শনিবার, ২৬ জুন, ২০২১

শোয়াইব শাহরিয়ার

                                          




এই  সংখ্যার কবি শোয়াইব শাহরিয়ার৷২৮শে এপ্রিল, ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার অন্তর্গত পূর্ব ইলশা গ্রামে জন্ম। পেশায় ছাত্র। আগ্রহ কবিতায়।প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ – কপালের কৌতুক (২০২১)


আহবান

তোমার বিষণ্ণ মুখের দিকে তাকালে, মুহূর্তেই অভ্যুত্থান ঘটে যায়। মনে হয়, কে যেন কোথাও অনবরত কেঁদে চলেছে। ফুলের পাপড়িতে যেন লেগে আছে নৈঃশব্দের নির্মমতা! মুহূর্তেই ভাঙচুর শুরু হয়; ভেতরে ভাঙচুর শেষে—নদী হয়ে ওঠো। নিঃশব্দে জল গড়ায়। অদূরে টুপটাপ ঝরে পড়ে—জীবন কিংবা জীবনের মতো কিছু! 

সেই নদীতীরে বসে, তোমাকে বলছি শুনো—যদি কখনো চোখের পাতায় শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চুম্বন এঁকে দেই, যদিও-বা ভীষণ বিষণ্ণতার দিনে—সমুদ্র সাঁতরাবে?

বৃষ্টি শেষে

বৃষ্টি শেষে—
পাতা ও পথের মতো যুবতী হয়ে উঠবে;
বৃষ্টি শেষে—
যুবতীর মতো ব্যথাতুর নদী হয়ে উঠবে!

অন্তঃপুরে যেদিন বৃষ্টি থেমে যাবে
শুকিয়ে যাবে জীবনের ঠোঁট
যেদিন ফুরিয়ে যাবে জলের যৌবন
মনে করে সেদিন ইশারা দিও...

আমি জীবনের রঙমহলে—
বৃষ্টির পরিবর্তে শষ্য হয়ে নামবো!

দুঃখ

তোমার করতলে দুটি রাষ্ট্র দিলাম
একটি রাষ্ট্র জন্মের, আরেকটি মৃত্যুর
আমার অনুরোধ—তুমি দ্বিতীয়টি নাও
তোমার অনুরোধ—প্রথম জন্মটি চাই
...এই নাও তবে ঐতিহাসিক দুটি রাষ্ট্র!

প্রিয় ফৌজিয়া, 
বলো, মাঝখানে দুঃখের বদলে কী-বা পেলাম?

শীতকাল

যে গাড়িতে চড়ে চলে যাচ্ছেন
ওটাকে মাঝেমধ্যে নদী ভেবে ভুল করি
ভাবি, রক্তাক্ত লবণের মাঠ!

কোনো আলপথ ভেঙে গেলে—
দেখি, অপরিপক্ক শিশুর মৃত চোখ;
অদ্ভুত এক গন্ধ ছড়িয়ে রক্তাক্ত হয়ে ওঠে!
...আমি তখন মাঠের একপ্রান্তে দৌড়ে যাই!

এদিকে, দৌড়ে যাওয়া দেখে ভাবলেন পালাচ্ছি—
রক্তচক্ষু উপেক্ষা করার দুঃসাহস আমার নাই!

অথচ জানেননি—
গাড়িটাই ছিল আমার মৃত শরীর!
যেখানে বসে—
হাসতে হাসতে পেরিয়ে যাচ্ছেন শীতকাল!

পথ

বনমল্লিকা, ভাগ্যরেখা যদি মন্দ হয়
সৌরভ ছড়িয়ে দিও;
কাঁটাকে উপেক্ষা করে, 
আমার চুম্বনগুলো সুপ্রসন্ন হবে।

হয়তো মুঠোভরতি মেঘ থাকবে
বেদনাভরতি বৃষ্টি থাকবে
তবুও, তোমার সৌরভ দিও;
...তোমাকে দেখাবে স্বর্গের পথ!

দহন

বৃষ্টি হচ্ছে, ভেজা চুলে
                উড়ছে মেঘ—
ঠোঁট ছুঁয়ে, হৃদয় মাঝে!

বৃষ্টি হচ্ছে, ঢুকছি ভুলে
               দেহের ভাঁজে;
জলের যৌবনে ঢুকছে আগুন!

বৃষ্টি হচ্ছে, পুড়ছে নগর;
                পুড়ছে শরীর;
ফৌজিয়া, বৃষ্টি হচ্ছে—
                মৃত্যু হচ্ছে—
               তোর ভেতর!

বোধগম্যতা

পা, ধীরে চলো
সামনে সমূহ অন্ধকার;
একবার যদি ডুবো
হারাবে মন দেবতার!
পা, এলোমেলো বৃষ্টি 
পাতায় পাতায় ফাঁদ
দূরে যদি দাও দৃষ্টি
কেন সব বরবাদ?
পা, ধীরে চলো
ধীরেধীরে চলো...
আর্জি খুদার;—
সামনে সমূহ যৌন অন্ধকার!

দূরত্ব

দরোজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছো;
দূরত্ব যদিও তেমন না
এটুকু তো থাকেই—
যেটুকু থাকলে কোনো দূরত্বের প্রয়োজন পড়ে না!

...এটুকু থাকলে, জীবন আর জীবন থাকে না!

দূরত্ব কি জানে, তার অপর নাম প্রেম?
দুরত্ব কি জানে, তার অপর নাম নরক?

কেউ না জানুক, আমি তো জানি—
দূরত্বের অপর নাম বনমল্লিকা! 

প্রত্যুত্তর
(বনমল্লিকাকে)

তুমি হাত বাড়ালেই হাত চলে যায়
বুকের ভেতর; জোরে বৃষ্টি নামে হায়;
জল থৈথৈ জল থৈথৈ জলের অসুখ
তোমার পা-ছোঁয়া পথ অসুখে মরুক!

ঠোঁট বাড়ালেই পথ হয়ে যায় নদী
ইচ্ছা করে ডুব দিয়ে যাই নিরবধি!
তোমার মুখের লাল—যেন সর্বনাশ
ঠোঁট বাড়াতেই আহা—রূপান্তরে ঘাস!

ঘাসের উপর শুলে—গল্পগুলো জল
ঠোঁটের উপর ঠোঁট—জীবন উজ্জ্বল!
তোমার পরশ পেয়ে মৃত্যুমুখী হাসে;
বুক বাড়াতেই আহা—স্বর্গ পরবাসে!

খোঁজ

ম্যালা দিন দেখিনা তোমারে, তুমি এখন কই?
বুকের মইধ্যে একগোছা ধানের চারা দেখিয়ে বলেছিলা
ধানেরা যেদিন গর্ভবতী হয়ে তোমার ঘরে উঠবে
ঐদিন আমারে খুঁইজা নিও; পারলে একবার ঘ্রাণ নিও;

কৃষকের বাছা আমি;
মাথার মইধ্যে ডুইবা থাকে কালবোশেখির ভয়
ডুইবা থাকে শীতকালের জ্বর!
তোমারে তবুও খুঁইজা বেড়াই; সাহস কইরা 
ধানের কাছে গিয়া, নাকের আগা বাড়াই দিলাম
তোমারে তবুও পাইলাম না; তুমি কই থাকো এখন?

বুকের মইধ্যে ঠোকা দিয়ে একবার বলেছিলা—
ঐখানে যদি না পাও, তবে এইখানেই পাবা, খুঁইজা নিও...

এখন আমি তোমারে খুঁইজা বেড়াই...
খুঁইজা বেড়াই নিজের ভেতর!




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন