ্যক্রমে আমিও পনেরদিন ধরে এখানেই রয়েছি । যদিও দেখা হয়নি তোমার সাথে । সত্যি বলছি চাইনা আর দেখা হোক্ তোমার সাথে ।
সিস্টাররা প্রয়োজনটুকু ছাড়া কথা বলেন না । তবু সেদিন ঐ বয়স্কা সিস্টারকে তোমার কথা জিজ্ঞাসা করেছিলাম । প্রথমে এড়িয়ে গেলেও পরে কিছু কথা বলেছিলেন তোমার সম্বন্ধে ।
শৈবাল তুমি বিয়ে করোনি কেন ? সারাটা জীবন এইভাবে একা কাটিয়ে দিলে!
একবার ফিরতে পারতে , সারাটা জীবন তোমার অপেক্ষাতেই ছিলাম ।
বৃষ্টির মনে ওর বাবার সম্বন্ধে কোন খারাপ প্রভাব পড়তে দিইনি । ও ওর বাবাকে খুব ভালোবাসে । ডাক্তারবাবু যতই বলুন , আমি বেশ বুঝতে পারছি আমার সময় ফুরিয়ে আসছে । কখনো তো সেভাবে কিছু চাইনি তোমার কাছে । আজ শেষবেলায় একটা জিনিস চাইলে দেবে ?
আমি চলে গেলে আমাদের বৃষ্টিকে একটু আগলে রেখো , মেয়েটা তোমার মতই বড্ড অভিমানী!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন