এই সংখ্যার কবি পলাশ মজুমদার৷
দাহক
ব্যাসার্ধে মেপেছি নীলাকাশ
ভেবে নাও আমি প্রবঞ্চক, খল
রাষ্ট্রও জানে ভালোবাসা
কাঠুরিয়া ছল!
শোকাবহে রেখেছি বিচ্ছেদ কাঁটা
ভেবে নাও তুমি ব্যাধ, স্বৈরিণী
কালিদহ জানে শাপ
বিবশ যামিনী!
নিখোঁজ সংবাদ
সন্ধান চাই - এই জাতীয় বিজ্ঞাপনগুলি খুব মন দিয়ে পড়ি ;
নাম, বয়স, গড়ন, উচ্চতা।
নিজেকে খুঁজে না পেয়ে যারপরনাই হতাশ হই।
নিখোঁজ ব্যক্তির ছবিতে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি
বিজ্ঞাপনদাতা'র আদল ;
তার স্ত্রী, পুত্র, পরিজনের মুখচ্ছবি।
আসলে যারা নিখোঁজ হন,
গোপনে বাড়ির উঠোনে পুঁতে রেখে আসেন অনেকগুলো
ব্যক্তিগত নিখোঁজ সংবাদ।
হারানোর নামে হৃতদের খুঁজতে বেরিয়ে পড়েন একা।
কাঠের উনুন ও ভাতে'র গল্প
১.
ভাতকে কখনও অন্নপূর্ণা মনে হয়নি আমার, মা মনে হয়নি।
বুক বুক খিদে নিয়ে যাদের বেশিটা সময় রান্নাঘরে কাটে
মা এবং দাউ দাউ কাঠের উনুন।
আমার দুটো মা ;
কাঠের উনুনকে 'মা' বলে ডাকি।
২.
কাজ ফেরত বাবাকে কখনও ঘাম মুছতে দেখিনি।
বাড়ি ঢোকার আগেই ঘাম লুকিয়ে ফেলতেন,
অথবা বিশ্বাসঘাতক ঘাম বাবাকে কপর্দকশূণ্য প্রমাণ করতে হাওয়ায় মিলিয়ে যেতো।
কাজ ফেরত বাবাকে মনে হতো ঢেঁকিছাটা শুকনো চাল।
সকলের খোঁজ-খবর নিতেন। পুকুর পাড়, খড়ের গাদা, গরু-বাছুর।
ততক্ষণে ফুঁটে যেতো হাঁড়ির সবকটি চাল, হাত-পা ধুয়ে খেতে বসতেন।
এক থালা ভাত, কাঁচালঙ্কা, পেঁয়াজ, তরকা
আমাদের সবাইকে গ্রাস গ্রাস মুখে তুলে দিতেন আপনমনে, সবশেষে
কাঁচালঙ্কা সহযোগে নিজেকে নিজে পরম তৃপ্তিতে চিবিয়ে খেতেন বাবা !
খিচুড়ি স্কুল
সরীসৃপ খোঁজে কৌমার্য আহার
জরায়ুতে লুকোনো গর্ভ সঞ্চয়
কুসুম সুখে বাড়ি ফেরে শিক্ষার্থী
দিনটা নৈব নৈব চ,
রাত খান খান
শিকারের নাভি কেটে ঢুকে পড়ি,
খিচুড়ি স্কুল;
থালায় সাজে
খিদের বর্ণমালা, অমৃত ফুল।
বেশীটা কাল্পনিক নয়
হরিদাকে বলে রেখেছিলাম,
আমার শেষকৃত্য মিটে গেলে
শান্ত চিতায় দুটো মিঠে পানের খিলি রেখে দিও -
চুন কম, খয়ের বেশি, সুপারি কুচিকুচি কাটা।
হরিদা কথা রেখেছে,
তবে চুন বেশি, খয়ের কম, সুপারি চাকা চাকা কাটা।
মদন খুড়ো বললো -
এই যে ভাইপো, একটা বিড়ি দিবি - বড় নেশায় পেয়েছে?
- তোমার বুদ্ধি সুদ্ধি সব লোপ পেলো ?
হরিদাকে আগেভাগে বলে রাখলে সময়মতো ঠিক পেয়ে যেতে।
ভাইপো, চেয়ে দ্যাখ তোর খুড়ির কান্ড -
আমি মরার দিন কতো কাঁদলো,
মাগী এখন বউহারা রমেনের গায়ে কেমন ঢলে ঢলে পড়ছে !
আচ্ছা, রমেনের বৌ তো খুব সুন্দরী- আটোসাটো,
তোর সাথে দেখা হয়?
চিরন্তন
তিল পরিমাণ অসন্তুষ্টি কুড়িয়ে পেলাম -
প্রশ্রয়ের অক্সিজেনে ডালপালা মেললো ।
এবং
ফুল, কুঁড়ি, বীজ, বংশরক্ষা - এ
শেয়াল, বেড়াল, বাঘ, আগাছা, পরগা
এক ঘাঁটে জল খাবে ।
এবং
অনিবার্য খরা - এসব জানা কথা ।
অসন্তুষ্টি গর্ভবতী হলে অনেক প্রত্যাশা দানা বাঁধে -
বিপ্লব, মড়াকান্না..........
প্রযুক্তিবিদ সন্তুষ্টি খোঁজে চাঙ্গা বাজার অর্থনীতিতে,
মেকি বিশ্বায়নে..............
আমরাও একদিন ইতিহাস হবো !
সন্দেহ সত্যি প্রমাণ হবে -
প্রত্নতত্ত্ববিদ আমাদের অস্থিতেও
এক জোড়া চোখের অস্তিত্ব খুঁজে পাবে ।
আত্মপক্ষ
এক.
দেয়ালে মুখ দেখি ;
দর্পণে যা দেখি, আসলে তা মুখোশ।
দুই.
একটি দরকারী ভ্রম সংশোধন;
যাদের মেরুদন্ড আছে, তাদের অমেরুদন্ডী বলে।
তিন.
পিঁপড়ে'রা দলবদ্ধ হয়ে চলতে ভালোবাসে;
দৈবাৎ কেউ ছত্রভঙ্গ হলে, ওরা তাকে 'মানুষ' বলে গালি দেয়।
মাংসাশী
রোজ দামী গাড়িতে চড়ে
নিত্য নতুন মাংসাশী আমার ঘরে আসে,
মুখে ভদকা'র উৎকট গন্ধ
রুদ্ধশ্বাসে আর্থিক শেয়ার সূচক মাপতে লেগে যাই
যার যা দেয়ার, যার যা নেয়ার -
ক্রেতা অধিকার এতটুকুও সুরক্ষা হারায় না
ভূগোল, ইতিহাস, অর্থনীতি - ত্রি
খদ্দের তার অবিন্যস্ত চুলগুলো যত্ন করে আচড়ে নেন,
অন্তর্বাস, শাড়ি, ব্লাউজ পরিপাটি পরে
এক মাংসাশী আবার ম্যাডাম হয়ে ওঠেন!
প্রাপ্য'র সাথে কিছু তৃপ্তির বকশিশ হাতে গুজে দিয়ে
চলে যেতে যেতে বলেন -
' সি এগেন, নাইস গাই '
কিশোর বেলার এক অবাধ্য বালিকা -
ওর পায়ের নরম আঙুলগুলো খালি মনে পড়ে।
ও জানে না, আমি এখন ভয়ংকর মাংসাশী …
নাস্তিকের সংলাপ
বৃষ্টির জলে ধুয়ে যাচ্ছে শেকড়।
মৃত্যু বলে কিচ্ছু নেই... কিচ্ছু নেই।
হাওয়ার আবিরে অস্তিত্ব মিশে গেলে বুনো শেয়াল গন্ধ শোকে নিরবতার।
ব্যথার নৈরাজ্যে কালো রক্তের ছোপ,
যারা বলেছিলো ভালোবাসবে, কথা রেখেছে সবাই।
অন্ধকার নিভে গেলে, অদ্ভুত আলো রাতের চেয়েও আঁধার।
পুজার নৈবেদ্যে কারা যেন মিশিয়ে রাখে ঘৃণার আর্সেনিক ;
কথা রাখেনি ঈশ্বর, কথা রাখেনি ভালোবাসা।
ঘোষণা করি, আমি যুগোত্তীর্ন নাস্তিক এক ;
ঈশ্বর - ফিশ্বর মানি না
সুখ - দুঃখ মানি না
আমি এবং ঈশ্বর - পরস্পরের ভরসা হারিয়ে দুজন
এখন বিশ্বজয়ী, দায়হীন মুক্ত পুরুষ।
যারা মৃত্যুকে ভয় পায়, তারা ঈশ্বর মানে।
যারা ঈশ্বর মানে না, তারা কবিতা ভালোবাসে।
দৃশ্যখুন এবং সেই সব খুনিরা
ধরা যাক, বড় রাস্তা আর ফুটপাতে কোনো সীমানা আঁকা নেই
আলুথালু এক মা বসে আছে, কোলে এক স্তন্যপায়ী
মা জানতো, ছুটে আসা একটা গাড়ি ভারসাম্য হারাবে
তারপর দুজনকে পিষবে .......
খবরে প্রকাশ,
মায়ের স্তনে ছিটেফোঁটাও দুধ ছিলো না
ঘাতক গাড়িটা ছিলো সত্যের পক্ষে ......
ধরা যাক, দুজনেই যদি বেঁচে যায়
যদি বেঁচে যায় ...
বাঁচার জন্য মৃত্যুটা শুধু প্রয়োজন নয়, অপরিহার্য
দৃশ্যখুনে কোনো নির্ভরযোগ্য শাস্তির বিধান নেই
অথবা খুনের জন্য দৃশ্যের পর দৃশ্যের পুনর্জন্ম হয় .…
সমাপতন
১.
সোমালীয়া'য় এক শিশু কবিতা লিখছে ;
শুকনো স্তনে প্রতিটি কামড়ের দাগ
এক একটি কবিতা
রাশিয়া'য় অর্থনীতির ছাত্র শেয়ারের উর্ধ্বসীমা মাপছে ;
পুরু লেন্সে উঠেছে-নামছে আদিম শেয়ার সূচক
অথবা, কাশ্মীরি জেহাদী
অথবা, চোলাই'য়ের চাটে পিঁপড়ের ডিম - থুড়থুড়ে বুড়ো
বহুগামী রেখাগুলো ছোট হতে হতে বিন্দুতে
যুগপৎ পতন
২.
ইটের পর ইট
ইটের পর ইট
ইটের পর ইট
আকাশচুম্বী ..........
আসলে সবই পতনের গল্প
কিছু অসাধারণ ভাবনার কাব্যিক প্রকাশ
উত্তরমুছুন